মুক্তি পেয়ে জিয়াউর রহমানের মাজারে গিয়ে কাঁদলেন লুৎফুজ্জামান বাবর
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৫৪ PM , আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৫, ০৪:১৯ PM
বিভিন্ন মামলায় দণ্ড মাথায় নিয়ে দীর্ঘ ১৭ বছরের বেশি সময় পরে কারামুক্ত হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বিএনপি নেতা লুৎফুজ্জামান বাবর। বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে সোজা চলে গেলেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবর প্রাঙ্গণে। আজ বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) বেলা দুইটার দিকে তিনি কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বের হয়ে আসেন। এ সময় কারা ফটকে অপেক্ষমাণ নেত্রকোনাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত অপেক্ষমাণ বিপুলসংখ্যক সমর্থক ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা তাকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেন।
তার মুক্তির অপেক্ষায় কারাগারের সামনে নেতাকর্মীদের ঢল নামে। দলীয় পতাকা হাতে সকাল থেকেই নেতাকর্মীরা দলে দলে কারাগারের সামনে আসতে শুরু করেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই কারাগারের সামনে হাজার হাজার নেতাকর্মীর ঢল নামে। প্রায় দেড় যুগ পর নেতাকে সামনাসামনি দেখা যাবে, এমনটা ভেবে জেলগেটের সামনে ভিড় করেন তার সমর্থকরা। অনেকেই জেলগেটের বেষ্টনী ডিঙিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়েন। কেউ কেউ বেষ্টনী পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করলেও কারারক্ষীদের তৎপরতায় তাদের কার্যসিদ্ধি হয়নি। একপর্যায়ে বাবর সমর্থকদের চাপে বেষ্টনী ভেঙে পড়ার উপক্রমও হয়।
কারামুক্ত হয়েই সরাসরি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা জানান লুৎফুজ্জামান বাবর। বিকেলে কারাগার থেকে বের হয়ে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জিয়া উদ্যানে যান বাবর। পরে জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও মোনাজাত করেন। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন হাজার হাজার নেতাকর্মী। বেলা পৌনে ২টায় কারাগার থেকে বের হলে নেতাকর্মীদের নিয়েই তার গাড়িবহর চলে, জিয়ার মাজারে যেতে তার সময় লেগে যায় তিন ঘণ্টা।
এসময় অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, নির্বাহী কমিটির সদস্য হাবিবুর রশীদ হাবিব, মদন উপজেলা বিএনপি সভাপতি নুরুল আলম তালুকদার, খালিয়াজুরী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুর রউফ স্বাধীন, মোহনগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সেলিম খান কার্ণায়েন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
লুৎফুজ্জামান বাবর জিয়াউর রহমানের মাজার প্রাঙ্গণে নজরুল ইসলাম খান ও রুহুল কবির রিজভীকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। হাত তুলে নেতাকর্মীদের অভিবাদনের সাড়া দেন। জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত ও শ্রদ্ধা জানানোর পর বনানীতে মা-বাবার কবর জিয়ারত করে অসুস্থ বাবর রওনা হন তার গুলশানের বাসায়।
মাজার জিয়ারত ও শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের অত্যন্ত প্রিয় সহকর্মী যিনি ১৭ বছরের বেশি সময় কারাগারের অন্ধকুঠিরে জীবনযাপন করতে বাধ্য হয়েছিলেন এবং যিনি উচ্চ আদালতের রায়ে নিরাপরাধ প্রমাণিত হয়ে মুক্ত হয়েছেন। আমাদের সেই প্রিয় সহকর্মী লুৎফুজ্জামান বাবরকে নিয়ে আমরা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত করেছি।
তিনি আরো বলেন, বাবর যখন কারাগারে যান, তখন টগবগে যুবক ছিলেন। তাকে মিথ্যা অভিযোগে অন্যায়ভাবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় কারাগারে আবদ্ধ রাখা হয়েছে। প্রায় ৬ বছর তাকে কনডেম সেলে রাখা হয়েছে। এই নিপীড়ন, এই অনিশ্চিত জীবন…দুইটি মামমলায় মৃত্যুদণ্ড, একটি মামলায় যাবজ্জীবন…এই দুশ্চিন্তা, মিথ্যা অভিযোগের কারণে যে ক্ষোভ, বেদনা এটা তাকে বৃদ্ধ করে ফেলেছে।
নজরুল ইসলাম বলেন, লুৎফুজ্জামান বাবর বিএনপির নিবেদিত নেতা। তিনি খুব অসুস্থ। এই অবস্থাতেও তার ঘরে পরিবারের কাছে না গিয়ে তিনি এসেছিলেন তার নেতা, আমাদের নেতা শহীদ জিয়ার মাজার জিয়ারত করতে।
প্রসঙ্গত, সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ২০০৭ সালের ২৮ মে লুৎফুজ্জামান বাবরকে গ্রেপ্তার করা হয়। জরুরি অবস্থার সেই দুই বছর এবং পরে আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে কয়েকটি মামলায় তাকে সাজা দেওয়া হয়। এর মধ্যে দুটি মামলায় তার মৃত্যুদণ্ড হয়, একটিতে হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আপিল শুনানি শেষে একে একে এসব মামলায় খালাস পান বাবর। গত ২৩ অক্টোবর দুর্নীতির এক মামলায় ৮ বছরের দণ্ড থেকে খালাস পান তিনি। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় মৃত্যুদণ্ডের আসামি বাবরসহ সব আসামিকে গত ১ ডিসেম্বর খালাস দেয় হাই কোর্ট।
১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলাতেও বাবরের মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল। আর অস্ত্র আইনের পৃথক মামলায় হয়েছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। গত ১৮ ডিসেম্বর ও ১৪ জানুয়ারি আপিলের রায়ে হাই কোর্ট দুই মামলাতেই বাবরকে খালাস দিলে তার মুক্তির পথ খোলে। বাবর নেত্রকোণা-৪ আসন থেকে (মদন-মোহনগঞ্জ-খালিয়াজুরী) ১৯৯১-১৯৯৬ ও ২০০১-২০০৬ সময়ে দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে খালেদা জিয়ার মন্ত্রিসভার সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে তিনি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছিলেন।