‘সনদের মেয়াদ নিয়ে সলিসিটর বিভাগের মতামতের অপব্যাখ্যা দিচ্ছে এনটিআরসিএ’

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি  © ফাইল ছবি

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রবেশ পর্যায়ে শিক্ষক পদে নিয়োগ পেতে শিক্ষক নিবন্ধন সনদ বাধ্যতামূলক। ২০০৫ সালে শিক্ষক নিবন্ধনের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ৬ লাখ ৩৪ হাজারের বেশি নিবন্ধন সনদ দিয়েছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। প্রত্যেক নিবন্ধন সনদধারী তার স্বীয় যোগ্যতা ও মেধার পরিচয় দিয়ে বিধিমোতাবেক সনদ অর্জন করেছেন। গত ফেব্রুয়ারি দেশের বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে  ১-১৫ তম নিবন্ধনধারীদের সনদ অকার্যকর ও আবেদনের সুযোগ পাবে না মর্মে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যা প্রতিটি নিবন্ধন সনদ অর্জনকারীদের  হৃদয়ে রক্ত ক্ষরণের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

১-১৬তম সহ একটি বিশেষ শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা মোট ১৭টি নিবন্ধন পরীক্ষা বিধিমালা অনুযায়ী গ্রহণ করে সর্বমোট চারটি গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগ সুপারিশ করেছে এনটিআরসিএ। যেখানে নিয়োগ সুপারিশকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতার পরিচয় দিয়েছে সংস্থাটি। ৩য় গণবিজ্ঞপ্তির সময় একটি প্রকাশিত নোটিশে মহামান্য হাইকোর্টের সুনির্দিষ্ট রায় মেনে নেওয়ার ঘটনা সেদিকেই ইঙ্গিত করে। এসব পিটিশন গুলো বিভিন্ন সময় অনেক নিবন্ধন সনদধারীরা তাদের সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়েছে দাবি করে মহামান্য হাইকোর্টকে অবহিত করেন। রায়গুলোও বেশিরভাগই তাদের পক্ষে চলে আসে। সর্বশেষ শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ  সুপারিশ পেতে ৩৫ ঊর্ধ্বদের আবেদনের সুযোগ দিয়ে দেওয়া রায়ের ওপর এনটিআরসিএ এর করা রিভিউ আবেদন দেশের সর্বোচ্চ আদালত খারিজ করে দিয়ে পূর্বের রায়কেই বহাল রাখেন। ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন ফুলকোর্ট এই রিভিউ খারিজের আদেশ দেন।এই যুগান্তকারী রায় অনুযায়ী ১-১২তমদের যেকোন সময় প্রকাশিত গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদনে কোনো আইনগত বাধা নেই। এই রায় অ্যাপিলেট ডিভিশনে থাকায় তারা পূর্বে আবেদন থেকে বঞ্চিত হয়। 

এনটিআরসিএ সর্বশেষ পরীক্ষা বিধিমালা সংক্রান্ত প্রকাশিত গেজেট অক্টোবর ২২, ২০১৫ সন অনুযায়ী পরবর্তী  নিবন্ধন সনদ অর্জনকারীদের সনদের মেয়াদ ৩ বছর উল্লেখ করা হয়। বিগত ২৩/১০/২৩ ইং তারিখের স্মারক নং- ৩৭.০৫.০০০০.০০৫.০৪.০০১.২১.৮০০ অনুযায়ী এনটিআরসিএ এর করা আবেদনের প্রেক্ষিতে বিগত ০৬/১২/২০২৩ ইং তারিখে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ, সলিসিটর অনুবিভাগ, রীট-২ শাখা অ্যাটর্নি জেনারেল ও সলিসিটর বিভাগ হতে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শূন্য পদে নিয়োগ সুপারিশ প্রদান করার সুযোগ বিষয়ে মতামত প্রকাশ করেছেন। উক্ত মতামতের আলোকে এনটিআরসিএ এর করা মন্তব্যে চরম আইনের প্রতি অশ্রদ্ধাশীলতার পরিচয় মিলেছে। উক্ত মতামতের আলোকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিগত ২৪/০১/২০২৪ ইং তারিখে শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে একটি পরিপত্র জারি করেন। 

সলিসিটর বিভাগের মতামত এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী এনটিআরসিএ এর কতিপয় কর্মকর্তা তাদের বিবৃতি প্রকাশ করে  ১-১৫তম নিবন্ধন সনদধারীদের সনদ অকার্যকর ও আবেদনের অযোগ্য। অথচ সলিসিটর এর মতামতে সিভিল আপিল নং ৭১/২০২৩ বর্তমানে আপিল বিভাগে শুনানির জন্য পেন্ডিং রয়েছে। এনটিআরসিএ এর এরকম অমানবিক বক্তব্য আমাদের কাম্য নয়। অক্টোবর ২২,২০১৫ ইং সনের গেজেট অনুযায়ী ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ১৭তম নিবন্ধন সনদধারীগণ (প্রিলি, রিটেন ও ভাইবা) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে নিবন্ধিত হন। ওই গেজেটকে চ্যালেঞ্জ করে ১৩তম এবং তৎসময়ে সদ্য পাস করা ১৪তমরা একক নিয়োগের উদ্দেশ্য মহামান্য হাইকোর্টে পিটিশন ৩৪৩/২০১৯ এবং ১৯৫/২০২০ দাখিল করেন। যার ফলে এনটিআরসিএ বাধ্য হয়ে ২২০৭ জন রিট কারীকে এককভাবে নিয়োগ প্রদান করেন। এই রায় বাস্তবায়নে এনটিআরসিএ এর প্রতি সম্মান রেখে যারা রিটে অংশগ্রহণ করেনি তারা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হন। যা খুবই দুঃখজনক। বিগত ২২ অক্টোবর ২০১৫ ইং সনের গেজেট অনুযায়ী ১৩তম সহ পরবর্তী নিবন্ধন সনদধারীদের পরীক্ষা বিধিমালা উক্ত পরিপত্রের ৬ নং ধারা এর বিধি ১০ এর উপবিধি (১) এর পরিবর্তে নিম্নরূপ উপবিধি (১) প্রতিস্থাপিত করা হয়েছে। ফলে ১৩তম সহ পরবর্তী নিবন্ধন সনদধারীদের সনদের মেয়াদ (০৩) তিন বছর অতিক্রান্ত হওয়ায় তাদের সম্পর্কে সলিসিটর বিভাগ মতামত প্রদান করেছেন। উক্ত মতামতে শুধুমাত্র ১৩ ও ১৪ তম নিবন্ধন সনদধারীদের সম্পর্কে ব্যাখ্যায় বলা হয় সনদের মেয়াদ তিন বছর অতিক্রান্ত হওয়ায় তাদেরকে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের শূন্য পদের বিপরীতে নিয়োগ সুপারিশ প্রদান করার আইনগত সুযোগ নাই।

সলিসিটর বিভাগ সিভিল পিটিশন ৩৪৩/২০১৯ এবং ১৯৫/২০২০ এর আলোকে মতামত স্পষ্ট করেছেন। যেহেতু আপিল নং ৭১/২০২৩ শুনানির জন্য পেন্ডিং আছে সেহেতু ১-১২তমদের বিষয়ে নিয়োগের আবেদন করতে পারবে না তাহা উল্লেখ করেন নাই। ঢালাও ভাবে এনটিআরসিএ এর করা ১-১৫তমদের সনদ অকার্যকর ও আবেদনের সুযোগ থাকছে না মর্মে  মন্তব্যটি অগ্রহণযোগ্য ও বিধিবহির্ভূত এবং আইনের প্রতি অশ্রদ্ধাশীলতার বহিঃপ্রকাশ মাত্র। 

বর্তমান সরকারের শিক্ষামন্ত্রী নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে শিক্ষক ঘাটতি পুরোনো বছরে চারটি গনবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের কথা উল্লেখ করেছেন।বর্তমানে সারা দেশে ৮০ হাজারের অধিক শূন্যপদ আছে। ১৭তম নিবন্ধন সনদধারীদের দ্বারা এই পদ গুলো পূরণ করা অসম্ভব। এনটিআরসিএ সচিব ওবায়দুর রহমান যাদের বয়স আছে তাদেরকে পরবর্তী নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুপরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু যাদের বয়স ৩৩, ৩৪ কিংবা ৩৫ এর কম তারা কীভাবে আবার নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে তার সদুত্তর তাকেই দিতে হবে। সরকারের দায়িত্বশীল গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে ১-১২তম বিধিমোতাবেক সনদধারী নিয়োগ বঞ্চিতদের কথা আপনাদেরই ভাবতে হবে, তাতে করে দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণকর হবে। এমন কোনো কালো আইন উন্মোচন করার প্রয়োজন পড়ে না, যার মাধ্যমে পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া থমকে গিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ছাত্রছাত্রীরা বছরের পর বছর  শিক্ষকবিহীন ভোগান্তির মধ্যে পড়ে যায়। নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হয়ে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়।

লেখক:  মো: ওবাইদুল ইসলাম, সহকারী শিক্ষক (ইংরেজি) ১২তম ব্যাচ, টাংগাইল।


সর্বশেষ সংবাদ