ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’র আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত ১২০৭ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

  © সংগৃহীত

ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’-এর আঘাতে সাত জেলায় এক হাজার ২০৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয় ৬৮১টি এবং স্কুল-কলেজ মাদ্রাসা ৫২৬টি। মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে সাত শতাধিকের বেশি। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রাথমিক স্কুল বেশি। ৭টি জেলায় প্রাথমিক স্কুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৬৮১টি এবং মাধ্যমিক ও কলেজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫২৬টি। এ তালিকা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা কর্মকর্তারা।

এদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া শিক্ষা কার্যক্রম ভীষণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। চলমান জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা, এ মাসের শেষে প্রাথমিক সমাপনী এবং আগামী মাসে বার্ষিক পরীক্ষা নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত স্কুল মেরামত করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

ক্ষতিগ্রস্ত জেলার শিক্ষা কর্মকর্তা ও শিক্ষকরা জানান, ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেশ কয়েকটিতে জেএসসি-জেডিসির পরীক্ষা কেন্দ্র ছিল। এসব কেন্দ্র অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত ও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অনেক কেন্দ্র টেবিলে, চেয়ার দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। এসব কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কেন্দ্র অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়েছে।

এছাড়া চলতি মাসের শেষে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা এবং আগামী মাসে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বার্ষিক পরীক্ষা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে দেশের জোনকে নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর।

ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান মেরামত করতে কত টাকা প্রয়োজন সে চাহিদা চেয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। চাহিদা পাওয়ার পরপরই বরাদ্দ দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

খুলনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ এস এম সিরাজ উদ দোহা বলেন, এ জেলায় ১০০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে কয়রা উপজেলার প্রাথমিক স্কুল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্কুলগুলো নির্মাণে উপজেলা পর্যায় থেকে ৭৪ লাখ টাকার চাহিদা পেয়েছি। বাগেরহাট জেলায় মোট ২১৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সাতক্ষীরা জেলায় ৯১টি স্কুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে শ্যামনগর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলের সংখ্যা ৩৭টি।

বরগুনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত জেলায় ১৩৪টি স্কুল আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে আমতলী উপজেলায় ৩০টি, বরগুনা সদর উপজেলায় ৩৬টি, তালতলী উপজেলায় ২২টি, পাথরঘাটায় ১০টি ও বেতাগীতে ৩৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টাকার অংকে এখন পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির সংখ্যা নির্ধারণ করা যায়নি।

ভোলা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নিখিল চন্দ্র হালদার বলেন, জেলায় ঘূর্ণিঝড়ে তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। মাত্র ১০টি স্কুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ঝালকাঠি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নবিজ উদ্দিন সরকার বলেন, ঝালকাঠি সদরে দুটি ও কাঁঠালিয়া উপজেলায় ৯টি স্কুল আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

পটুয়াখালী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইদুজ্জামান বলেন, জেলায় ৬৯টি স্কুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে বাউফলে ২০টি স্কুল। কোনো স্কুলের দরজা-জানালা ভেঙে গেছে। আবার টিনশেড স্কুলের চাল বাতাসে উড়িয়ে নিয়ে গেছে।

বরিশাল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. লতিফ মজুমদার বলেন, জেলায় ৫২টি স্কুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টাকার অংকে ৭০ লাখ। টিনের চাল উড়িয়ে নেওয়ায় কিছু প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

সাতক্ষীরা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিকভাবে সাতক্ষীরা জেলায় ১৪২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার তথ্য পেয়েছি। এর মধ্যে ৬৬টি মাদ্রাসা। জেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শ্যামনগর উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১০২টি। শ্যামনগরের মুন্সীগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও এজি কাঁঠাল বাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের টিন শেড ভবন বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ঝড়ে টিনের চাল উড়িয়ে নিয়ে গেছে। আবার গাছ পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। বাগেরহাটে ১৫৮টি প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খুলনা জেলায় ৮৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ভোলা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাকিরুল হক বলেন, জেলায় ৩১টি প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১৩টি স্কুল ও ১৮টি মাদ্রাসা। জেলার লালমোহন উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

পিরোজপুর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সুনীল চন্দ্র সেন বলেন, জেলার বেশির ভাগ উপজেলায় এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎ নেই। অনেক কর্মকর্তার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দিকে নজর দিতে পারেননি। এখন পর্যন্ত ৮৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার তথ্য পেয়েছি। তবে এ সংখ্যা আরও বাড়বে।

পটুয়াখালী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসাইন বলেন, জেলায় ৪১টি মাদ্রাসা, ১৮টি স্কুল ও দুটি কলেজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাউফল ও গলাচিপা উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বরগুনা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শাহাদাৎ হোসেন বলেন, জেলার পাথরঘাটা ও বামনা উপজেলার বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ দুই উপজেলার ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে গেছে। অনেক প্রতিষ্ঠানে চাল উড়িয়ে নিয়ে যাওয়ায় পাঠদান ব্যাহত হবে।

তিনি আরও বলেন, জেলায় ৩০টি মাদ্রাসা, ১২টি স্কুল ও তিনটি কলেজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠানে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঝালকাঠি জেলায় ২২টি স্কুল, ৩৩টি মাদ্রাসা ও আটটি কলেজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

কৃতজ্ঞতা: যায় যায় দিন


সর্বশেষ সংবাদ