মহালয়ার পুণ্য তিথিতে দেবীপক্ষের শুভসূচনা

মহালয়া আজ
মহালয়া আজ  © সংগৃহীত

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের পুণ্যলগ্ন, শুভ মহালয়া আজ বুধবার (২ অক্টোবর)।কৃষ্ণপক্ষ বা পিতৃপক্ষের অবসান এবং শুক্লপক্ষ বা দেবীপক্ষের সূচনায় অমাবস্যার একটি নির্দিষ্ট ক্ষণকে সনাতন ধর্মে মহালয়া বলা হয়। এ পুণ্য তিথিতে যারা পিতৃ-মাতৃহীন তারা তাদের পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে পিতৃত্ব অর্পণ করে থাকে। তাদের আত্মার শান্তি কামনায় অঞ্জলি প্রদান করে থাকে।

সনাতন ধর্ম অনুসারে এই দিনে প্রয়াত আত্মাদের মর্ত্যে পাঠিয়ে দেয়া হয়। প্রয়াত আত্মার যে সমাবেশ হয় তাকে মহালয়া বলা হয়। মহালয় থেকে মহালয়া। মহালয়ার আরেকটি তাৎপর্য হল পুরাণমতে, এদিন দুর্গতিনাশিনী দেবী দূর্গার আবির্ভাব ঘটে, এ দিন থেকেই শুরু হয় দূর্গাপুজার দিন গণনা। পিতৃপক্ষের শেষে শুভসূচনা হয় দেবীপক্ষের। মহালয়া মানেই আর ৬ দিনের প্রতীক্ষা মায়ের পুজার। আর এই দিনেই দেবীর চক্ষুদান করা হয়।

মহালয়ার বিশেষ তাৎপর্য হল শ্রী শ্রী চন্ডীপাঠের মধ্য দিয়ে দেবী দূর্গার আবাহন করা। আর এই “চন্ডী”তেই আছে মহামায়া দেবী দূর্গার সৃষ্টির বর্ণনা। তাই বলা যায় শারদীয় দূর্গাপুজার একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো এই মহালয়া।

আগামী ৮ অক্টোবর থেকে পঞ্চমীতে দেবী দূর্গার বোধনের মাধ্যমে দূর্গাপুজা শুরু হলেও মূলত আজ থেকেই পুজার্থীরা দূর্গাপুজার আগমনধ্বনি শুনতে পাবেন। দূর্গাপুজার এই সূচনার দিনটি সারাদেশে বেশ আড়ম্বরের সঙ্গে উদযাপিত হয়। ভোরে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, জাতীয় শিব মন্দির, স্বামীবাগ লোকনাথ মন্দিরসহ দেশের অন্যান্য মন্দিরেও এ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ভোর থেকেই ছিল শ্রীশ্রী চণ্ডীপাঠের আয়োজন। 

১২ অক্টোবর বিজয়া দশমীর প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হবে এবারের দুর্গোৎসবের। এবার সারা দেশে ৩২ হাজার ৬৬৬টি মণ্ডপে দূর্গাপুজা অনুষ্ঠিত হবে। এবার দেবীর দোলায় আগমন (ফল-মড়ক) এবং গজে গমন (ফল- শস্যপূর্ণ বসুন্ধরা)। 

বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে মহিষাসুরমর্দিনী দেবী দূর্গা সমস্ত অশুভ শক্তি বিনাশের প্রতীক রূপে পূজিত। মহামায়া অসীম শক্তির উৎস। পুরাণ মতে, মহালয়ার দিনে, দেবী দূর্গা মহিষাসুর বধের দায়িত্ব পান। শিবের বর অনুযায়ী কোন মানুষ বা দেবতা কখনও মহিষাসুরকে হত্যা করতে পারবে না। ফলত অসীম ক্ষমতাশালী মহিষাসুর দেবতাদের স্বর্গ থেকে বিতারিত করে এবং বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের অধীশ্বর হতে চায়।

ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব ত্রয়ী সন্মিলিত ভাবে “মহামায়া” এর রূপে অমোঘ নারীশক্তি সৃষ্টি করলেন এবং দেবতাদের দশটি অস্ত্রে সুসজ্জিত সিংহবাহিনী দেবী দুর্গা নয় দিনব্যাপি যুদ্ধে মহিষাসুরকে পরাজিত ও হত্যা করে দেবতাদের স্বর্গ ফিরিয়ে দেয়।

মহালয়ার পরদিনই নবরাত্রি উৎসবের সূচনা হয়। এই দিনেই অনেক মন্দিরে দূর্গার মূর্তিতে চোখ আঁকা হয়। রামায়ণ অনুসারে, রাবণ বসন্তকালে দেবী দূর্গার পুজা শুরু করেন, যা বর্তমানে বাসন্তী পুজা নামে পরিচিত। শ্রীরামচন্দ্র পরবর্তীকালে শরৎকালে দূর্গাপুজার আয়োজন করেন, যা অকালবোধন নামে পরিচিত।

এরপর থেকেই যুগ যুগ ধরে শারদীয়া দুর্গোৎসবই চলে আসছে। আগে রাজবাড়ি কিংবা জমিদার বাড়িতেই দূর্গাপুজা হত। রথের দিন কাঠামো পুজা হত এবং মহাসপ্তমীর দিন নবপত্রিকা প্রবেশের পর দেবীর চক্ষুদান পর্ব হত। যেহেতু মহালয়ার দিন দেবীপক্ষের সূচনা হয়, তাই পরবর্তীকালে মহালয়ার দিনই প্রতিমার চক্ষু আঁকার চল শুরু হয়।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence