জাতীয় পার্টির সমাবেশ ঘোষণা থেকে স্থগিত, কী কী ঘটলো?

  © সংগৃহীত

চলমান উত্তেজনা ও পুলিশের নিষেধাজ্ঞার পর ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সাবেক জোটসঙ্গী জাতীয় পার্টি রাজধানীর কাকরাইলে তাদের পূর্বঘোষিত সমাবেশ স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে। শুক্রবার (১ নভেম্বর) রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে দলের চেয়ারম্যানের প্রেস সচিব খন্দকার দেলোয়ার জালালী এই সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন।

এটা লক - 2024-11-02T121049-249

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয় কাকরাইল চত্বরে অনুষ্ঠেয় সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স ২৯ ধারার ক্ষমতা বলে (সভাস্থল) পাইওনিয়ার রোডস্থ ৬৬ নম্বর ভবন, কাকরাইলসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় যে কোনো প্রকার সভা, সমাবেশ, মিছিল, শোভাযাত্রা, বিক্ষোভ প্রদর্শন ইত্যাদি নিষিদ্ধ করায় জাতীয় পার্টি আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরবর্তী সময়ে কর্মসূচি জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন: পূর্বঘোষিত সমাবেশ স্থগিত করল জাতীয় পার্টি

যা ঘটেছে গত দুইদিনে

বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও মহাসচিবসহ দলের নেতাদের নামে মলা প্রত্যাহার ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের দাবিতে শনিবার ঢাকায় সমাবেশ এবং বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দিয়েছিল দলটি। এই কর্মসূচি ঘোষণার কিছুক্ষণ পর সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে রাজধানীর কাকরাইলে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে যায় ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র, শ্রমিক ও জনতা’র ব্যানারে একদল লোক। তারা সেখানে ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। এর কিছুক্ষণের মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ফেইসবুকে পোস্ট দিয়ে লেখেন, “জাতীয় বেইমান এই জাতীয় পার্টি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বিজয়নগরে আমাদের ভাইদের পিটিয়েছে, অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিচ্ছে। এবার এই জাতীয় বেইমানদের উৎখাত নিশ্চিত।”

শুক্রবার (০১ নভেম্বর) সংবাদ সম্মেলন ডেকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, ওই কার্যালয়ের সামনে শনিবার তাদের যে সমাবেশের কর্মসূচি রয়েছে, তা চালু থাকবে।

আরও পড়ুন: ‘জাতীয় পার্টিকে কোনোভাবেই সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না’

একইদিনে ওই সমাবেশ ‘করতে দেওয়া হবে না’ বলে হুঁশিয়ারি দেয় বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ‘ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র, শ্রমিক, জনতা’র ব্যানারে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জাতীয় পার্টির নেতাদের গ্রেপ্তারের দাবিও তোলেন।

এমন পরিস্থিতিতে শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. মাইনুল হাসান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে শনিবার বিজয়নগরের পাইওনিয়ার রোডের ৬৬ নম্বর ভবন, পাইওনিয়ার রোড, কাকরাইলসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় যে কোনো প্রকার সভা, সমাবেশ, মিছিল, শোভাযাত্রা, বিক্ষোভ প্রদর্শন ইত্যাদি নিষিদ্ধ থাকবে। 

আরও পড়ুন: কাকরাইল ও এর আশপাশের এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ

পরে শুক্রবার রাতেই জাতীয় পার্টি তাদের বিজ্ঞপ্তিতে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি স্থগিতের কথা জানিয়ে দেয়।

আওয়ামী লীগের সাবেক মিত্রের একাধিক রূপ বদল

সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের মতই একাধিকবার রূপ পরিবর্তন করেছে আওয়ামী লীগ মিত্র জাতীয় পার্টি। জোট বা সমঝোতা করে ২০০৮ সাল থেকে নির্বাচন করেছে মোট চারটি। দলটির নেতারা কখনও মন্ত্রিত্ব নিয়ে সরকারের অংশীদার হয়েছেন, কখনও বসেছেন সংসদে বিরোধী দলের আসনে।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জাতীয় পার্টি সমর্থন দিলেও সরকার পতনের পর জাতীয় পার্টি তার অতীতের কারণে হোঁচট খাচ্ছে। শেখ হাসিনার পতনের পর ইউনূস সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টি অংশগ্রহণ করে। নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিভিন্ন দলের সঙ্গে আয়োজিত প্রধান উপদেষ্টার তিনটি সংলাপেও যান দলটির নেতারা। কিন্তু বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের আপত্তির পর ১৯ অক্টোবরের চতুর্থ দফার সংলাপে ডাক পায়নি দলটি।

এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ৭ অক্টোবর রাতে ফেইসবুক পোস্টে লেখেছিলেন, “স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টিকে সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হলে আমরা সেই আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ ও কঠোর বিরোধিতা করব।”

আরেকজন সমন্বয়ক মো. সারজিস আলম লিখেন, “জাতীয় পার্টির মতো মেরুদণ্ডহীন ‘ফ্যাসিস্টের দালালদেরকে’ প্রধান উপদেষ্টা কীভাবে আলোচনায় ডাকে?”

কিন্তু বারবার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলে এসেছেন, তারা কোটা আন্দোলনে শুরু থেকে সমর্থন দিয়ে এসেছেন। আর বিগত নির্বাচনগুলোতে তার দল বাধ্য হয়ে অংশগ্রহণ করেছে।

জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়ায় হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলমকে রংপুরে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে জাতীয় পার্টি। এই ঘোষণার মধ্যেও সারজিস অবশ্য রংপুরে এক আয়োজনে অংশ নিয়েছেন।


সর্বশেষ সংবাদ