আমরা কবে মানুষ হবো?

অধ্যাপক ড. মো. মাহফুজুল ইসলাম
অধ্যাপক ড. মো. মাহফুজুল ইসলাম  © ফাইল ফটো

দুইদিন আগে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনটি নতুন বিভাগ খোলার জন্য আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে দেখা করলে উনি যে মন্তব্য করেন, তা শুনে আমার পায়ের তলায় শুণ্যতা অনুভব করা শুরু করি। নতুন বিভাগ খোলা মানে নাকি নতুন জনবল আর জনপ্রতি দশ থেকে বিশ লাখ টাকা অথবা সুপারিশে নিজের/অন্যের অযোগ্য আত্মীয়স্বজনকে চাকরি দেওয়া। লজ্জায়-ঘৃণায়  আমার মাথা নিচু হয়ে গিয়েছিল, শুধু উত্তর দিয়েছিলাম, "স্যার, আমার পিছনের ইতিহাস দেখুন- ঘুষ, অন্যায়, দুর্নীতি, কিংবা স্বজনপ্রীতির উদাহরণ আমার জীবনে পাবেন না আর দোয়া করবেন ভবিষ্যতে যাতে আর কোনো দিন এগুলোকে স্থান দিতে না হয়"। 

আমার কলিগদের হয়ে প্রতিবাদ করার সাহস আমার হয়নি, শুধু নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। কেউ নিজের মেধা, যোগ্যতা, পরিশ্রম দিয়ে সৎ উপায়ে দেশ ও জনগণের কোন ক্ষতি না করে সম্পদ আহরণ করলে সেটাকে আমি অন্যায় মনে করি না । কিন্তু ঘুষ কিংবা স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে একজন যোগ্য লোকের অধিকার হরণ করে অযোগ্য লোককে চাকরি দিলে, কেবল যে প্রতিষ্ঠানকে পঙ্গু করা হয় তাই নয়, ঐ বঞ্চিত যোগ্য লোকটা যতক্ষণ পর্যন্ত ক্ষমা না করেন, মহান সৃষ্টিকর্তাও তাকে ক্ষমা করবেন না- কোরআন ও হাদিসে আলোকে তাই প্রমাণিত । স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ইহা আরো মারাত্মক - যা প্রতিষ্ঠানটিকে অযোগ্য জনবল তৈরির কারখানায় পরিণত করে - পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ঐ প্রতিষ্ঠানকে পঙ্গু করে রাখে- আর ভারী হতে থাকে অন্যায়কারীর পাপের পাল্লা। 

আমার নিজের বিশ্ববিদ্যালয়েও এসব কিছু অযোগ্য লোককে সামাল দিতে আমাকে হিমসিম খেতে হচ্ছে - সময়মত ও সঠিকভাবে কাজ করা দূরোহ হয়ে পড়েছে।  মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে পদ দিয়েছেন অন্যায়-দুর্নীতি আর স্বজনপ্রীতি করে নিজের আখের গোছানোর জন্য নয়, দেশটা স্মার্ট ও স্বপ্নের বাংলাদেশ গঠে তোলার জন্য। 

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাতে কোন আলাদীনের চেরাগ ছিল না- এখনো নাই । তার যোগ্য নেতৃত্ব,  সততা, নিষ্ঠা, দূরদর্শিতা, কঠোর পরিশ্রম এবং সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে আজ বাংলাদেশ দরিদ্র হতে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে এবং আমরা উন্নত দেশ হবার স্বপ্ন দেখছি - স্মার্ট বাংলাদেশ শ্লোগান নিয়ে ধনী দেশে পরিণত হবার আশা করছি । তিনি অজস্র স্বার্থান্বেষী মহল হতে কিছু যোগ্য লোক খুঁজে বের করে তাদেরকে দায়িত্ব দিয়ে মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়নসহ অসংখ্য উন্নয়নমুলক কাজ করিয়েছেন। তিনি আমাদেরকেও ভালো জেনে দায়িত্ব দিয়েছেন। উনি তো কোনদিন আমাদের কাছে কোন সুপারিশ করেন না- তাহলে উনার স্বপ্নকে আমরা ধূলিসাৎ করার অপপ্রয়াস চালাই কোন অজুহাতে?  আমরা যারা ভালোর মুখোশ পরে স্বজনপ্রীতি করি কিংবা ঘুষ খাই, তারা কিভাবে নিজেকে মানুষ দাবি করি। আমাদের লজ্জা হওয়া উচিত, মানুষ হিসেবে নিজের পরিচয় দিতে। 

ক্ষমতার দাপটে বাঘ সেরা- তাই তো আমরা অনেক সময় সৃষ্টির সেরা জীব মানুষকে বাঘের বাচ্চা বলে পশুতে নামিয়ে দিয়ে গর্ববোধ করি কিংবা গর্বিত হই। পিঁপড়া কিংবা মৌমাছি সঞ্চয় করে সৎ পথে- পরিশ্রম করে। কিন্তু এরা পতঙ্গ, মানুষ নয়। তাহলে আমরা যারা গায়ের জোরে নিজেদের ক্ষমতা দেখাই কিংবা ঘুষ-দুর্নীতি করে অর্থ উপার্জন করি, তারা কোন যুক্তিতে ঐসব পশুর চেয়ে উত্তম? আজকে আমাদের পচে যাওয়া সমাজে অর্থ থাকলে লোকে সমীহ করে - তাই বলে কি মানুষ হওয়া যায়? বাঘকেও  লোকে সমীহ করে, তাই বলে বাঘ তো আর মানুষ নয়। অপরদিকে বাঘ নিষ্পাপ।  তাহলে অন্যায়কারী মানুষ হয় কিভাবে? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন নিজের সর্বস্ব দিয়ে পচে যাওয়া সমাজকে পরিবর্তন করে সেরা সমাজে পরিণত করার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন, তখন যারা শেখ হাসিনার লোক পরিচয় দিয়ে ঘুষ খায়, স্বজনপ্রীতি করে তারা কোন পর্যায়ের পশু হতে পারে? আমার জানা নেই। আসলেই কি আমরা শেখ হাসিনার লোক? আমরা কি শেখ হাসিনার আদর্শকে ধারণ করি?  তাই বলে আমি সবাইকে খারাপ ভাবছি না, সবাই খারাপ হলে আমাদের এত এত উন্নয়ন সম্ভব হতো না।  ভালো লোক সমাজে অবশ্যই আছে।  মনে রাখতে হবে, যাদের মনুষ্যত্ব আছে তারাই কেবল মানুষ, মনুষ্যত্ব হারিয়ে ফেললে মানুষ আর মানুষ থাকে না, পশুরও অধম হয়ে যায়।

আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রায়ই বলেন, কত টাকার দরকার বেঁচে থাকার জন্য? আসলেই তাই। আমরা কি কেউ গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারবো যে, অন্যায়ভাবে অর্জিত সুবিধা ভোগ করতে পারবো?  বরঞ্চ ঘুষ দুর্নীতি স্বজনপ্রীতি অন্যায় আমাদেরকে ইহকাল ও পরকাল - উভয় জগতে লাঞ্ছনা হয়ে আসে, এর থেকে কোন ক্ষমা না, পরিত্রাণ নাই। দোজখের আগুন অনেক ভয়াবহ। তাই চলুন, আমরা সবাই মানুষ হওয়ার চেষ্টা করি, সত্যিকার মানুষ যাকে বলা যায়।

লেখক: উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence