দ্বন্দ্ব উসকে দেয়ার চেষ্টায় আওয়ামী লীগ

দ্বন্দ্ব উসকে দেয়ার চেষ্টায় আওয়ামী লীগ
দ্বন্দ্ব উসকে দেয়ার চেষ্টায় আওয়ামী লীগ  © সংগৃহীত

জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত ৫ আগস্ট পতন ঘটে শেখ হাসিনার সরকারের। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে দলটি ইতিহাসের স্মরণকালের মহাবিপর্যয়ের মুখে পড়ে। তবে এই বিপর্যয়ের পরও বসে নেই দলটি। অন্তর্বর্তী সরকারকে বিপদে ফেলতে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন দলটির শীর্ষ পর্যায় থেকে। নেতাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগও রাখছেন শীর্ষ নেতৃত্ব। আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় প্রতিবিপ্লবের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারকে হটানোর ছক কষছেন বলে রাজনৈতিক একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

প্রতিবিপ্লবের অংশ হিসেবে দেশের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি ও ইস্যুভিত্তিক ঘটনাকে উসকে দিয়ে ঘৃন্য মিশন চালাচ্ছে দলটি। এ বিষয়ে দেশ-বিদেশে অবস্থানরত দলটির সহযোগী সংগঠনের বাছাই করা কিছু নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করে শেখ হাসিনা তৃণমূল পর্যায়ে উসকানি ছড়িয়ে দিতে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন। দলটির সাজানো এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দেশের অভ্যন্তরে আত্মগোপনে থাকা দলটির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের মাঠপর্যায়ের নেতৃবৃন্দ সক্রিয় রয়েছেন বলে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

আওয়ামী যুবলীগের এক এক নেতা জানান, আওয়ামী লীগকে হটিয়ে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে ছাত্ররা সরকার গঠন করতে পারলেও তারা শান্তিতে নেই। তারা শান্তিতে থাকতে পারবেও না। নানান দাবিদাওয়া ও বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রাজপথে আন্দোলন করছে এবং সামনের দিনগুলোতে এরকম আরো আন্দোলন-কর্মসূচি চলতে থাকবে।

আরও পড়ুন: ভাইরাল হওয়া শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্রটি ভুয়া: আওয়ামী লীগ

যুবলীগের ওই নেতা আরো বলেন, আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ও সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কয়েক স্তরে আওয়ামী সরকারের লোক রয়েছে। তারা এখনো বিভিন্ন মাধ্যমে আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও মন্ত্রীরা আত্মগোপনে থাকলেও বিভিন্ন ইস্যুতে রাজধানীতে আন্দোলন হচ্ছে। তৃণমূল পর্যায়ে সঙ্ঘাত-সংঘর্ষ লেগেই আছে। একসময় দেখা যাবে দেশে গৃহযুদ্ধ লেগে গেছে এবং সেটা সামাল দেয়া এই সরকারের জন্য অনেকটা চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠবে।

দলটির ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা জানান, শেখ হাসিনা ভারতে বসেই দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। এ ছাড়া দেশের অভ্যন্তরে আত্মগোপনে থাকা দলটির একাধিক শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিয়মিত কথা বলে তিনি আপডেট নিচ্ছেন এবং তাদের পরামর্শের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন পরিকল্পনাও সাজাচ্ছেন।

শেখ হাসিনা দেশি-বিদেশি শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে রাজনীতিতে ফিরে আসার চেষ্টা করে যাচ্ছেন অতি কৌশলে বলে ছাত্রলীগের ওই নেতা জানিয়েছেন। 

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের  পরপরই আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপি ও কেন্দ্রীয় নেতাসহ প্রায় সবপর্যায়ের নেতৃবৃন্দ আত্মগোপনে চলে যান। ওই দিন শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে চলে গেলেও দেশের অভ্যন্তরে থাকা ঘনিষ্ঠ কিছু নেতাকর্মী ও সরকারি-বেসরকারি উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।

রাজনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, শেখ হাসিনার দলীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগের ঘটনায় টানা সাড়ে ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা দলটির সুবিধাভোগী সরকারি-বেসরকারি উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা উৎসাহিত হচ্ছেন এবং তারা মনে করছেন আওয়ামী লীগ আবারো ক্ষমতায় আসবে। ফলে ৫ আগস্টের ৫ দিন পরই ১০ আগস্ট জুডিশিয়ারি ক্যু ও ১৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের প্রতিবিপ্লবের বিষয়টি জোরালো আলোচনায় ছিল। কিন্ত প্রতিবিপ্লব দুটি সফল হয়নি।

আবার ৫ আগস্টের পর আনসারদের সচিবালয় ঘেরাওয়ের মাধ্যমে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা ও ছাত্রদের ওপর মারাত্মক হামলা, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে বাসাবাড়িতে ডাকাতি করে দুবৃত্তদের অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি সবই ছিল অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা। কিছুদিন আগে বিভিন্ন স্থানে মাজার ভাঙচুর করেও একটা ইস্যু তৈরি করতে চেয়েছিল আওয়ামী লীগ।

আরও পড়ুন: সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুলের বিছানাজুড়ে টাকা, ছবি ভাইরাল

বিগত কয়েক দিনে পোশাক কারখানার শ্রমিকদের উসকানি দিয়েও একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করা হয়েছে। দুই শতাধিক পোশাক কারখানা একযোগে বন্ধ রেখে ও দাবি আদায়ে পোশাক শ্রমিকদের রাজপথে আন্দোলনে নামিয়ে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও শ্রমিক লীগের কিছু নেতা কাজ করে। দেশে একের পর এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হলেও তা যথাযথভাবে সামাল দেয়ার ক্ষেত্রে পুলিশবাহিনীর একটি অংশ নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় থাকে। বিভিন্ন জায়গায় গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাত দেখার পরও তা দমনে কাজ না করে বরং কৌশলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে সঙ্ঘাত জিইয়ে রাখতে স্থানীয় পুলিশের অনেকে ভূমিকা রাখছেন এখনো।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উসকানি দিয়ে শাহবাগে আন্দোলন করেও একটি বিশেষ পরিস্থিতি তৈরির মাধ্যমে সুফল নিতে চেয়েছিল আওয়ামী। কিন্তু কোনো কৌশলেই সুবিধা করতে পারেনি দলটি। দলীয়প্রধানের ভুলের খেসারত পুরো দলকেই দিতে হচ্ছে এবং রাজনীতিতে ফেরা অনেকটাই কঠিন হয়ে উঠেছে দলীয় নেতাকর্মীদের জন্য। 

দলীয় নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা রাখতে সহযোগী সংগঠনের কিছু নেতাকে টার্গেট করে তাদের সঙ্গে আলোচনা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও ও অডিও বার্তা ছাড়ছেন শেখ হাসিনা। সম্প্রতি বিদেশে অবস্থান করা সহযোগী সংগঠনের এক নেতার সঙ্গে একটি অডিও বার্তাও প্রকাশ পায়। ওই অডিও বার্তায় শেখ হাসিনা বলেন, তিনি বাংলাদেশের কাছে আছেন, যেকোনো সময় চট করে যাতে ঢুকে পড়তে পারেন। 

শেখ হাসিনার ওই বার্তাটি রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি করলেও আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের কিছু ত্যাগী নেতাকর্মীর মধ্যে প্রভাব বিস্তার করে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তারা এখনো অন্তর্বর্তী সরকারের বিপক্ষে নানান বিষোদগার করছেন।

দলীয় অনেক নেতা এখনো শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী রয়েছেন বলে বিভিন্ন স্থানে বলার চেষ্টা করছেন। শেখ হাসিনার অডিও ভিডিও বার্তায় উৎসাহিত হয়েই তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা এমনটি করছেন এবং বিএনপির নেতাকর্মী ও ছাত্রদের ওপর চড়াও হচ্ছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।


সর্বশেষ সংবাদ