এনটিআরসিএ’র ভুলে কপাল পুড়েছে চাকরিপ্রার্থীদের

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ
বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ  © ফাইল ফটো

চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের সুপারিশ না করতে তাদের রোল ব্লক করে রেখেছিল বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। এর ফলে একই রোল নম্বর হওয়ায় চাকরির সুপারিশ থেকে বাদ পড়েছেন বেশ কিছু নিবন্ধনধারী। 

জানা গেছে, এখন পর্যন্ত ১৬টি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা আয়োজন করেছে এনটিআরসিএ। নিবন্ধন পরীক্ষা পৃথক হলেও একাধিক নিবন্ধনধারীদের একই রোল নম্বর দেওয়া হয়েছে। ইনডেক্সধারীদের রোল নম্বরের সাথে সাধারণ নিবন্ধনধারীদের রোল নম্বরগুলো মিলে যাওয়ায় সেগুলোও ব্লক করে রাখে এনটিআরসিএ। আর তাতেই চাকরির সুপারিশ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন অনেকে।

চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগ, চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে ইনডেক্সধারী (আগে থেকেই এমপিওভুক্ত) শিক্ষকদের আবেদনের সুযোগ বন্ধ রাখা হয়েছিল। এই প্রার্থীরা যেন আবেদন করতে না পারেন সেজন্য তাদের নিবন্ধন সনদের রোল নম্বর সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর থেকে সংগ্রহ করেছিল এনটিআরসিএ। ইনডেক্সধারীদের রোলগুলো টেলিটকের মাধ্যমে ব্লক করে রাখে এনটিআরসিএ। তবে একাধিক নিবন্ধনধারীর রোল একই হওয়ায় সবগুলো রোলই ব্লক হয়ে যায়। এর ফলে আবেদন করলেও নিয়োগের প্রাথমিক সুপারিশ পাননি অনেকে।

প্রার্থীদের এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে অনুসন্ধান করেছে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস। একাধিক চাকরিপ্রার্থীর রোল এবং প্রাথমিক সুপারিশের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গণিত, ইংরেজি, আরবি, বাংলা, ইসলামের ইতিহাসসহ নিবন্ধনের বিভিন্ন বিষয়ে একই রোল নম্বরে একাধিক নিবন্ধন সনদ দেওয়া হয়েছে। 

এই সনদ দিয়ে প্রথম ও দ্বিতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে সুপারিশপ্রাপ্তরা চাকরি করছেন। তাদের অধিকাংশই ইনডেক্স পেয়েছেন। যে সকল নিবন্ধন সনদের রোলে ইনডেক্স রয়েছে, সেগুলো ব্লক করে রাখায় ফ্রেশার হিসেবে চাকরির আবেদন করেও রোল নম্বর একই হওয়ায় ভালো নম্বর এবং মেধাতালিকায় এগিয়ে থেকেও চাকরির সুপারিশ পাননি একাধিক নিবন্ধনধারী। এর ফলে তুলনামূলক কম নম্বরধারী এবং মেধাতালিকায় পিছিয়ে থেকেও চাকরির সুপারিশ পেয়েছেন অনেকে।

মো. আনিছুর রহামান নামে এক চাকরিপ্রার্থী বলেন, আমি আমার উপজেলার মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছি। অথচ আমি চাকরির সুপারিশ পাইনি। আমার চেয়ে কম নম্বর পেয়ে আমার উপজেলায় অনেকেই চাকরির সুপারিশ পেয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে আমরা এনটিআরসিএ’র দুইজন কর্মকর্তার সাথে দেখা করে কথা বলেছি। তারা সফটওয়্যারে দেখেছেন যে ইনডেক্সধারীদের রোল নম্বরের সাথে আমাদের রোলগুলো মিলে যাওয়ায় আমাদের ব্লক করে রাখা হয়েছে। এর ফলে আমরা কোথাও চাকরির সুপারিশ পাইনি।

মো. মামুনুর রশিদ নামে আরেক চাকরিপ্রার্থী জানান, জাতীয় মেধাতালিকায় আমরা রোল অনুযায়ী আরেকজনের রোল রয়েছে। তিনি ১৪তম নিবন্ধনধারী। দ্বিতীয় গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তিনি বগুড়ার একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুপারিশ পেয়ে ইনডেক্স পেয়েছেন। তার ইনডেক্স থাকায় আমার রোলটিও ব্লক করে রাখা হয়। এর ফলে আমার চেয়ে কম নম্বরধারী ১৩ জন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুপারিশ পেয়েছেন।

প্রার্থীদের এসব অভিযোগ এবং রোল ব্লকের বিষয়টি জানতে এনটিআরসিএ’র বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস। তবে কোনো কর্মকর্তাই বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে চাননি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনটিআরসিএ’র নিয়োগ শাখার এক কর্মকর্তা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, প্রার্থীরা যে অভিযোগ করেছেন তার সত্যতা পাওয়া গেছে। গত রোববার বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। এ বিষয়ে কি করা যায় তা ভেবে দেখা হচ্ছে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে এনটিআরসিএ’র সচিব মো. ওবায়দুর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, সুপারিশের ক্ষেত্রে কিছু ভুল হতে পারে। যেহেতু এটি কম্পিউটারের মাধ্যমে করা হয়েছে। আমরা প্রার্থীদের অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখবো।


সর্বশেষ সংবাদ