ধরাছোঁয়ার বাইরে মূলহোতারা

স্কুলে নিয়োগ-এমপিওভুক্তির নামে শতকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য

ডা. মুনসুর রহমান
ডা. মুনসুর রহমান  © ফাইল ছবি

স্কুলে নিয়োগ, এমপিওভুক্তি, পদোন্নতিসহ অনৈতিকভাবে প্রায় শতকোটি টাকা আয় করেছেন রাজশাহীর পুঠিয়া-দুর্গাপুর আসনে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ডা. মুনসুর রহমান। তবে ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন মুনসুরের তিন সহযোগী। 

সুত্র জানায়, রাজশাহী-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ডা. মুনসুর রহমান স্কুল-কলেজের নিয়োগ বাণিজ্য, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তসহ পদোন্নতির কথা বলে দু’হাতে কামিয়েছেন কাড়ি কাড়ি টাকা। খাস পুকুর ইজারা, টিআর কাবিখা কাবিটাসহ বিভিন্ন রকম উন্নয়নমূলক প্রকল্পে নামমাত্র কাজ করে শতকোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ আছে মুনসুরের বিরুদ্ধে। তাকে এ কাজে সহযোগিতা করতেন দূর্গাপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য, প্রভাষক আমিনুল ইসলাম (টুলু), দূর্গাপুর উপজেলার আড়ইল উচ্চ-বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম, ও পুঠিয়া উপজেলার শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের বাগপাড়া গ্রামের আমজাদ হোসেন।

জানা যায়, পুঠিয়া-দূর্গাপুরের যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়নি সেগুলো এমপিওভুক্ত করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতিষ্ঠান থেকে মোটা অংকের অর্থ আদায় করতেন মুনসুরের তিন সহযোগী। পুঠিয়ার সাধনপুর হাইস্কুল এন্ড কলেজ এমপিও করে দেওয়ার কথা বলে ২০ লাখ টাকা ও সাধনপুর পঙ্গু শিশু নিকেতন ডিগ্রী কলেজ এমপিও করার নামে নিয়েছে ১২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় মুনসুর সিন্ডিকেট। 

সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে সাধনপুর পঙ্গু শিশু নিকেতন ডিগ্রী কলেজে ৪টি নিয়োগ হতে ৪০ লাখ টাকা, সাধনপুর পঙ্গু শিশু নিকেতন হাইস্কুল হতে ৩২ লাখ, অমৃতপাড়া দাখিল মাদ্রাসা ৩টি নিয়োগ থেকে ২৪ লাখ, সাতবাড়িয়া দাখিল মাদ্রসার ৩টি নিয়োগে ২০ লাখ, সাতবাড়িয়া হাইস্কুলে ৩টি নিয়োগ হতে ২১ লক্ষ টাকা,পচামাড়িয়া ডিগ্রী কলেজে ৪টি নিয়োগে ২২ লাখ,পচামারিয়া হাইস্কুলে ৪টি নিয়োগে ৪৮ লাখ, তেঁতুলিয়া হাইস্কুলে ৩টি নিয়োগে ২০ লাখ, দূর্গাপুর ডিগ্রী কলেজের ৩য় শ্রেণী ও ৪র্থ শ্রেণী মিলে ৯টি নিয়োগে ৬০ লাখ, দূর্গাপুর উপজেলার কাঠালবাড়িয়া স্কুল এন্ড কলেজ ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর ৩ নিয়োগে ১৫  টাকা নিয়েছেন। এছাড়াও উপজেলার সরকারি বরাদ্দকৃত খাস পুকুর, মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দীর, এমনকি গোরস্তান সংস্কারেরও ৩০ ভাগ টাকা দিতেন তিন সহযোগী।

এসব বিষয়ে কথা বলতে সাবেক এমপি মুনসুর রহমানের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে কল করা হলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকার পতনের পর তারা আত্মগোপনে চলে যান। ফলে তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে সাবেক সংসদ মুনসুরের দুর্নীতি নিয়ে আলোচনা শুরুর পর স্কটল্যান্ড প্রবাসী তাঁর মেয়ে ডাঃ শারমিন আফরিন তৃষা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘আমি ও আমার পরিবারের সদস্যরা আইনের প্রতি সবসময়ই শ্রদ্ধাশীল। আপনারা আমার ও আমার পরিবারের অর্থ সম্পদের সঠিক তথ্য চাইলে আমরা অবশ্যই দিব। তবে তাঁর আগে আমার বাবা এমপি থাকা অবস্থায় যারা তাঁর নাম ব্যবহার করে প্রকৃত ভাবে নিয়োগ বাণিজ্য ও দখল বাণিজ্য করেছে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।’


সর্বশেষ সংবাদ