সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের পরিকল্পনা আওয়ামী লীগের

ড. ইউনূস ও শেখ হাসিনা
ড. ইউনূস ও শেখ হাসিনা  © ফাইল ফটো

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে শিগগিরই রাজপথে আন্দোলন শুরু করতে পারে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দল। আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতার বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকা (ভিওএ)।

শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক এই সংবাদমাধ্যম। 

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী (নাদেল) ভয়েস অব আমেরিকাকে বলেছেন, আমরা আন্দোলন এবং আমাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করার পরিকল্পনা করছি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, নাদেল আওয়ামী লীগের কয়েক ডজন নেতার মধ্যে রয়েছেন যারা গেল আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যান। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে টানা চতুর্থ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করছিলেন হাসিনা। তবে ৫ আগস্ট পদত্যাগ করতে এবং একটি সামরিক হেলিকপ্টারে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন তিনি। 
 
সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকে বিক্ষোভকারীদের ওপর হিংসাত্মক দমন-পীড়নের (জুলাই থেকে আগস্টের মধ্যে) সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া হামলার ভয়ে ‘আন্ডারগ্রাউন্ডে’ চলে গেছেন আওয়ামী লীগের হাজার হাজার কর্মী-সমর্থক। 
  
গেল বুধবার আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এছাড়া চলতি মাসের শুরুর দিকে শেখ হাসিনা এবং আরও ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। 
 
টেলিফোনে ভয়েস অব আমেরিকার সঙ্গে আলাপকালে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাদেল বলেন, তারা দলের নেতাদের একত্রিত করার জন্য কাজ করছেন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করার জন্য অন্যান্য সমমনা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।
 
আওয়ামী লীগ কবে নাগাদ মাঠে নামার পরিকল্পনা করছে জানতে চাইলে দলটির এই নেতা বলেন, দুই সপ্তাহ কিংবা এক মাস পরে, আমরা আন্দোলন করতে পারি।
  
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে। আবার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা দ্রুত ফেরানোর কাজ নিশ্চিত করতে ইউনূস সরকারকে প্রকাশ্যে চাপও দিচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো। তবে এখন পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রগতিতে অসন্তুষ্ট দেশের অন্যতম বড় একটি রাজনৈতিক দল।
 
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মতে, ‘এই সরকার কিছুটা ধীর গতিতে চলছে।’ চলতি মাসের শুরুতে ঢাকায় নিজের বাসভবনে ভয়েস অব আমেরিকাকে ফখরুল বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন, তারা পদত্যাগ করেছে। কিন্তু তারা (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করেনি।’
 
সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং শিক্ষাবিদদের সমন্বয়ে ১০টি কমিশনকে বিচার বিভাগ, পুলিশ, সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, গণমাধ্যম এবং শ্রম অধিকারসহ গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সংস্কারের প্রস্তাব করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
 
সেপ্টেম্বরে ঘোষিত ছয়টি কমিশনকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের প্রস্তাব জমা দিতে হবে। তবে, সেই প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা করতে, তাদের জন্য রাজনৈতিক মতৈক্য চাওয়া এবং সেগুলো বাস্তবায়ন করতে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। 
  
প্রতিবেদন মতে, নির্বাচন বিলম্বিত হলে দেশে রাজনৈতিক শূন্যতা দীর্ঘায়িত হবে এবং আওয়ামী লীগ হারানো রাজনৈতিক স্থান ফিরে পাওয়ার সুযোগ পাবে বলে মনে করেন মির্জা ফখরুল। 
 
প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ বলেন, পতিত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের সমর্থক গোষ্ঠী আছে। তারা অনেক বড়, পুরনো একটি রাজনৈতিক দল। তাই এখানে তাদের সমর্থন আছে। তারা এখানে একত্রিত হওয়ার এবং সমস্যা তৈরি করার জন্য সময় পাবে (নির্বাচন বিলম্বিত হলে)।
 
বাংলাদেশের নির্বাচনী আইনে সরকারকে একটি সার্চ কমিটি গঠন করতে হবে, যা নির্বাচন কমিশনের সদস্য বাছাই করবে। অন্তর্বর্তী সরকার সম্প্রতি ঘোষণা করেছে যে, তারা বিদ্যমান আইন অনুসরণ করবে। কিন্তু এ ধরনের কমিটি গঠনের তারিখ দেয়নি। 
 
অন্তর্বর্তী সরকারের ধীরগতির অগ্রগতির পক্ষ নিয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, অনুগ্রহ করে বোঝার চেষ্টা করুন, আমরা কোনো রাজনৈতিক শক্তি নই এবং প্রথমবারের মতো আমরা একটি গ্রুপ হয়ে কাজ করছি।

গত মাসের শেষের দিকে ঢাকায় নিজের সরকারি বাসভবনে ভয়েস অব আমেরিকাকে তিনি বলেন, আমাদের প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা নেই। কিন্তু আমাদের প্রতিশ্রুতি আছে, আমাদের পরিশ্রমী মনোভাব আছে, আমাদের সততা আছে।
 
বিশ্লেষকরা বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা হলো- সহায়ক নিরাপত্তা এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থার অভাব। কারণ, যা আছে তার বেশিরভাগই শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের। এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান বলেন, ‘সরকার আইন প্রয়োগকারী ও আমলাতন্ত্রের ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই কাজ করছে।’
 
প্রতিবেদনে বলা হয়, আওয়ামী লীগের ‘অবশিষ্টাংশের ব্যবস্থা’ থেকে মুক্তি পেতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাজধানী ঢাকার ভেতরে ও বাইরে পুলিশ কর্মকর্তা এবং আমলাদের বদলি ও পুনর্নিয়োগ করছে। বাংলাদেশের জন্য সামনের পথ নির্ধারণ এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য, ইউনূস সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়াচ্ছে। তবে আওয়ামী লীগকে এখন পর্যন্ত আলোচনার বাইরে রাখা হয়েছে।
  
এ নিয়ে নির্বাচনী সংস্কার কমিশনের একজন সদস্য জাহেদ উর রহমান বলেন, তাদের (আওয়ামী লীগকে) রাজনৈতিক জায়গা দেয়া উচিত। তাদের রাজনীতি করার অধিকার দেয়া উচিত এবং ভবিষ্যতে নির্বাচনে অংশ নেয়ারও সুযোগ দেয়া উচিত। এখানে আমি একমত।
 
তবে অতি শিগগিরই আওয়ামী লীগকে আলোচনার টেবিলে আনলে এর তীব্র প্রতিক্রিয়া হতে পারে বলেও সতর্ক করেন তিনি। বলেন, ‘আমি মনে করি, আওয়ামী লীগকে সংস্কারের (আলোচনা) জন্য ডাকলে সমাজে কিছু তীব্র প্রতিক্রিয়া হবে।’
 
এদিকে, আওয়ামী লীগও অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বসতে আগ্রহী নয় বলে জানিয়েছেন দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী।
 
তিনি বলেন, এই সরকার (অন্তর্বর্তী) সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক। আমরা যদি তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, সারাদেশে বিক্ষোভ দেখাই; তাহলে এই সরকার টিকবে না।


সর্বশেষ সংবাদ