বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষার নামে ‘টাকা হাতানো’ বন্ধ হোক

আলী আর রাজী
আলী আর রাজী  © ফাইল ছবি

দেশের লোক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সম্মান প্রথম বর্ষের বাছাই পরীক্ষা শুরু হয়েছে। আজও একটা পরীক্ষা হয়ে গেল। রাষ্ট্রপতি, শিক্ষামন্ত্রী, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনসহ নানান অংশীজনের আবেদন নিবেদন থোড়াই কেয়ার করে ঢাবি, জাবি, রাবি, চবি ইত্যাদি কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় যার যার মতো করে সনাতন পদ্ধতিতেই বাছাই পরীক্ষা নেওয়া অব্যাহত রেখেছে। এই আয়োজনের সবচেয়ে খারাপ দিক হচ্ছে, লাখ লাখ ভর্তিচ্ছুর কাছ থেকে সম্মিলিতভাবে কোটি কোটি টাকা আদায় করে শিক্ষকদের ভাগবাটোয়ারা করে খেয়ে ফেলা!

এই যে দশকের পর দশক জুড়ে ঢাবি, রাবি, চবি, রাবি ইত্যাদি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তিচ্ছুদের কাছ থেকে আবেদনপত্র বিক্রির নামে কোটি কোটি টাকা আদায় করছে, তার কোনো হিসাব তারা জনগণের সামনে কোনো দিন উপস্থাপন করার দায় বোধ করেনি। ক'দিন আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এক সাংবাদিক-সম্মেলনে কথা প্রসঙ্গে প্রকাশ্যে জানিয়েছিলেন, ভর্তি পরীক্ষায় যে যে খাতে খরচ দেখানো হয়েছে সেগুলো কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেখানোর পরও কোটি কোটি টাকা উদ্বৃত্ত থেকে যায়। সেই টাকার কোনো হিসাব যারা টাকা দিয়ে আবেদনপত্র কিনছেন তাদের বুঝিয়ে দেওয়ার কোনো আগ্রহই কর্তৃপক্ষের নাই।

এই কোটি কোটি টাকা মানে কী? ধরুন, কোনো বিশ্ববিদ্যালয় তিন লাখ আবেদনপত্র বিক্রি করলো প্রতিটি এক হাজার টাকা দরে ত্রিশ কোটি টাকায়। এই ৩০ কোটির মধ্যে যাচ্ছেতাইভাবে খরচ ও ভাগবণ্টন করে নিলেও ব্যয় হয় ১৫ কোটি টাকা। আর বাকি ১৫ কোটির হিসাব সাধারণ মানুষ, বিশেষত যাদের টাকা সেই সব ভর্তিচ্ছুদের অভিভাবকরা কোনো দিন পায় না, পাবে না!

আমার দৃঢ় বিশ্বাস, বিশ্রী রকমের একটা ক্যাসিনো মার্কা ভর্তি পরীক্ষা বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকরা টিকিয়ে রেখেছেন কেবল সাংবৎসর কিছু উপড়ি কামাইয়ের লোভে। সেই লোভ কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের এতো বেড়েছে যে, একই অনুষদের ভর্তি-পরীক্ষায় ভিন্ন ভিন্ন প্রশ্নপত্র দিয়ে কয়েক দফায় ভর্তিচ্ছুদের পরীক্ষায় বসিয়ে দিচ্ছেন। উদ্দেশ্য একটাই, যত বেশি পরীক্ষার্থী ততো বেশি রোজগার!

এই উপড়ি কামাই লাখ লাখ দরিদ্র অভিভাবকের পেটে লাথি দিয়ে আদায় করার শামিল। এক একজন ভর্তিচ্ছুকে নানান বিশ্ববিদ্যালয়ে নানান ইউনিটের আবেদনপত্র কিনতে হয়। আর বড় কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদনপত্র কিনতেই অন্তত হাজার দশেক টাকা খসে যায় ভর্তিচ্ছুদের অভিভাবকের পকেট থেকে৷ এই দুর্মূল্যের বাজারে অভিভাবকদের দিশেহারা করে ফেলছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবিবেকী এই তৎপরতা।

নানা চালাক চালাক কথা বলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এই টাকা হাতানো কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। তাদের বিবেক জাগবে না? বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যারা হর্তাকর্তা তারা আসল মাখনটা খান- এটা সবাই জানেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকরা উচ্ছিষ্টের মতো কিছু ক্ষুদকুঁড়া পেয়ে বগল বাজাতে বাজাতে এই দস্যুবৃত্তিতে অংশ নিতে থাকবেন আর কত কাল?

এই পদ্ধতির প্রভূত সমালোচনা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কেন কোনো পরিবর্তন আনেনি বা আনছে না? আর সব কিছুতে মাথা নুইয়ে দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কেবল ভর্তিপরীক্ষার সময় নিজস্বতা ও/বা স্বায়ত্তশাসনের কথা মনে পড়ে যায় কেন? আমার স্থির বিশ্বাস, এর কারণ একটাই- টাকা কামাই। এই আলগা টাকা কামাই বন্ধ তখনই হতে পারে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের যদি বিবেক জাগ্রত হয়, যদি আল্লাহ তায়ালা তাঁদের কিছু হায়াশরম দেন। নইলে এই পথ থেকে তাঁদের ফেরানো সম্ভবত অসম্ভব।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence