‘আমার বুকের ধন ছটফট করছে’ মাইলস্টোনে বিমান বিধ্বস্তে কান্নায় ভেঙে পড়েছে পরিবারগুলো
- মির্জা নাদিম
- প্রকাশ: ২২ জুলাই ২০২৫, ০১:৪৬ PM , আপডেট: ২২ জুলাই ২০২৫, ০৭:০১ PM
উত্তরার ১২ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ আজ রূপ নিল শোকস্তব্ধ এক করুণ অধ্যায়ে। দুপুর ১টা ১২ মিনিটে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সরাসরি স্কুল ভবনের ওপর বিধ্বস্ত হলে অন্তত ২০ জন কোমলমতি শিক্ষার্থী নিহত হয় এখন পর্যন্ত এবং আহত হয় ১৭১ জনের বেশি। হতাহতদের মধ্যে বহুজন আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন।
দুর্ঘটনার সময় দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় ক্লাস চলছিল। পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নিহতদের অধিকাংশই পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রছাত্রী বলে নিশ্চিত করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেখানে জ্ঞানের আলো জ্বলবার কথা, সেখানে আজ নেমে এসেছে মৃত্যু আর ধ্বংসের ছায়া। বিমান বিধ্বস্তের পরপরই এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক, কেঁপে ওঠে পুরো ভবন। বিস্ফোরণের বিকট শব্দের সঙ্গে সঙ্গে আগুন ধরে যায়, ছড়িয়ে পড়ে ধোঁয়ার ঘন মেঘ। শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা ছুটে আসেন সন্তানদের খোঁজে।
নিহত শিক্ষার্থী আফরিনের মা হালিমা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘সকালেই ওকে হাসিমুখে স্কুলে পাঠালাম। এখন ও আর কোনোদিন ফিরে আসবে না, আমার আফরিনকে হারালাম। আমি কিভাবে বাঁচব? আল্লাহ আমাকেও নিয়ে যাও!
আহত ছাত্র রবিউলের মা নাসিমা বেগম ছেলের যন্ত্রণায় অসহায় হয়ে বলেন, ‘শরীরটা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তাকেও ঠিকমতো চিনতে পারছি না। আমার বুকের ধন যন্ত্রণায় ছটফট করছে, আমি কিছু করতে পারছি না। আমি আর সহ্য করতে পারছি না।
দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ একযোগে উদ্ধার অভিযানে নামে। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও অনুসন্ধান চলছে। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, উত্তরা আধুনিক হাসপাতাল, জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউট ও সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সরকার ইতোমধ্যে এই দুর্ঘটনার তদন্তে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে। আগামীকাল (মঙ্গলবার) সারাদেশে এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালনের ঘোষণা দিয়েছে। সরকারি, আধা-সরকারি ও বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে।
উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস শোকবার্তায় বলেন, ‘এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় আমরা বিমর্ষ। সকল ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা যেন আর না ঘটে, তার জন্য সর্বোচ্চ সতর্কতা ও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
নিহত শিক্ষার্থীদের পরিবারের জন্য আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। একইসঙ্গে আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে। আজ গোটা জাতি কাঁদছে সেই শিশুদের জন্য, যারা বই-খাতা হাতে স্কুলে গিয়েছিল—কিন্তু আর কখনও ফিরে আসবে না। যেন আর কোনো মায়ের বুক খালি না হয়, সেই প্রার্থনায় আজ বাংলাদেশ একাকার।