মৌখিক পরীক্ষা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া হতে পারে না
- কামরুল হাসান মামুন
- প্রকাশ: ১১ মার্চ ২০২৪, ০৮:৪৯ AM , আপডেট: ১১ মার্চ ২০২৪, ০৮:৪৯ AM
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকরা বিশ্বমানের যোগ্য না। বিশ্বমানের শিক্ষক পাওয়ার জন্য আমরা কি শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াকে বিশ্বমানের করেছি? বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যে চাকরি যত বেশি গুরুত্বপূর্ণ, সে চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়া ততবেশি rigorous এবং সেই অনুসারে এর গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ- যাতে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কমানো যায়। কারণ নিয়োগে একটা ভুল হলে সেটাকে টানতে হবে ৩০-৩৫ বছর বা তারও বেশি।
ক্ষতির ব্যাপ্তিটা টের পাচ্ছেন? এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ প্রক্রিয়া সারা বিশ্বেই নানা স্তরে ভাগ করা থাকে। প্রতিটা স্তরেই ফিল্টার করে শর্টলিস্ট করা হয়। অথচ আমরা এ ইউনিভার্সাল ন্যূনতম কাজটিই করিনি। এ জন্য মাঝে মাঝেই সংবাদ শিরোনাম হয় যে, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে শুধুই মৌখিক পরীক্ষা!’ স্বাভাবিক। কেবল একটা মৌখিক পরীক্ষাই শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া হতে পারে না। তাতে যে নিয়োগ পায়, তার মধ্যেও চাকুরি পাওয়া যে একটা achievement একটা বড় অর্জন, এমন ধারণা মনে ঢুকে না।
সময় এসেছে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিয়োগ ও প্রমোশন নীতিমালাগুলোকে ঢেলে সাজানোর। আমাদেরতো নিয়মগুলো গবেষণা করে আবিষ্কার করার প্রয়োজন নেই। বিশ্বের নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যে নিয়মে নিয়োগ দিয়ে নামিদামি হয়েছে, সে নিয়মগুলো অনুসরণ করলেই হয়। শিক্ষক নিয়োগ করে বিভাগ। বিভাগের অধীনে একটা নিয়োগ কমিটি করা উচিত, যেখানে থাকবে দেশের এমনকি বিদেশের এক্সপার্ট।
আরো পড়ুন: কারিকুলাম দিয়ে শিক্ষার মান নিশ্চিত করা যায় না
বিদেশি এক্সপার্টরা কাগজপত্র, গবেষণাপত্র, রিকমেন্ডেশন লেটার, টিচিং ও রিসার্চ স্টেটমেন্ট ইত্যাদি পড়ে মতামত দেবে। সেই ভিত্তিতে একটি শর্টলিস্ট হতে পারে। তাদের আবার জুম্ মিটিংয়ে ইন্টারভিউ নিয়ে আরেকটা শর্টলিস্ট করা যেতে পারে। সে লিস্টের প্রথম তিন জনকে ক্যাম্পাসে ডেকে এনে সেমিনার দেওয়ানো যায়। যেখানে বিভাগের সব শিক্ষক ও সিনিয়র ক্লাসের ছাত্ররাও থাকতে পারে এবং মতামত দিতে পারে। সারাদিন ধরে প্রার্থী ক্যাম্পাসে থাকবে। একসঙ্গে খাবে, যার পুরোটাই ইন্টারভিউয়ের পার্ট।
ফাইনালি ভিসির নেতৃত্বে একটা সেরিমোনিয়াল ইন্টারভিউ হতে পারে, যার ভিত্তিতে নিয়োগের সুপারিশ চূড়ান্ত হতে পারে। এভাবে শিক্ষক নিয়োগ হলে ছাত্র থেকে শুরু করে দেশের মানুষের আস্থা আসবে। মানুষ তখন শিক্ষকদের শ্রদ্ধা করবে। আমরা এখন যা করি, সেটা শিক্ষক নিয়োগ না দলীয় ক্যাডার নিয়োগ দেই। যারা এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত, তারা দেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
লেখক: অধ্যাপক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
(ফেসবুক থেকে নেওয়া)