বাড়িভাড়া নিয়ে হয়রানির শিকার শিক্ষার্থীরা, সমন্বয়ের দাবি
- ইলিয়াস শান্ত
- প্রকাশ: ২১ জুন ২০২০, ০৯:১১ PM , আপডেট: ২১ জুন ২০২০, ১১:০০ PM
করোনা পরিস্থিতিতে সবকিছুর সঙ্গে স্থবির হয়ে পড়েছে শিক্ষাব্যস্থায়ও। দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে দেশে যারা উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন তাদের একটি বড় অংশ আবাসন সংকট থাকায় বাড়িভাড়া করে পড়াশোনা করে আসছিলেন। করোনার দীর্ঘ ছুটিতে তারা তাদের ভাড়া করা এসব বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছেন নিজের বাড়িতে। তাই যারা ভাড়া করা বাড়ি একবারে না ছেড়ে দিয়েছেন তাদের এসব বাড়িতে এখন না থেকেও ভাড়া গুনতে হচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মাস শেষ হতে না হতেই বাড়ির মালিকদের কাছে নিয়মিত হয়রানির শিকার হচ্ছেন তারা। প্রতি মাসের শেষেই এটা যেন নিয়ম হয়ে গেছে। কম রাখার কথা বললেও বাড়ির অনেক মালিক তা শুনছেন না। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর নিজস্ব প্রতিষ্ঠান থেকেও বাড়ির মালিকদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কোন সমন্বয় করা হচ্ছে না।
দেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করা অধিকাংশ শিক্ষার্থী টিউশনি করে তাদের পড়াশোনা চালাচ্ছিলেন। এ সময়ে তারা নিজেরা নিজেদের প্রতিষ্ঠানে না থাকায় এবং করোনা পরিস্থিতির কারণে টিউশন ছেড়ে দেওয়ায় আয়ের একমাত্র উৎসটাও বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে এসব শিক্ষার্থীদের বাড়িভাড়ার টাকায় যারা মাসের পর মাস সংসার চালাতেন, তারাও পড়েছেন সংকটে। যে কারণে উভয় পক্ষ থেকে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে বাড়িভাড়ার বিষয়টি নিয়ে সমন্বয়ের দাবি জানানো হয়েছে।
তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী ও কলেজ শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের আহ্বায়ক রিয়াজ মাহমুদ বলেন, এই মহামারীর কারণে সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এই অবস্থায় অনেকেই গ্রামে এবং টিউশনিও বন্ধ। তার উপর মেস ভাড়া পরিশোধ করার জন্য বাড়িওয়ালারা শিক্ষার্থীদের উপর চাপ সৃষ্টি করছে। শিক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোন আলোচনা হচ্ছে না। আমরা আশা করছি মেস ভাড়া মওকুফ করে রাষ্ট্রীয় প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
করোনায় দেশের সকল বাড়ি-দোকান ভাড়া ও টিউশন ফি আগামী তিন মাসের জন্য মওকুফের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে তিন দিনের কর্মসূচী পালন করছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।
মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. আল মামুন বলেন, করোনা ভাইরাস সংকটে সাধারণ শিক্ষার্থী ও শ্রমজীবী মানুষদের আর্থিক সমস্যার কথা বিবেচনা মানবিক স্বার্থে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের টিউশন ফি, বাড়ি ও দোকান ভাড়া আগামী তিন মাসের জন্য মওকুফ করার লক্ষ্যে সরকারি নির্দেশনা প্রদানের দাবি জানাচ্ছি।
বাড়িভাড়ার বিষয়টি নিয়ে ভোগান্তিতে আছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। শিক্ষার্থীদের মেস ভাড়া মওকুফের আহ্বান জানিয়ে উপাচার্য বরাবর খোলা চিঠি লিখেছেন শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের নেতারা।
দেখুন: ২৫ বছরে রাজধানীতে বাড়িভাড়া বেড়েছে ৪শ’ ভাগ
তবে দেশের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের বাড়িভাড়া সংকট নিয়ে কাজ করছেন। এরমধ্যে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বাড়িভাড়া সংকট নিরসনে কমিটি গঠনের খবর পাওয়া গেছে। তবে বশেমুরবিপ্রবি কমিটি শিক্ষার্থীদের বাড়িভাড়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিলেও তাতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তারা। অপরদিকে জবি কমিটির এখনো সিদ্ধান্তের কোন খবর পাওয়া যায়নি।
জবি কমিটির কোন খবর পাওয়া না গেলেও ভিসি অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান করোনাকালীন সময়ে বাড়িভাড়া নিয়ে বিপাকে থাকা শিক্ষার্থীদের সুখবর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ক্যাম্পাস খুললেই তারা বাসা ভাড়া সমস্যা নিয়ে কাজ করবেন। এখন কোনো সমস্যা হলে প্রক্টরকে জানালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা নেবেন।
এদিকে শিক্ষার্থীদের মেস-বাসা ভাড়া সংকট দূর করতে নিজেদের একদিনের বেতন দিয়ে তহবিল গঠন করার উদ্যোগ নিয়েছে নোবিপ্রবি শিক্ষকরা। নোবিপ্রবির সকল শিক্ষকের অনুমতিক্রমে শিক্ষক সমিতি এই তহবিল গঠন করবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাজনুর রহমান সবুজ।
দেখুন: ঢাকায় প্রতিবছরই বাড়ি ভাড়া বাড়ে কেন?
সমন্বয়ের কথা জানিয়ে বশেমুরবিপ্রবি কৃষি বিভাগের শিক্ষার্থী মুকুল আহমেদ রণি জানান, বাড়িওয়ালারা অনেকে যেমন বাসা ভাড়ার আয়ের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল তেমনি শিক্ষার্থীরাও অনেকে টিউশনের আয়ের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এই মুহূর্তে শিক্ষার্থীদের টিউশন বন্ধ। তাই করোনার সময়টাতে যদি বাড়িভাড়া ৫০ শতাংশ মওকুফ করা হতো তাহলে শিক্ষার্থীরাও উপকৃত হতো আবার বাড়িওয়ালারও খুব একটা সমস্যা হতোনা।
বিষয়টি সুষ্ঠু সমাধান চান বাড়ির মালিকরাও। নোয়াখালীর উত্তর ফকিরপুর এলাকার বাড়ির মালিক মো. শফিকুল্লাহ বলেন, ক্যাম্পাস বন্ধ হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা বাড়ি চলে গেছে। শিক্ষার্থীদের কাছে গত তিন মাসের ভাড়া বকেয়া রয়েছে। এজন্য আমাকেও অর্থনৈতিকভাবে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। দ্রুত এটির সুষ্ঠু সমাধান হওয়া দরকার।