শিক্ষকদের সাথে দেখা না দিয়ে ডিবি হারুন অপমানজনক আচরণ করেছে

  © সংগৃহীত

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদারের খোঁজ নিতে ডিবি কার্যালয়ে গিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের ১২ শিক্ষকের একটি প্রতিনিধিদল। তবে ‘ব্যস্ততার কারণে’ তাদের সঙ্গে দেখা করেননি ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

আজ শনিবার বিকেল ৪টায় ডিবি কার্যালয়ে যান তারা। সেখানে ২০ মিনিটের মতো তারা অবস্থান করেন। পরে সেখান থেকে ফিরে যান। আজ এক বিবৃতিতে এ ঘটনার বিস্তারিত জানান শিক্ষক নেটওয়ার্ক। 

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, আজ ২৭শে জুলাই, শনিবার আমরা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের প্রতিনিধি হিসেবে ১২ জন শিক্ষক মিন্টো রোডের ডিবি অফিসে যাই।  আমরা গিয়েছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন ছাত্র নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদারের অবস্থা জানার জন্য,  যাদের গতকাল হাসপাতাল থেকে চিকিৎসারত অবস্থায় সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের ইচ্ছার বিরুদ্ধে উঠিয়ে আনা হয়েছে। আমরা যেহেতু তাদের  শিক্ষক, স্বাভাবিকভাবেই আমরা এই শিক্ষার্থীদের নিয়ে উদ্বিগ্ন। তারা কোথায় আছে, কেমন আছে তা জানাটাই ছিলো আমাদের মূল উদ্দেশ্য। 

ডিবি অফিসের ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয় নাই উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, কিন্তু আমাদের ১২ জন শিক্ষকের  কাউকেই ডিবি অফিসের ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয় নাই। রিসিপশন থেকে আমাদের জানানো হয় যে এই বিষয়ে  কথা বলতে গেলে ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের সাথে কথা বলতে হবে এবং শুধুমাত্র তাঁর অনুমতি পেলেই আমরা ভেতরে যেতে পারব। আমাদের এও জানানো হয় যে ডিবি প্রধান অনেকক্ষণ থাকবেন, তাই কোন তাড়া নেই।  বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করবার পর ডিবি প্রধানের অফিস থেকে আমাদের জানানো হয় তিনি আজ আমাদের সাথে  কথা বলতে পারবেন না কারণ তিনি এখন বের হয়ে যাচ্ছেন।  

আরো উল্লেখ করা হয়, ডিবি প্রধান আমাদের সাথে কথা বলবেন না এটা জানার পর আমরা অন্য কোনো অফিসারের সাথে কথা বলার চেষ্টা করি। তারা বলেন কথা বলার সেরকম আর কেউ নেই, কথা বলতে গেলে তার সাথেই কথা বলতে হবে। এরকম একটা গুরুত্বপূর্ণ অফিসে জরুরি বিষয়ে আলাপ করার জন্য দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তি থাকবে না এটা  আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। এর কিছুক্ষণ পরেই ডিবি অফিসের প্রধান ফটকের পাশে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য মারফৎ আমরা জানতে পারি ডিবি প্রধান গাড়ী নিয়ে আমাদের সামনে দিয়েই বের হয়ে গেছেন।   

পুলিশ কর্মকর্তার আচরণ অত্যন্ত অসৌজন্যমূলক এবং অপমানজনক উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়,আমরা ১২ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ডিবি প্রধানের সাথে  আজকে কোন সামাজিক দেখা সাক্ষাৎ করতে যাই নাই। গিয়েছিলাম একটি জরুরী এবং গুরুতর প্রয়োজনে। আমাদের সাথে সাক্ষাৎ না করাটা তাঁর দায়িত্বের গুরুতর অবহেলা বলে আমরা মনে করি। সেই সাথে তাঁর এই  আচরণ অত্যন্ত অসৌজন্যমূলক এবং অপমানজনকও মনে করি। 

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে ডিবি প্রধান সাংবাদিক সম্মেলনে আজকেই এই তিনজন ছাত্রকে ধরে আনার কারণ উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন যে  এই তিনজন ছাত্র নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।  তাঁদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য ডিবি অফিসে নিয়ে আসা হয়েছে। 

আমরা এর আগে কখনো শুনি নি যে হাসপাতাল থেকে উঠিয়ে আহত কাউকে নিরাপত্তা দেয়ার জন্য ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধরে এনে ডিবি অফিসে রাখা হয়।  পত্র পত্রিকার বর্ণনা অনুযায়ী  এই ছাত্রদের নিরাপত্তার নামে জোর  করে নিয়ে আসার সময় পোশাক পরিবর্তন করারও সময় দেয়া হয় নাই। সেই সময়  ছাত্ররা ভয়ে থর থর করে কাঁপছিলো।  

পুরো বিষয়টি কোন ধরনের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য করা হচ্ছে তা সহজেই অনুমেয়। তার উপরে তিনজনের মধ্যে দু'জন ছাত্র, নাহিদ এবং আসিফকে  কিছুদিন আগেও  ধরে নিয়ে গিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে, ইঞ্জেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে বলে পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এখন হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থা থেকে দ্বিতীয়বার ধরে নিয়ে গেলে তাঁদের প্রাণশংকা হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়।  

ডিবি বা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এ ধরনের বল প্রয়োগের তৎপরতা সামগ্রিকভাবেই জনমনে ভীতি সঞ্চার করছে। যা সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টির অন্তরায় বলে আমরা মনে করি।

পুলিশ বা নিরাপত্তা বাহিনীকে আমরা জনগণের সেবক হিসেবে দেখতে চাই। কোন নির্যাতনের হাতিয়ার নয়। তাই আমাদের দাবী অবিলম্বে এই তিনজন ছাত্রকে নিরাপত্তা দেয়ার প্রহসন বন্ধ করে তাঁদের পরিবারের কাছে অথবা তাঁদের নিজেদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী  নিরাপদ স্থানে যেতে দেয়া হোক।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence