ঢাবিতে কি শুধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবই ‘নোটেবল অ্যালামনাই’?

ঢাবির ওয়েবসাইটে নোটেবল অ্যালামনাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
ঢাবির ওয়েবসাইটে নোটেবল অ্যালামনাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান  © সংগৃহীত

যুগ যুগ ধরে অসংখ্য কৃতী শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) থেকে। এখান থেকে পড়াশোনা শেষ করে দেশে-বিদেশে নানা ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন, নিজ নামে খ্যাত হয়েছেন, এমন তালিকা দীর্ঘ। গুণী ও কৃতী সেসব মানুষকে স্মরণীয় রাখতে নোটেবল অ্যালামনাই হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে তালিকাভুক্ত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে বিভিন্ন ফ্যাকাল্টির বিভাগভিত্তিক নোটেবল অ্যালামনাই লিস্টে অনেকের নাম থাকলেও কেন্দ্রীয়ভাবে ‘লিস্ট অব নোটেবল অ্যালামনাই’ হিসেবে নাম রয়েছে শুধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের।

গত ১৫ বছর ধরে থাকা ফ্যাসিবাদী সরকারের অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যতের একটাই ভাবনা ছিল শেখ মুজিবুর রহমান। তার বাইরে ঢাবির যে অতীত ঐতিহ্য, আন্দোলন, সংগ্রাম, সেগুলো ধর্তব্যের মধ্যে আনা হয়নিশামসুজ্জামান দুদু, আহ্বায়ক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা এত এত কৃতী ও গুণী মানুষ থাকলেও, ওয়েবসাইটে কেন শুধু বঙ্গবন্ধুর নাম দেখানো হচ্ছে—এমন প্রশ্ন উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন, শেখ মুজিবের নাম থাকবে, সঙ্গে অন্যদের নামও থাকতে হবে।

সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন অনেকে। বিষয়টি নিয়ে তারা সরবও হয়েছেন নানা মাধ্যমে। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন্স সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম তার ফেসবুক ওয়ালে গত ২৮ আগস্ট একটি পোস্ট করেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট দেখে একটি তথ্য জেনেছি, আমাদের মাত্র একজন নোটেবল অ্যালামনাই রয়েছেন।’ পোস্টের কমেন্টে তিনি ‘লিস্ট অব নোটেবল অ্যালামনাই’য়ের লিংকও শেয়ার করেছেন।

আরও পড়ুন: উত্তাল বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, চলছে ‘উত্তরবঙ্গ ব্লকেড’ কর্মসূচি

ঢাবির ওয়েবসাইট নিয়ে আমি হতাশ, এটা সবচেয়ে বাজে একটা ওয়েবসাইট—নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান উচ্চশিক্ষালয়টির শিক্ষার্থী আরিফ রহমান।

তিনি জানান, এখানে আপডেটেড কোনো তথ্যই পাওয়া যায় না। সম্প্রতি কয়েকটি ইনস্টিটিউটের পরিচালক পরিবর্তন হয়েছে। আমি ওয়েবসাইটে ঢুকে দেখি আগের জনই আছেন। বর্তমান যুগে ওয়েবসাইট একটি প্রয়োজনীয় তথ্যভান্ডার। সেখানে হালনাগাদ তথ্য না থাকলে দেখানোর জন্য ওয়েবসাইট বানানোর কী দরকার?

আমরা ওয়েবসাইটে পরিবর্তন-পরিমার্জন আনব। তখন আমরা নোটেবল অ্যালামনাইদের মধ্যে যারা যারা আছেন, তাদের নোটগুলো নিয়ে, তাদের সম্পর্কে আরও তথ্য নিয়ে কাজ করবঅধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা, উপ-উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

ওয়েবসাইটে যদি শুধু শেখ মুজিবের নাম থাকে, তাহলে সেটা আওয়ামী দোসরদের পরিকল্পিত ছিল, মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী মনির। তার মতে, নোটেবল অ্যালামনাই হিসেবে শেখ মুজিব অবশ্যই থাকবেন, তাতে কোনো আপত্তি নেই, সঙ্গে অন্যরাও থাকবেন। কোনো একক ব্যক্তি তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী নন। এটি দ্রুত সংস্কার করা দরকার।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক কমিটির প্রধান ও বিএনপি নেতা শামসুজ্জামান দুদু দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা গত ১৫ বছর একটি ফ্যাসিবাদী সরকার ক্ষমতায় ছিল। সেই সরকারের অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যতের একটাই ভাবনা ছিল শেখ মুজিবুর রহমান। তার বাইরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে অতীত ঐতিহ্য, আন্দোলন, সংগ্রাম, সেগুলো ধর্তব্যের মধ্যে আনা হয়নি। এখন যে পরিবর্তিত পরিস্থিতির মধ্যে চলছে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে শুরু করে সব বিষয়ে একক ব্যক্তির বিষয় থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

আরও পড়ুন: স্থানীয়দের চাঁদাবাজি ও হত্যার হুমকি, অনুপস্থিত পবিপ্রবির চিকিৎসক

শামসুজ্জামান বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অনেক কৃতী মানুষ জড়িত। অনেক সমৃদ্ধ। এ জন্য পরিবর্তন আনব। শুধু পরিবর্তন নয়, যেটা সত্য, সেটা সামনে আসবে। ওয়েবসাইটে নোটেবল অ্যালামনাই আরও কীর্তিমানরা যুক্ত হলে এ ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর নাম কি থাকছে নাকি বাদ পড়বে—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যাদের নাম থাকার দরকার, তাদের নামই থাকবে। এখানে আলাদা করে কারও নাম-পরিচয় আসবে না। তবে তিনিও অবশ্যই থাকবেন। ভালো-মন্দ অ্যালামনাই যারা আছেন তারা আলোচনা করবেন, কিন্তু গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভিন্নমতের অবকাশ আছে। আমি কাউকে পছন্দ করি না বলে তিনি কোথাও থাকবেন না, এটা তো গণতন্ত্র হতে পারে না।

এ বিষয়ে জানতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খানকে কয়েকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো খুলবে, ক্লাসগুলো শুরু হবে—বিশ্ববিদ্যালয় সচল হবে, তখন বিভিন্ন কাজে হাত দেব। এরপর শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক কাজ শুরু করব। এর মধ্যে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া, বিভিন্ন জায়গায় খাবারের মানের মধ্যে ইমপ্রুভমেন্ট আনা, মেডিক্যাল সেন্টারে কাজ করা ইত্যাদি রয়েছে।

আরও পড়ুন: সৌদিতে মাস্টার্স-পিএইচডিতে ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপ, সঙ্গে ৩৬ লাখ টাকা

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা শুধু ওনার বিষয়টাই ভাবছি না, ওয়েবসাইটে পরিবর্তন-পরিমার্জন আনব। তখন আমরা নোটেবল অ্যালামনাইদের মধ্যে যারা যারা আছেন, তাদের নোটগুলো নিয়ে, তাদের সম্পর্কে আরও তথ্য নিয়ে সেসব জায়গায় কাজ করব। এ বিষয়টা যে আমাদের নজর এড়িয়ে গেছে তা নয়, আমরা দেখেছি।

অধ্যাপক ড. সায়মা হক বলেন, আমরা সব কাজ শেষ করে ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট নিয়ে একদিন বসব। এ ক্ষেত্রে যারা অভিজ্ঞ আছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলে কন্টেন্টগুলো ঠিক করা, কী কী জিনিস বাদ পড়ে যাচ্ছে, শিক্ষার্থীদের কী কী বাদ পড়ল, বিভাগ ও হল পর্যায়ে সব তথ্য নিয়ে আমরা একটি সুন্দর ওয়েবসাইট তৈরি করব। শিক্ষার্থীদের কাজকর্ম ও অর্জন নিয়েও আমার কাজ করব। ওই জায়গাগুলোও হাইলাইটেড হওয়া দরকার। আমাদের শিক্ষার্থীরা কী করছে, তারা অ্যাকাডেমিক, খেলাধুলা, গানবাজনাসহ সব ক্ষেত্রে তাদের কাজও হাইলাইট হওয়া দরকার।

যখন ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্টের কাজ শুরু হবে, তখন নোটেবল অ্যালামনাই হিসেবে বঙ্গবন্ধুর নাম রাখা না রাখার বিষয়ে কোনো প্রশ্ন উঠবে কি না, উঠলে সে ক্ষেত্রে কী হবে, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, নোটেবল অ্যালামনাইদের বিষয়ে তাদের ইতিহাস দেখার দরকার আছে। তারা কারা, কীভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জড়িত, আলাপ-আলোচনা করে কতজনের নাম থাকবে, এ নিয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। নোটেবল অ্যালামনাইয়ের তালিকা অনেক বড়। তবে আমরা কি ১০০ জনকে রাখব নাকি ৫০ জনকে নেব, এটা নির্ভর করে। তবে আমরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে চাই।


সর্বশেষ সংবাদ