ঘটনাস্থল কুড়িল: সেই মিম, এই মীম

নিহত মাইশা মমতাজ মীম ও  দিয়া খানম মিম
নিহত মাইশা মমতাজ মীম ও দিয়া খানম মিম  © টিডিসি ফটো

ঘটনাস্থল কুড়িল: সেই মিম, এই মীম। দিন-তারিখ ভিন্ন হলেও স্থান এবং নামের কিন্ত মিল আছে। মনে আছে ২০১৮ সালের শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে কথা। যেই ঘটনা থেকে এই আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিলো তার নৈপথ্য ছিলো শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মিম ও বিজ্ঞান বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আব্দুল করিম রাজিব। কুড়িল ফ্লাইওভারে বাস চাপায় তাদের মৃত্যুর পর সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন। উত্তাপ ছড়িয়ে সেই আন্দোলন শেষ হলেও আন্দোলনের ফসল ঘরে তুলতে পারেনি শিক্ষার্থীরা। তাইতো আজ আবার সেই দিনের পুনরাবৃত্তি দেখতে হলো।

আরও পড়ুন: ‘কত কার-বাস চলে গেল, মীমের লাশ নিয়ে গেলেন গরীব রাজমিস্ত্রী’

সেই একই স্থান। রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড ফ্লাইওভারে দুর্ঘটনায় নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাইশা মমতাজ মীম (২০) নিহত হয়েছেন। তিনি নর্থ-সাউথে ইংরেজি বিভাগে ষষ্ঠ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী ছিলেন। এক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করতে নিজের স্কুটি চালিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছিলেন। সেই পর্যন্ত আর যাওয়া হলোনা। পথেই দুর্ঘটনার শিকার হয়ে নিভে যায় তার জীবন প্রদীপ। শুক্রবার (১ এপ্রিল) আনুমানিক সকাল সাড়ে ৭টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানান খিলক্ষেত থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুন্সী সাব্বির আহমেদ।

তিনি আরও জানান, কুড়িল ফ্লাইওভারে ওঠার পর মাঝামাঝি জায়গায় দুর্ঘটনাটি ঘটে। বাসের ধাক্কায় না অন্য কোনোভাবে তার মৃত্যু হয়েছে সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলেও জানান তিনি। ৯৯৯ এ একটি ফোনে পুলিশ দুর্ঘটনার খবর পায়। রক্তাক্ত অবস্থায় মীমকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। পরে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ নেওয়া হয় সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

আরও মর্মান্তিক বিষয় হলো সকাল ৭টার দিকে দুর্ঘটনা ঘটলেও প্রায় ৯.৩০ এর দিকে হাসপাতাল থেকে তার শিক্ষকের কাছে কল আসে। বাকী সময় রাস্তাতেই পড়ে ছিলো হয়তো। আহা, কত গাড়ী, বাইক, বাস হয়তো পাশ দিয়েই চলে গেছে। কারো সময় হয়নি থামার। শেষে এক রাজমিস্ত্রী তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। ততক্ষনে তার জীবন প্রদীপ নিভে গেছে। মনের মধ্য প্রশ্ন জাগে সঠিক সময়ে হাসপাতালে নিয়ে আসলে হয়তো মীম বেঁচেও যেতো।

এর আগে ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই দুপুরে কলেজ ছুটি শেষে বাসায় ফেরার জন্য কালশী ফ্লাইওভার থেকে নামার মুখে এমইএস বাস স্ট্যান্ডে ১৫/২০ জন শিক্ষার্থী দাঁড়িয়ে ছিলেন। জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাস ফ্লাইওভার থেকে নামার সময় মুখেই দাঁড়িয়ে যায়। এ সময় পেছন থেকে আরেকটি দ্রুতগতি সম্পন্ন জাবালে নূরের বাস ওভারটেক করে সামনে আসতেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। নিমিষেই ওঠে পড়ে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের ওপর। চাকার নিচে পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায় দুইজন। তাদরে মধ্য একজন ছিলেন দিয়া খানম মিম।

সেই মিমের বাবা ছিলো বাস চালক। নিজে মেয়ের প্রাণ বাস চালকের হাতে যাওয়ায় ছেড়ে দেন সেই পেশা। এই মিমের বাবা মৌচাক আইডিয়াল পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ নূর মোহাম্মদ মামুন। তার দুই মেয়ের মধ্যে বড় মিম। উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরে তাদের বাসা। গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায়।

আরও পড়ুন: সন্তানদের সময় দিতে চাকরি ছাড়লেন বিসিএস ক্যাডার মা

২০১৮ সালে ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই কলেজ শিক্ষার্থী নিহতের আলোচিত ঘটনায় করা মামলায় দুই বাস চালক এবং একজন সহকারীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। সেই মিম হত্যার বিচার হলেও এই মীমের কপালে কি লিখা আছে তা জানা নেই। কারণ পুলিশ এখনও কোন গাড়ি বা অন্য কাউকে সনাক্ত করতে পারেনি।

ওই আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সরকার সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ পাস করে। আইন পাস হলেও এখনও সড়কে ফেরেনি শৃঙ্খলা। প্রতিদিন কত কত তাজা প্রাণ ঝরেছে সড়কে। আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ না হওয়ার কারনেই সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধ হচ্ছেনা বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence