ডলার নির্ভরতা কমাতে সঠিক কর্মপরিকল্পনা দরকার: মোমেন

সেমিনারে বক্তব্য রাখছেন ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন
সেমিনারে বক্তব্য রাখছেন ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন  © টিডিসি ফটো

সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন বলেছেন, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের মতো বিশ্বের অন্য দেশগুলোর মধ্যে এরকম যুদ্ধ শুরু হলে যে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে তার চাপ কমানোর প্রস্তুতি থাকা দরকার। সেজন্য ডলারের বিকল্প হিসেবে চীনা মুদ্রা ইউয়ান ও বাংলাদেশি মুদ্রায় বাণিজ্য করার সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত সঠিক কর্মপরিকল্পনা ঠিক করা। 

শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ হলে আয়োজিত ‘ইউয়ান-টাকায় ট্রেড ও বাংলাদেশে ডলার চ্যালেঞ্জ’—শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সেমিনারের আয়োজন করে দেশীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সমন্বয়ে গঠিত গবেষণাভিত্তিক সংগঠন ‘এডুকেশন, রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ’ (ইআরডিএফবি)। 

সঠিক কর্মপরিকল্পনা থাকলে এই ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ স্বল্পকালে কিছুটা চ্যালেঞ্জিং মনে হলেও দীর্ঘকালে তার প্রভাব হবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ হবে জানিয়ে ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের যে অর্জন আমরা তাতে ধাক্কা খেতে চাইনা। সেক্ষেত্রে সঠিক কর্মপরিকল্পনা নিয়ে ডলারের ওপর অধিক নির্ভরশীলতা কমানোর লক্ষ্যে ইউয়ান-টাকায় ট্রেডের চর্চা এখন থেকেই শুরু করা উচিত।

আরও পড়ুন: তরুণ সমাজকে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ হতে হবে: ড. সাজ্জাদ

বিশ্ব অনেকটাই অনিশ্চিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পর পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সুইফট বন্ধ করে দিয়েছিল। এর ফলে বিনিময়ের ক্ষেত্রে বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশও ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এই ধরনের পরিস্থিতি এড়ানোর লক্ষ্য ভারত এবং চীনের মতো বিশ্বের অনেক দেশ ডলার ব্যতীত অন্য মুদ্রায় বিনিময়ের কথা ভাবতে শুরু করে। 

সেমিনারে মূল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) সাবেক উপাচার্য এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটি এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কমিশনার অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান। আলোচনায় তিনি বলেন, বাংলাদেশ গত ৩০ বছরের ইতিহাসে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির একটি দেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্ব বাংলাদেশ বিগত বছরগুলোতে লেনদেন হিসাবে এবং বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে পেরেছে। গত ১২ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নের পিছনে সরকার যে ব্যয় করেছে তা স্বাধীনতার পর ইতিহাসে প্রথম। 

সরকারের এই ব্যয় নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের লেনদেন হিসেবের ভারসাম্য রক্ষায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে জানিয়ে অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান বলেন, পাশাপাশি তা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান তৈরিতে বেশ ভূমিকা রেখে চলেছে। ডলার ব্যতীত হঠাৎ করে ইউয়ান-টাকায় ট্রেডের সিদ্ধান্ত কিছুটা ব্যয়বহুল হতে পারে। তবে সঠিক কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এগুলো ভবিষ্যতে তার সুফল পাওয়া যেতে পারে। সঠিক কর্মপরিকল্পনা ছাড়া এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ অর্থনীতির জন্য কখনো শুভকর হবেনা।

আরও পড়ুন: নির্বাচনে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তিকে জয়ী করব: ড. সাজ্জাদ

সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে দেশের উচ্চশিক্ষার তদারক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লক্ষ্য এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে বাংলাদেশের তরুণ সমাজকে শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞানবিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ করে স্মার্ট নাগরিক সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা। বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য স্মার্ট কর্মসংস্থান তৈরি করার মাধ্যমে স্মার্ট ক্যারিয়ার গড়ে তোলার পরিবেশ তৈরি করা। সেক্ষেত্রে ইউয়ান-টাকায় ট্রেড স্মার্ট নাগরিক সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে নিঃসন্দেহে অনেক গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও জানান তিনি।

অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ইউয়ান-টাকায় ট্রেড ডলারের ওপর অধিক নির্ভরশীলতা কমানোর মাধ্যমে বাংলাদেশে বিদ্যমান ডলার সংকট সমস্যার সমাধান করে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং গতিশীলতা ধরে রাখতে সহায়তা করবে।

সেমিনারে ইআরডিএফবি’র সাধারণ সম্পাদক এবং বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া তাঁর বক্তব্যে বলেন, একক কোনো মুদ্রার ওপর নির্ভরশীলতা কখনোই একটা দেশের অর্থনীতির জন্য সুখকর হতে পারেনা। বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশের মতো ডলারের ওপর অধিক নির্ভরশীলতা বাংলাদেশে বর্তমান ডলার সংকটের জন্য দায়ী। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ডলারের পাশাপাশি অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহে রাখা অনেক জরুরি। সেক্ষেত্রে ইউয়ান-টাকায় ট্রেড বাংলাদেশের সাথে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি চীনের বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরও জোরদার করবে।

আরও পড়ুন: ‘উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে শেখ হাসিনার সরকারের বিকল্প নেই’

সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. সেলিনা আখতার এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. খোন্দকার মোকাদ্দেম হোসেন। সেমিনারের উদ্‌বোধনী বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ‘ইআরডিএফবি’র সিনিয়র সভাপতি এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল জব্বার খাঁন।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence