স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ছাত্রদল ছিল ‘ফ্রন্টলাইন ফাইটার’

নাছির উদ্দীন নাছির
নাছির উদ্দীন নাছির  © টিডিসি সম্পাদিত

আজ থেকে ৪৬ বছর পূর্বে বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক ছাত্র-তরুণদের মাঝে গণতন্ত্র ও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের আদর্শ প্রচার করতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল প্রতিষ্ঠা করেন। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, যুগোপযোগী রাজনৈতিক দর্শন, চৌকস এ মেধাবী নেতৃত্বের কারণে জন্মলগ্নেই জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ছাত্রসংগঠনে পরিণত হয়। 

আমাদের পথচলা কখনোই মসৃণ ছিল না। শুরুতেই স্বৈরাচার এরশাদ অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করার কারণে ছাত্রদলকে পড়ার টেবিল থেকে সরাসরি রাজপথে নেমে আসতে হয়। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আপোষহীন নেতৃত্ব ও কৌশলী দিকনির্দেশনা অনুসরণ করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল স্বৈরাচার এরশাদের ভিত কাঁপিয়ে দেয়। ছাত্রদলের স্বৈরাচার বিরোধী দৃঢ় অবস্থানের কারণে সকল মত -পথের ছাত্রজনতার মধ্যে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এর আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা সৃষ্টি হয়।

দেশের প্রায় সব কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংসদ নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে। ১৯৯০ সালে ডাকসু নির্বাচনে সবগুলো পদে বিজয়ী হয় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।

ছাত্রদলের প্রবল আন্দোলনের মুখে একটি গণ-অভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে স্বৈরাচার এরশাদের পতন ঘটে।জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এর দ্বিতীয়বার সর্বাত্মক আন্দোলনে নামতে হয়েছে সেনাসমর্থিত  অবৈধ ফখরুদ্দিন - মঈনুদ্দিনের বিরুদ্ধে। দেশকে বিরাজনীতিকরণের চক্রান্ত থেকে রক্ষা করতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ফখরুদ্দিন সরকারের বিপক্ষে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলে। অবৈধ এক এগারো সরকারও প্রবল আন্দোলনের মুখে টিকতে পারেনি। 

২০০৯ সালে দেশি-বিদেশি চক্রান্তের সাজানো নির্বাচনে ক্ষমতা দখল করে শেখ হাসিনা বাকশালি ফ্যাসিবাদ কায়েমের নীল নকশা বাস্তবায়ন করতে শুরু করে। অন্যদিকে, ছাত্রলীগ, বর্তমানে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ, সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নজিরবিহীন  সন্ত্রাস ও বর্বরতার পরিবেশ সৃষ্টি করে। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করার ফলে দেশ ফ্যাসিবাদের কবলে চলে যায়।

এই পরিস্থিতিতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল পুনরায় দেশের গণতন্ত্র - স্বাধীনতা - সার্বভৌমত্ব রক্ষার অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে রাজপথে সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ছাত্রসংগঠন হিসেবে প্রথম রাজপথে আন্দোলন করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। ফলশ্রুতিতে ফ্যাসিস্ট হাসিনার রোষানলের শিকার হয়ে গুম-খুন ক্রসফায়ারের শিকার হয়ে  শহীদ হয়েছেন অসংখ্য সহযোদ্ধা। রিমান্ডে নির্যাতন - গায়েবি মামলা - হামলার শিকার হয়েছেন অগণিত নেতাকর্মী।

আরও পড়ুন: শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে ছাত্রদলের রাজনীতি পরিচালিত হবে: নাছির

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ২০০৭ সাল থেকে অগণতান্ত্রিক  সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছে। শত নির্যাতনের পরেও আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত ছিল। বিগত ষোল বছরে আমরা একটি দিনের জন্যও আন্দোলনের মাঠ ছেড়ে যায়নি। 

দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ছাত্রদলের সাংগঠনিক অভিভাবক জনাব তারেক রহমান এর নেতৃত্বে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদল অগ্র-সৈনিকের ভূমিকা পালন করেছে। সম্প্রতি জুলাই-আগস্ট মাসের আন্দোলনে ছাত্রদলের ত্যাগ ছিল নজিরবিহীন। কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলনে শুরু থেকেই ছাত্রদল পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে  ছাত্রদলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা সাধারণ ছাত্রদের সাথে যুক্ত হয়ে  আন্দোলনকে বেগবান করেছে।

১৬ জুলাই রংপুরে  পুলিশের গুলিতে আবু সাইদ শহীদ হয়েছেন। তার মৃত্যু পুরো দুনিয়াকে নাড়া দিয়েছে। একইদিন চট্টগ্রামে চট্টগ্রাম কলেজ শাখা  ছাত্রদলের  সদস্য  ওয়াসিম আকরাম শহীদ হয়েছেন। 

নির্মমভাবে শহীদ হয়েছেন মাগুরা জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মেহেদী হাসান রাব্বি। এই আন্দোলনে ছাত্রদলের ২১০০ নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছে, যাদের সবাই হেফাজতে পুলিশের নির্যাতনের শিকার হয়েছে।

জুলাই ম্যাসাকার এবং আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে প্র্যাচের কসাই পলাতক  ফ্যাসিস্ট  শেখ হাসিনা ছাত্রদলের শতাধিক  সহযোদ্ধাকে খুন করেছে। ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এর রক্তের ওপর প্রতিষ্ঠিত। 

বিগত ষোল বছরের অমানবিক নির্যাতনের শিকার হওয়ার পরেও ফ্যাসিবাদের পতনের পরে ছাত্রদলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা নজিরবিহীন সংযমের পরিচয় দিয়েছে। দেশের কোথাও আমাদের নেতাকর্মীরা প্রতিরোধ বা প্রতিহিংসামূলক আচরণ করেনি। আমাদের অভিভাবক জনাব তারেক রহমান এর প্রত্যাশা অনুযায়ী আমরা একটি সুশৃঙ্খল সংগঠন হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করছি। 

বর্তমানে গণতন্ত্রে উত্তরণের জন্য একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রয়োজন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ছাত্র - তরুণদের মাঝে জনাব তারেক রহমান প্রণীত রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা প্রস্তাবনার পক্ষে জনমত গঠনে কাজ করছে।

আমরা তরুণদেরকে আহ্বান জানাচ্ছি, তারা যাতে ৩১ দফার ভিত্তিতে রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল - বিএনপিকে ম্যান্ডেট প্রদান করে। আমরা সারাদেশ থেকে তরুণদের ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি।

আমরা একুশ শতকের উপযোগী মেধাভিত্তিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি চর্চায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আগামীর বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এর নেতাকর্মীরা যাতে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে আমরা সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমাদের নেতাকর্মীদের প্রস্তুত করছি। এছাড়াও রাজনীতির সাথে যুক্ত নয় এমন মেধাবী তরুণদেরকে নিজ নিজ প্রতিভা বিকাশের সুযোগ প্রদান এবং ছাত্রদের ন্যায়সঙ্গত সকল দাবির পক্ষে আমরা কাজ করছি। সাম্য ও মানবিক মর্যাদার ভিত্তিতে একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা আমাদের লক্ষ্য। 

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এর পক্ষ থেকে দেশের আপামর ছাত্রজনতার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। সকল শিক্ষার্থীকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আমাদের দীর্ঘ পথচলার সঙ্গী যে-সকল সহযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন তাদের বিদেহী  আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।

বাংলাদেশ জিন্দাবাদ। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল জিন্দাবাদ।

লেখক: সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল


সর্বশেষ সংবাদ