হেঁটে, অটোতে ও বাসযোগে— যেভাবে নিজেই নিজেকে ‘অপহরণ’ করেন মুফতি মহিবুল্লাহ
- গাজীপুর প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ০১:৪৪ PM , আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ০১:৫৮ PM
গাজীপুর মহানগরের টঙ্গী পূর্ব থানা এলাকার টি অ্যান্ড টি বাজার জামে মসজিদের খতিব মুফতি মহিবুল্লাহ মিয়াজীর ‘অপহরণ ও উদ্ধার’ নাটকটি এখন নতুন মোড়ে। তদন্তে বেরিয়ে এসেছে চমকপ্রদ তথ্য; যা প্রথমে অপহরণ ভেবে হইচই পড়েছিল, পুলিশ বলছে, সেটি আসলে মুফতি মহিবুল্লাহর নিজেরেই আত্মগোপন ছিল। তাদের ভাষ্য, নিখোঁজ হওয়ার দিন তিনি স্বেচ্ছায় স্থান ত্যাগ করেছিলেন, কোনো জোরপূর্বক তোলার ঘটনা ঘটেনি। বিষয়টি নিয়ে নিজেও একটি ভিডিও দিয়েছেন এই খতিব, যেখানে নিজের হারিয়ে যাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেছেন।
মুফতি মহিবুল্লাহ একটি ভিডিও বার্তায় ‘অপহরণ’র ঘটনার বিস্তারিত জানান। তিনি বলেন, ‘আমি হাঁটতে গেছি। হাঁটতে যাওয়ার পর আমার মাথায় এলো যে আমি চলতে থাকি, যাই। কোন দিকে যাই, বলতে পারি না। একপর্যায়ে আমি অটো পাইছি, অটোতে উঠছি, মীরের বাজার নামছি। নামার পরে মনে চাইল যে আমি জয়দেবপুর যাই। সিএনজি দিয়ে জয়দেবপুর গেছি। এরপরে আমার মাথায় আসলো যে আমি এখন এই বাসে উঠি। বাসে উঠে শ্যামলী না কোন জায়গায় যেন নামাইছে। এইখান থেকে আমি আরেকটা বাসে উঠে গাবতলী গেছি। ওইখান থেকে মনে চাইল যে আমি টিকিট করি। কই যাব, খেয়াল হইল যে আমি পঞ্চগড় যাই। অনেক রাতে পঞ্চগড় নামছি। নামার পরে হাঁটতেছিলাম, কোন দিকে হাঁটতেছি আমি জানি না চিনি না, হাঁটতেছিলাম।’
'এক পর্যায়ে আমি দেখি যে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়। তারপরে পুলিশ লাইনস। এগুলি হাঁইটা পার হইয়া গেছি। পার হইয়া গিয়ে এক পর্যায়ে আমি একটা শিকল পরণী পাইলাম। ওইটা নিয়া এক জায়গায় আমি প্রসাব করতে বসলাম। প্রসাব করলাম আর জামা-পায়জামায় প্রসাব লাগলো এরপরে জামা খুলে ফেললাম, পায়জামা খুললাম কিন্তু খোলার পরে যে আবার পড়তে হইবে এই জিনিসট আমি আর পারি নাই', যোগ করেন তিনি।
তিনি নিজেই নিজেকে শেকলে আবব্ধ করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ঠান্ডায় ঠান্ডায় শুয়ে, পড়লাম আর পায়ে শিকল দিলাম। পায়ে শিকল দিয়া এরপরে আমার এই যে কেন করতেছি, এইডার কোন চিন্তা-ভাবনা কিছুই আমার নাই। খালি যা মাথায় আসতেছে তা করতেছি। এক পর্যায়ে আমি শুয়ে পড়লাম। ঠান্ডায় খুবই কাতর হয়ে গেলাম এরপরে কতক্ষণের জন্য আমার ঘুম আসলো। এরপরে সকালে লোকেরা আমারে হসপিটালে নিল আমি দেখি যে আমি পঞ্চগড় হসপিটালে আছি।’
থানা সূত্রে জানা যায়, গত ২১ অক্টোবর বিকেল ৪টার দিকে খতিব মহিবুল্লাহ নিখোঁজ হন। পরদিন তার পরিবার টঙ্গী পূর্ব থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নং ৮২১/২৫) করেন। জিডিতে উল্লেখ করা হয়, নামাজ পড়তে গিয়ে তিনি অপহৃত হয়েছেন।
তদন্তে পুলিশ আশপাশের এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখতে পায়, ওই সময় খতিব নিজেই একটি সিএনজি অটোরিকশায় করে স্থান ত্যাগ করছেন। ফুটেজে কোনো জোরপূর্বক তোলা বা সংঘর্ষের চিত্র পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে ২৩ অক্টোবর, পঞ্চগড় জেলার তেতুলিয়া থানার হেলিপ্যাড বাজার এলাকায় স্থানীয়রা তাকে একটি গাছের সঙ্গে শিকলবদ্ধ অবস্থায় দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে তেতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মহিবুল্লাহ মিয়াজী স্বীকার করেন যে, তিনি নিজ ইচ্ছাতেই এমন কাজ করেছেন। তবে কেন, কী উদ্দেশ্যে এবং কার প্ররোচনায় তিনি আত্মগোপনে গিয়েছিলেন— তা এখনো তদন্তাধীন রয়েছে।
এ বিষয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) মোহাম্মদ তাহিরুল হক চৌহান বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে এটি কোনো অপহরণের ঘটনা নয় বলে মনে হচ্ছে। তদন্তে দেখা গেছে, খতিব নিজেই স্থান ত্যাগ করেছিলেন। তবে এর পেছনের কারণ ও উদ্দেশ্য বিস্তারিতভাবে যাচাই করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বর্তমানে মোহাম্মদ মহিবুল্লাহ মিয়াজী পুলিশের তত্ত্বাবধানে আছেন এবং তিনি শারীরিকভাবে সুস্থ রয়েছেন বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে।