আন্দোলনে বুলেটবিদ্ধ, চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে ঋণের কবলে ক্ষতিগ্রস্তরা

বুলেটবিদ্ধ মো. মামুন
বুলেটবিদ্ধ মো. মামুন  © টিডিসি ফটো

মো. মামুন গত ১৯ জুলাই রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় কোটা বিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে পুলিশের গুলিতে মারাত্মক আহত হন। মুহূর্তেই পেট থেকে বেরিয়ে আসে নাড়িভুঁড়ি। অন্য আরেক আন্দোলনকারীর সহায়তায় প্রথমে বাড্ডার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে গেলেও বুলেটবিদ্ধ হওয়ায় সেখানে চিকিৎসা পায়নি মামুন। পরে পরিবারের সহায়তায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসলে আইসিউতে ভর্তি নেয় ডাক্তার। এরপর প্রায় ১১ দিন জ্ঞান ফেরেনি মামুনের। 

পেশায় দর্জি মামুনের মাসিক আয় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। যা দিয়ে পরিবার মোটমুটি চলত। স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ের ভরণপোষণের দায়িত্ব মামুনের কাঁধে। কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ১ লক্ষ টাকার উপরে ব্যয় হয়েছে। চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে ঋণ করেছেন ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু এখন প্রায় অসহায় হয়ে পড়েছেন আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত এই ব্যক্তি। 

মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার বাসিন্দা মামুন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, ‘এই মুহূর্তে খরচ বহন করাটা আমার জন্য সব থেকে বড় বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছে। নিজের সঞ্চয় এবং পরিচিত আত্মীয়-প্রতিবেশীদের সহায়তার বাইরে যে টাকা ঋণ হয়েছে সেটা আমার পক্ষে পরিশোধ করা এক প্রকার অসম্ভব।’ 

কথা বলার এক পর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মামুন। তিনি আরও জানান, ‘আসলে মানুষের উপর সরকারের অত্যাচার আর নিপীড়ন দেখে নিজেকে সামলে রাখতে পারিনি। শিক্ষার্থীদের সাথে আন্দোলনে অংশ নেই। ‍কিন্তু এত বড় বিপদের মুখে পড়ব ভাবতে পারিনি। আমি বেঁচে আছি এটাই আমার কাছে একপ্রকার বিস্ময়। কিন্তু এই মুহূর্তে বেঁচে থেকেও কষ্ট ভোগ করতে হচ্ছে। দেশ স্বাধীন হয়েছে এটা আমার অন্তরের শান্তি। কিন্তু সরকারের কাছে অনুরোধ থাকবে আমাদের মতো অসহায়দের যেন অবহেলা করা না হয়।’ 

এদিকে গত ০১ আগস্ট দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসে প্রকাশিত ঢামেকের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসারত নাম পরিচয়হীন ব্যক্তির সন্ধান পেয়েছে পরিবার। জানা যায়, ওই ব্যক্তির নাম রাকিব হোসাইন। ওয়ার্কশপে কাজ করা রাকিবের বয়স ২৪ থেকে ২৫ বছর। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শণির আখড়া এলাকায় রাস্তা পার হওয়ার সময় বুলেটবিদ্ধ হন। জ্ঞান ফিরলেও রাকিব এখনও কথা বলতে পারেন না।

কুমিল্লার মুরাদনগর জেলার বাসিন্দা রাকিবের মা মেরি বেগম জানান, ‘ছোটবেলায় ছেলেটাকে রেখে তার বাবা কোথাও চলে যায়। প্রথমে যেদিন খুঁজে না পেয়ে ভেবেছলাম হয়ত মারা গিয়েছে। পরে আপনাদের সকলের সহায়তায় ছেলেকে খুঁজে পাই। এই মুহূর্তে আমি অনেক বেশি অসহায়। একমাত্র ছেলের উপার্জনে আমার পেট চলত। কিন্তু সে হাসপাতালের বেডে শুয়ে। আমার এই অসহায়ত্বের শেষ কবে জানি না। তার চিকিৎসা চালানোর মতো অবস্থাও আমার নাই।’ 

New Project - 2024-08-09T210321-609

বুলেটবিদ্ধ হওয়ার পর ১৫ দিন পর্যন্ত পরিবারের কোন খোঁজ ছিল না রাকিবের

রাকিবের মা মেরি বেগম আরও জানান, গত ২ মাস আগে শখ করে ছেলেকে বিয়ে করান। কিন্তু ছেলের এই অবস্থায় পুত্রবধূকে রাখার বিষয়টিও অনিশ্চিত হয়ে গেছে। মেরি বেগম যোগ করেন, ‘আমার ছেলের জীবনটা শেষ হয়ে গেছে বাবা।’

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে বিক্ষোভ-সংঘাতে নিহতদের সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান এখনো জানা যায়নি। বিভিন্ন হাসপাতাল, মরদেহ নিয়ে আসা ব্যক্তি ও আত্মীয়-স্বজন থেকে পাওয়া সূত্রে অনুযায়ী এ পর্যন্ত দেশজুড়ে প্রায় ৬ শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এখনও বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। আন্দোলন ঘিরে দেশজুড়ে কয়েক হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। হারিয়েছেন শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। সব থেকে বেশি হতাহতের খবর পাওয়া যায় ১৭ থেকে ২১ জুলাইয়ে।

খোঁজ নিয়ে দেখা গিয়েছে আন্দোলনে হতাহতদের বেশিরভাগ নিম্নবিত্ত এবং স্বল্প আয়ের মানুষ। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের ভর্তিকৃত অসংখ্য হতাহত এখনও চিকিৎসা নিচ্ছেন।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence