যেভাবে ভারতে পালিয়েছেন আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকেরা

সহিংসতা শুরু হওয়ার পরে অতি সতর্ক রয়েছে বিএসএফ
সহিংসতা শুরু হওয়ার পরে অতি সতর্ক রয়েছে বিএসএফ  © সংগৃহীত

‘তোদের নেত্রী পালিয়ে গেছে, তুই সরে যা এখনই’ সোমবার বিকেলেএই ব্যক্তির মোবাইলে তার এক বন্ধু এভাবেই সাবধান করে দিয়েছিল। তিনি বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের আড়াই হাজার এলাকার বাসিন্দা এবং স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা। তিনি তখন বাড়ি থেকে সামান্য দূরে বাজারে গিয়েছিলেন। তার জানা ছিল না যে তাদের নেত্রী, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন।

নাম প্রকাশ না করতে চাওয়া ওই ছাত্রলীগ নেতার মতো আরও অনেক আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীই ভারতে চলে এসেছেন বা আসার চেষ্টা করছেন। বিষয়গুলো নিয়ে অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্রতিবেদন পকাশ করেছে বিবিসি। বৈধ পথে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত পেরতে গেলে সমস্যায় পড়তে পারেন, এই আশঙ্কায় তারা অবৈধ পথেও ভারতে এসেছেন।

হামলা হতে পারে তাদের ওপরে, এরকম আশঙ্কা করে যারা ভারতে চলে এসেছেন অথবা আসার চেষ্টা করছেন, তাদের মধ্যে তিনজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়। তাদের তথ্য অনুযায়ী আরও বেশ কয়েকজনের সন্ধান পাওয়া গেলেও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।

‘সব লুঠ হয়ে গেছে’
নারায়ণগঞ্জের ওই ছাত্রলীগ কর্মী বন্ধুর ফোন পেয়েই বাড়ি থেকে দূরে সরে যান। পরে জানতে পারেন যে সোমবার বিকেল পাঁচটা নাগাদ তাদের বাড়িতে হামলা চালায় সশস্ত্র দুষ্কৃতিরা। ‘ভাঙচুর করেছে বাড়ি ঘর, সব লুঠ করে নিয়ে গেছে। আমার বাবা-মাকেও মারধর করেছে। আমি তখন থেকেই ঘর ছাড়া। পরে বাবা-মাকেও সরিয়ে এনেছি। কিন্তু তাদের সঙ্গে এখনও দেখা হয় নি আমার। ওদের এক জায়গায় রেখেছি, আমি অন্য এলাকায় আছি’ জানাচ্ছিলেন ওই ব্যক্তি।

তিনি বলছিলেন, ‘আমার পাসপোর্ট ছিল, সেটাও লুঠ করে নিয়ে গেছে শুনেছি। এখন যে কোনভাবে আমি ভারতে চলে যাওয়ার চেষ্টা করছি। শুনছি সীমান্তে ভীষণ কড়াকড়ি হচ্ছে, তাই দালাল ধরেও যে চলে যেতে পারব, সেই নিশ্চয়তা নেই।’ নারায়ণগঞ্জের ওই ছাত্রলীগ নেতা দালালের সাহায্যে সীমান্ত পেরনোর যখন চেষ্টা করছেন, ততক্ষণে দালালের মাধ্যমে ভারতে চলে এসেছেন বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার এক স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী।

সাতক্ষীরার শ্যামনগরের বাসিন্দা ওই ব্যক্তি ভারতে এসে পৌছিয়েছেন বুধবার সকালে। তাদের গ্রামেও সোমবারের পরে হামলা হয়েছে বলে তিনি দাবি করছেন।  ‘আমরা আওয়ামী লীগ করতাম, সেজন্যই আমাদের টার্গেট করেছিল ওরা। বাড়ি ঘর ভেঙ্গে দিয়েছে, গলায় দা ধরে বলছে টাকা দে নাহলে কেটে ফেলব। এই অবস্থায় পালিয়ে এসেছি কোনও ভাবে। স্ত্রী-পুত্র সব রেখে এসেছি। হয়ত আমাকে না পেলে ওরা আর হামলা করবে না’ বলছিলেন ওই আওয়ামী লীগ কর্মী।

তিনি বলছিলেন, ‘পাসপোর্ট, ভারতীয় ভিসা সবই ছিল আমার। চেষ্টা করেছিলাম চেকপোস্ট দিয়ে সীমান্ত পেরতে। কিন্তু শুনতে পেলাম সেখানে নাকি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী সন্দেহ হলেই বাড়তি চেকিং করছে। তাই চুরি করে নদী পেরিয়ে ভারতে এসেছি।’

বৈধ পথেই ভারতে
তবে এই দুর্ভোগ পোয়াতে হয়নি দিনাজপুরের বাসিন্দা এক আওয়ামী লীগ কর্মীকে। শেখ হাসিনা দেশ ছেড়েছেন, এই খবর পেয়েই তিনি বৈধ পথেই সীমান্ত পেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলীয় একটি শহরে নিজের আত্মীয়র কাছে চলে এসেছেন।

‘আমি মাস কয়েক আগেও ভিসা নিয়ে ভারতে এসেছিলাম। সেই ভিসার বৈধতা এখনও আছে। শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন, এই অবস্থায় হামলা হতে পারে, এরকম একটা আশঙ্কা করেই আমি চলে আসি। ভিসা থাকায় আমার এই সুবিধাটা হয়েছে’ বলছিলেন ওই আওয়ামী লীগ কর্মী।

তবে তার বাড়িতে যে কেউ হামলা করে নি, সেটা নিশ্চিত করেছেন দিনাজপুরের বাসিন্দা ওই ব্যক্তি। পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগও রাখছেন ওই ব্যক্তি। এটাও জানতে পেরেছেন যে তাদের এলাকায় পরিস্থিতি বেশ স্বাভাবিক হয়েছে এবং স্থানীয়রা আশ্বস্ত করেছেন যে তিনি নিশ্চিন্তে দেশে ফিরতে পারেন। কিন্তু কবে ফিরবেন, সেটা এখনও স্থির করেননি তিনি।

জানা যায় আওয়ামী লীগের অনেক কর্মী-সমর্থকই শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পরে ভারতে প্রবেশ করেছেন – বৈধ বা অবৈধ উপায়। তবে অনেক মানুষ বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে বা অবৈধ পথে ভারতে চলে আসছেন, এরকম তথ্য ঠিক নয় বলে দাবি করেছেন দক্ষিণ বঙ্গ সীমান্ত অঞ্চলের এক সিনিয়র বিএসএফ কর্মকর্তা।

বিএসএফ বলছে বাংলাদেশের পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার পর থেকে গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই অতি সতর্কতা রয়েছে সীমান্তে। এর মধ্যেই বাহিনীর নতুন মহাপরিচালক পশ্চিমবঙ্গে এসেছিলেন। অনেকগুলি সীমান্ত এলাকায় তিনি সফর করেছেন, বাড়তি সতর্কতার কথা বারবার তিনি নিজের বাহিনীকে বলেছেন।

অন্যদিকে সাতক্ষীরার শ্যামনগরের যে স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী ভারতে চলে এসেছেন, তিনি বলছেন যে কাউকে যদি আওয়ামী লীগের নেতা বা কর্মী বলে সন্দেহ হয় বিজিবির, তাদের এলাকায় খোঁজ নেওয়া হচ্ছে তার পরিচয় সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়ার জন্য। সীমান্তে কড়াকড়ির কারণে তিনি বলেন, ‘চুরি করে নদী পেরিয়ে ইন্ডিয়ায় এসেছি।‘

‘নেত্রী তো চলে গেলেন, আমাদের কী হবে?’
যে তিনজন আওয়ামী লীগ কর্মী-সমর্থকের সঙ্গে বিবিসি কথা বলতে পেরেছে, তাদের তিনজনই বলছেন যে শেখ হাসিনা বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে গেছেন নিজের প্রাণ সংশয় হতে পারে এই ভেবে।

‘কিন্তু তিনি এটা ভাবলেন না যে এরপরে হাজার হাজার নেতা-কর্মীর কী হবে। আমাদের পাসপোর্ট-ভিসা আছে কী না, আমাদের ওপরে হামলা হলে কী ভাবে বাঁচব, সে কথা তো ভাবা উচিত ছিল নেত্রীর’ বলছিলেন এখনও বাংলাদেশের অভ্যন্তরেই থাকা – ভারতের চলে আসার প্রচেষ্টা চালানো নারায়ণগঞ্জের ওই ছাত্র লীগ নেতা।

একই কথা বলছেন অন্য যে দুজন ভারতে চলে আসতে সমর্থ হয়েছেন, তারাও। ওই ছাত্র লীগ নেতা, যিনি সর্বতোভাবে চেষ্টা করছেন ভারতে আসার, তিনি এটাও বলছেন, ‘একটু যদি আঁচ পেতাম যে কী হতে চলেছে সোমবার দুপুরের পরে, তাহলে এইভাবে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে থাকতে হত না। সময় থাকতেই ভারতে চলে যেতে পারতাম।’


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence