পাঠ্যবইয়ে জুলাই অভ্যুত্থান তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছেন দায়িত্বশীলরা
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৪৭ AM , আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ PM
এবারের পাঠ্যবইয়ে যথাযথভাবে চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান তুলে ধরতে এনসিটিবিতে বই পরিমার্জনের দায়িত্বপ্রাপ্তরা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে সামান্য কন্টেন্ট যুক্ত হলেও তাতে ভুল রয়েছে এবং তা এমন দায়সারাভাবে এসেছে, ইতিহাসের বিচারে যা বেশি দিন টিকবে না। এর দায় এনসিটিবি দায়িত্বশীল ও পরামর্জনকারীরা এড়াতে পারেন না বলে অভিযোগ উঠেছে।
শুক্রবার (২৪ জানিুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ড. আব্দুল্লাহ ফারুক সম্মেলন কক্ষে শিক্ষা অধিকার সংসদ আয়োজিত ‘২০২৫ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবইয়ে চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান পর্যালোচনা’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
সেমিনারে ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবইয়ের পর্যালোচনা উপস্থাপন করেন শিক্ষা অধিকার সংসদের সদস্যসচিব ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক মো. শাহনেওয়াজ খান চন্দন। পর্যালোচনায় ২০২৫-এর পাঠ্যবইয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রতিফলন না হওয়া, ইতিহাস বিকৃতি, ব্যবহৃত ছবি নিয়ে প্রশ্ন ও মানহীনতা, বইয়ের অপ্রাসঙ্গিক প্রচ্ছদ এবং বিষয়বস্তু যথার্থভাবে আসেনি বলে উল্লেখ করা হয়।
সেমিনারে শহিদ শাহরিয়ার খান আনাসের মা সানজিদা খান দিপ্তী বলেন, ‘চব্বিশকে ব্যর্থ করে দিতে যারা কাজ করছেন, তাদের অন্যতম হলেন রাখাল রাহা। এবারের পাঠ্যবইয়ের কাজই তার প্রমাণ। আবু সাঈদ ও মুগ্ধের পাশাপাশি শহিদ আনাসের চিঠি থাকা জরুরি ছিল। আনাসের মতো নিঃস্বার্থ অকুতোভয় সৈনিক জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অসংখ্য শিক্ষার্থীর প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছিল।’
শহিদ একরামুল হক সাজিদের বোন ফারজানা হক বলেন, ‘চাপে পড়ে কিছু ঘটনা পাঠ্যপুস্তকে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু এমনভাবে উপস্থাপনা করা হয়েছে যে, কয়েক বছর পর জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ইতিহাস যাতে মুছে ফেলতে পারে। এ বছর যদিও সময়ের অজুহাত দেওয়া হয়েছে, আগামী দিনে যেন শহিদদের নামগুলো পাঠ্যপুস্তকে পাওয়া যায়।’
জাতীয় নাগরিক কমিটির শিক্ষা ও গবেষণা সেল সম্পাদক ফয়সাল মাহমুদ শান্ত বলেন, ‘পাঠ্যপুস্তক রচনার ক্ষেত্রে পাইলটিং করে হোমওয়ার্কের মাধ্যমে করা দরকার। অতীতেও তেমনটা দেখা যায়নি। দুই দিন পর পর পরিবর্তন করা হয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে কনটেক্সচুয়ালাইজ করে পাঠ্যপুস্তকে ঢোকানো দরকার।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ও জাতীয় পাঠ্যপুস্তক কমিটির অন্যতম সদস্য ড. মনিনুর রশিদ বলেন, ‘পাঠ্যবই শতভাগ সঠিক ছাপানো কঠিন। এখানে সমালোচনা থাকবে, সেগুলো মেনে নেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। আমি নিজেও একটা কমিটির সদস্য। সেখানে বলা হয়েছে, যেন শহিদের বিষয় সঠিক তথ্য থাকে। কিন্তু সেভাবে হয়নি। শহিদদের মধ্যে যেন বৈষম্য না হয়। যখন যারা ক্ষমতায় তখন তারা ভুলে যায়। আগামী বছরের জন্য শিক্ষা কারিকুলাম কমিটি গঠন করা দরকার। সেটা ডিসেম্বরে হওয়ার কথা, এখনো হয়নি।’
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও কারিকুলাম কো-অর্ডিনেশন কমিটি ও বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য ড. সৈয়দা সুলতানা রাজিয়া বলেন, ‘কারিকুলামের কমিটিতে আমাদের একমাত্র মিটিং হয়েছে। আমরা কীভাবে পরিবর্তন আনব? যারা লিখবেন, রিভিউ করবেন তাদেরই মূল দায়িত্ব। তা ছাড়া শিক্ষা কমিশন গঠন করা জরুরি। শিক্ষা অধিকার সংসদ এভাবে সুপারিশ দিতে পারে, কিন্তু কতটা বাস্তবায়ন হবে? জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পাঠ্যপুস্তকেও আনতে চাই কিন্তু সেটা কত শতাংশ? চব্বিশের ঘটনার গুরুত্ব দিতে হবে। কিন্তু ধারণা থাকতে হবে, কীভাবে আমরা একে সঠিকভাবে বসাব। ২০১২-এর পাঠ্যপুস্তকে ফিরে গিয়ে আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি। এখন নতুন বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পাঠ্যপুস্তক করতে হবে।’
সেমিনারে শিক্ষা অধিকার সংসদের আহ্বায়ক ও নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির প্রফেসরিয়াল ফেলো অধ্যাপক ড. নিয়াজ আসাদুল্লাহের সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাবির শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. আহসান হাবীব, শিক্ষা অধিকার সংসদের অ্যাডভোকেসি কো-অর্ডিনেটর মিসবাহুর রহমান আসিম, মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর মাহফুজুর রহমান ও অফিস কো-অর্ডিনেটর মিনহাজুল আবেদিন, জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ড. আতিক মুজাহিদ, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি।