ভাইরাল হওয়া ভিডিওগুলো নতুন কারিকুলামের নয়

ভাইরাল হওয়া ভিডিও থেকে নেয়া
ভাইরাল হওয়া ভিডিও থেকে নেয়া  © সংগৃহীত

সম্প্রতি নতুন জাতীয় শিক্ষা কারিকুলাম নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে বেশ কয়েকটি ভিডিও। ভিডিওগুলো শেয়ার করে চলছে তুমুল সমালোচনা। যার ফলে নতুন এই কারিকুলাম অনেক অভিভাবকের ভাবনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ভাইরাল হওয়া এসব ভিডিওর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সমালোচিত হয়েছে ‘শ্রেণিকক্ষে একদল নারী-পুরুষের টিলিং টিলিং সাইকেল চলাই, ফেরিওয়ালা যায়’, ‘শ্রেণিকক্ষে একদল নারী-পুরুষের হাঁসের প্যাঁক প্যাঁক ডাক দিতে দিতে হেঁটে চলা’ ‘ব্যাঙ লাফ দিতে দিতে আবৃত্তি করা’, ‘পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীর বিদায় অনুষ্ঠানে গাওয়া গান’ ও ‘মধু-মালতি গানের সঙ্গে শিক্ষক-ছাত্রীদের নাচ’। এসব ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, এগুলো নতুন কারিকুলামের অংশ।

আরও পড়ুন: ‘ব্যাঙের লাফ-হাঁসের ডাক’ দেয়া ভিডিও নিয়ে যা জানাল এনসিটিবি

তবে শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)’ বলছে, এসব ভিডিও স্বার্থান্বেষী একটি গোষ্ঠী নতুন শিক্ষাক্রম সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য পরিবেশন ও ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে জনমনে বিরূপ মনোভাব সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে।

এসব মিথ্যা প্রচারণায় বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়ে প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে একটি সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিও দিয়েছে। আর শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি নতুন কারিকুলামের অংশ নয়— এমন বিষয়ের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে ব্যাপকভাবে মিথ্যাচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন।

টিলিং টিলিং সাইকেল চলাই, ফেরিওয়ালা যায় ভিডিওটি বাংলাদেশে নয়
নতুন কারিকুলাম অংশ বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবচেয়ে আলোচিত এই ভিডিওটিতে ভারতের আসামের শিক্ষক প্রশিক্ষণের। তাতে দেখা যাচ্ছে, একজন ব্যক্তি সাইকেল চালানোর অঙ্গভঙ্গি করে একটি কবিতা আবৃত্তি করছেন এবং তার তালে তালে অন্যান্যরাও তার সাথে আবৃত্তি করছেন।

গত ১৭ নভেম্বর রতন লাল সাহা নামের এক ব্যক্তি ভিডিওটি প্রকাশ করে তার ক্যাপশনে যা লিখেছেন, FLN Training on Poem Poster for oral Language Development (এটি মূলত FLN Training প্রোগ্রামে তার প্রশিক্ষণ দেওয়ার ভিডিও)।

রতন লাল সাহা বাংলাদেশি গণমাধ্যমকে জানান, তিনি আসামের আম্বারি শিশু কল্যাণ এলপি স্কুলের সহকারী শিক্ষক। পাশাপাশি তিনি শিক্ষকদের প্রশিক্ষক হিসেবেও কাজ করেন। বাংলাদেশের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রশিক্ষক হিসেবে তাঁকেই দেখা যাচ্ছে। এটি শিশুদের জন্য ভারত সরকারের জয়ফুল লার্নিং বা আনন্দদায়ক শিক্ষণ কার্যক্রমের এফএলএন ট্রেনিং বা ফান্ডামেন্টাল লিটারেসি অ্যান্ড নিউমেরাসি প্রশিক্ষণের অংশ।

এখানে যে ছড়াটি আবৃত্তি করা হয়েছে, সেটি আসামের প্রথম শ্রেণির অঙ্কুরণ নামের একটি বইয়ে রয়েছে। বইটির ৪২ নম্বর পৃষ্ঠায় ছড়াটি রয়েছে। এ কবিতা রতন লালের মাধ্যমে ২০২২ সালেও আসামে ভাইরাল হয়েছিল। ওই বছরের ১৭ আগস্ট তিনি এ ছড়ার মাধ্যমে পাঠদান দিয়ে ডিস্ট্রিক্ট অ্যাওয়ার্ডও পান।

প্যাঁক প্যাঁক ডাক দিতে দিতে হেঁটে চলা ভিডিওটি প্রাথমিকের গাণিতিক দক্ষতা উন্নয়নের
এই ভিডিওটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা–সমালোচনা হতে দেখা গেছে। তবে এটি নতুন কারিকুলামের প্রশিক্ষণ নয়। জানা গেছে, নওগাঁর বদলগাছী উপজেলায় গত বছরের (২০২২) অক্টোবর-নভেম্বরে এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। আগের কারিকুলামে চতুর্থ শ্রেণির ‘আনন্দে গণিত শিখি-কনটেন্ট ডেলিভারি বুক’-এ ম্যানুয়ালটি রয়েছে। 

এটি মূলত গণিত অলিম্পিয়াড কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে প্রাথমিক (প্রথম-পঞ্চম) শিক্ষার্থীদের গাণিতিক দক্ষতা উন্নয়নের জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে। এবার শুধু প্রাথমিকের প্রথম শ্রেণিতে নতুন কারিকুলাম চালু হয়েছে। আর মাধ্যমিকে ৬ষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন কারিকুলাম চালু হয়েছে।

এ বিষয়ে বদলগাছী উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইনস্ট্রাক্টর মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, এটা গণিত অলিম্পিয়াড প্রশিক্ষণের একটি অংশ। প্রশিক্ষণের যে ম্যানুয়াল, সেখানে এ অংশটুকু আছে। ২০২২ সালের অক্টোবর-নভেম্বরে প্রশিক্ষণ হয়। আমরা প্রশিক্ষণের আয়োজন করি। শিক্ষকদের মধ্যে মাস্টার ট্রেইনাররা এ প্রশিক্ষণ দেন।

ব্যাঙ লাফ দিতে দিতে আবৃত্তি শারীরিক শিক্ষার শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ
ওরে ও কোলা ব্যাঙ বলে ব্যাঙের মতো লাফ দিতে দিতে আবৃত্তির একটি প্রশিক্ষণের ভিডিও গত কয়েকদিন ধরে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওটি নতুন কারিকুলামের বলে প্রচার করলেও অনেক আগে থেকেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক এটি শিক্ষার্থীদের শেখান এবং তা পিটি করানোর সময় অভিনয় করে দেখান।

ফ্যাক্টচেক প্রতিষ্ঠান রিউমার স্ক্যানারের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ব্যাঙের ছড়ার নৃত্যের প্রশিক্ষণের এই ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছে গত ২৮ নভেম্বর। এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রমটি কুমিল্লার কোটবাড়িতে অবস্থিত প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে (পিটিআই) সম্পন্ন হয়েছে। ভিডিওতে প্রশিক্ষকের ভূমিকায় থাকা ব্যক্তির নাম ইয়াসিন বাবুল (মো: ইয়াছিন)। তিনি কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার মনতলী সরকারি প্রাথমিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।

তিনি জানান, ব্যাঙের ছড়ার নৃত্যের প্রশিক্ষণের এই ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছে গত ২৮ নভেম্বর। এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রমটি কুমিল্লার কোটবাড়িতে অবস্থিত প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে (পিটিআই) সম্পন্ন হয়েছে। 

তিনি আরও জানান, এটি কাব স্কাউটের একটি কোর্স। জাতীয় শিক্ষা কারিকুলামের নয়৷ এটি কাব স্কাউটের কোর্সের মধ্যে থাকা শিশুদের জন্য আনন্দদায়ক একটি খেলা। শিশুরা এটাতে মজা পায়। শিশুদের শেখানোর জন্য শিক্ষকদেরও এটা শেখানো হয়। আমি এটার জন্যই এই ভিডিওতে প্রশিক্ষকের ভূমিকায় ছিলাম।

ছাত্রীর বিদায় অনুষ্ঠানে গাওয়া গান ভাইরাল
প্রাথমিকের পঞ্চম শ্রেণি শেষে ষষ্ঠ শ্রেণিতে উঠবে—এমন শিক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠানে গান গেয়ে ভাইরাল হয়েছে এক ছাত্রী। ভিডিওতে দেখা যায়, বাংলার লোককাহিনিনির্ভর ‘রূপবান’ গানের সুরে কিছু শব্দ পাল্টে বিদায়ী গান গাইছে ওই ছাত্রী। অনুষ্ঠানে অতিথি প্রধান শিক্ষিকা। তাকে ঘিরেই লেখা একটি গান সব শিক্ষার্থীর পক্ষ থেকে গেয়ে শোনায় ওই ছাত্রী। উত্তরবঙ্গের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী সে। পরে এক সাক্ষাৎকারে ওই ছাত্রী জানান, বিদায় অনুষ্ঠানে গাওয়া গানটি তার স্বরচিত। তাই এটি নতুন কারিকুলামের অংশ নয়।

মধু-মালতি গানের সঙ্গে শিক্ষক-ছাত্রীদের নাচটি কলেজের ক্লাব অ্যাক্টিভিটিস ক্লাসে
‘মধু মালতি ডাকে আয়…’ গানের সঙ্গে একজন সহকারী শিক্ষক ও কয়েকজন ছাত্রীর নৃত্যের ভিডিও নতুন কারিকুলামে শেখানো হচ্ছে বলে ভাইরাল হয়েছে। তবে এটি বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের একটি ভিডিও। সেখানে প্রতিষ্ঠানটির ক্লাব অ্যাক্টিভিটিস ক্লাসে অংশ হিসেবে নৃত্য অনুশীলন করানো হচ্ছিল। এটি পরিচালনায় ছিলেন কলেজের সহকারী শিক্ষক মো. তিতুমীর। তাই এটিও নতুন কারিকুলামের অংশ নয়।

ভাইরাল হওয়া ভিডিও নিয়ে এনসিটিবির বক্তব্য
ভাইরাল হওয়া ভিডিও নিয়ে আজ সোমবার (৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে কথা হয় এনসিটিবির শিক্ষাক্রম ইউনিটের সদস্য অধ্যাপক মশিউজ্জামানের। তিনি বলেন, আমরা সবগুলো ভিডিও নিয়ে ইতোমধ্যে একটি বিবৃতি দিয়েছি। ব্যাখ্যা যতটুকু দেবার আমরা ততটুকু দিয়েছি। যেখানে আমরা বলেছি এসব ভিডিও একটিও আমাদের সাথে সম্পৃক্ত নয়। এর আগেও তারা ১৫টি বিষয় সামনে এনেছিল তার প্রত্যেকটির জবাব আমরা দিয়েছি।

তিনি বলেন, হিন্দি গানের সাথে নাচসহ বিভিন্ন বিষয় ভাইরাল হয়েছে তখন আমরা কিছু বলিনি। কিন্তু যখন তারা বলেছে নবীর ছবি আঁকা হচ্ছে তখন আমরা মামলা করেছি। আর সেই মামলার প্রেক্ষিতে পুলিশ তদন্ত করে ৪ জনকে আটক করেছে। তার মধ্যে তিনজনই কোচিং ব্যবসায়ী।

আরও পড়ুন: শিক্ষাক্রম নিয়ে ফেসবুকে সমালোচনা, গ্রেফতার ৪ শিক্ষক কারাগারে

“নতুন কারিকুলামকে বিতর্কিত করতেই তারা এসব নাচ-গান ও প্রশিক্ষণের নামে বিভিন্ন ভিডিও ব্যবহার করে মিথ্যাচার দিয়ে বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে। আমরা এ জন্যই গতকাল একটা বিবৃতি দিয়েছি এবং সেখানে এসব না করতে সতর্ক করে অনুরোধও করেছি। তারপরও কেউ এমন করলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও সেখানে বলেছি।”

এতো সমালোচনা যেহেতু হচ্ছে তাই অভিভাবকদের নিয়ে কোনো ক্যাম্পেইন করা হবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কিছু অভিভাবক এ ব্যাপারে কোনো সংশয় নিয়ে আসে নাই বরং এরা গাইড ও নোট বইয়ের এজেন্ট হিসেবে কাজ করবার জন্য এসেছে। তাদের কথাতেই তা পরিষ্কার যে, “আমার বাচ্চাকে আমি কোচিংয়ে পড়াবো, আমার বাচ্চা মুখস্থ করবে, আমার বাচ্চা কোচিং সেন্টরে গেলে আপনার সমস্যা কি, আমার বাচ্চা গাইড-বই পড়লে আপনার সমস্যা কি?” তাই এমন ব্যক্তিবিশেষের জন্য আমাদের করবার কিছু নাই। আমাদের দেড় কোটি অভিভাবক তো কথা বলছে না। কথা বলছে মাত্র দেড়শ লোক। আর এমনটি প্রয়োজন নেই কারণ তাদের প্রত্যেক প্রশ্নের জবাব দেওয়া হয়েছে। প্রেস কন্ফারেন্স করে মন্ত্রী সেটাও বিলি করেছে লিখিত আকারে এবং সেগুলো আলাদা আলাদা করে ভিডিও ক্লিপ করে আমরা ছেড়েছি।

কারিকুলাম এর আগে ঢালাওভাবে কখনো পরিবর্তন হয়নি, কিন্তু এখনই কেনো এমন পরিবর্তনের প্রয়োজন পরলো এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এর আগে কারিকুলাম চেঞ্জও হয়নি সেভাবে। তবে এবার যে পরিবর্তন হচ্ছে তা হচ্ছে রূপান্তর। যা আগে কখনও হয়নি। আর আগে সিস্টেমের পরিবর্তন সেভাবে না হওয়ার কারণে আমরা এখন অনেক বেশি করে পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছি। কারণ এটি ছাড়া চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের এই যুগে টিকে থাকতে পারবেনা আমাদের বাচ্চারা। এ কথা তো আমরা অনেক আগে থেকেই বলেছি। সিস্টেমকে পরিবর্তন করতে গেলে এমন ঝাঁকুনি লাগবে এইটাই স্বাভাবিক। আর তাই নতুন কারিকুলাম নিয়ে অভিভাবকদের সঙ্গে অভিভাবক সমাবেশ বছরের শুরু থেকেই চলছে। এমনকি তাদের ক্লাসরুমে নিয়ে দেখানো হচ্ছে যে কিভাবে তাদের বাচ্চাদের পড়ানো হচ্ছে।

সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিতে যা বলছে এনসিটিবি
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও নিয়ে একটি সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে এনসিটিবি। গতকাল রবিবার (৩ ডিসেম্বর) এনসিটিবির সচিব মোসা. নাজমা আখতার স্বাক্ষরিত এক সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড প্রাক-প্রাথমিক হতে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের একমাত্র জাতীয় প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের মানসম্পন্ন শিক্ষা উন্নয়ন ও প্রসারে এই প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আমরা লক্ষ করছি, স্বার্থান্বেষী একটি গোষ্ঠী সম্প্রতি নতুন জাতীয় কারিকুলাম সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য পরিবেশন ও ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে জনমনে বিরূপ মনোভাব সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে। এর অংশ হিসেবে সাধারণ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে বা আমাদের জাতীয় সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের পরিপন্থী কাজকে কারিকুলামের কাজ বলে প্রচার করা হচ্ছে। নবীর ছবি আঁকতে বলা হয়েছে লিখে মিথ্যাচার করছে। হিন্দি গানের সাথে স্কুলের পোশাক পরা কিছু ছেলেমেয়ে ও ব্যক্তির অশ্লীল নাচ আপলোড করে বলা হচ্ছে কারিকুলামের নির্দেশনা-যা সর্বৈব মিথ্যা।

এতে আরও বলা হয়েছে, কিছু লোক ব্যাঙের লাফ বা হাঁসের ডাক দিচ্ছে এমন ভিডিও আপলোড করে বলা হচ্ছে এটা নতুন কারিকুলামের শিক্ষক প্রশিক্ষণের অংশ যা সম্পূর্ণ মিথ্যাচার। নতুন কারিকুলামের সকল ধর্ম বর্ণের মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শনের কথা বলা হয়েছে। আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতিকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে বিকশিত করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মিথ্যা অপপ্রচারের মাধ্যমে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রমকে বিপন্ন করার প্রচেষ্টা যারা করছেন তাদের এরূপ কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য সতর্ক করা যাচ্ছে। কারিকুলামের কোনো ত্রুটিবিচ্যুতি থাকলে তা আমাদের জানালে আমরা অবশ্যই তা বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় সংশোধন পরিমার্জন করবো। কিন্তু অপপ্রচার করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

“এমতাবস্থায় সর্বসাধারণকে মিথ্যা প্রচারণায় বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য এনসিটিবি অনুরোধ জানাচ্ছে এবং এরূপ মিথ্যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড, শেয়ার বা কমেন্ট করা থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।”

ফেসবুকে ছড়ানো ভিডিও নতুন শিক্ষাক্রমের অংশ নয়: শিক্ষামন্ত্রী
নতুন শিক্ষাক্রমের অংশ নয়— এমন বিষয়ের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে ব্যাপকভাবে মিথ্যাচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেছেন, নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে ভয়ানক রকম অপপ্রচার চলছে। সেটি করা হচ্ছে— ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থ হানি হওয়ার ভয়ে। কিছু ব্যক্তি এবং গোষ্ঠী শিক্ষাক্রমের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নেমেছেন। তারসঙ্গে এখন তো নির্বাচনের মৌসুমে তো কিছু ঝামেলা থাকেই। নির্বাচনের ক্ষেত্রে যারা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ থাকেন, তাদের উসকানি যুক্ত হয়ে গেছে। অতি ডান ও অতি বামের উসকানিও যুক্ত হয়ে গেছে। যেগুলো আমাদের প্রশিক্ষণের অংশ নয়, সেরকম কিছু ভিডিও ছড়িয়ে দিয়ে মিথ্যাচার করা হচ্ছে।
 
গতকাল রবিবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে শিক্ষাক্রম নিয়ে মিথ্যাচার-এর প্রতিবাদ জানিয়ে অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, আমাদের অভিভাবকরা দীর্ঘদিন থেকে অভ্যস্ত— বাচ্চা কত নম্বর পেলো; জিপিএ-৫ পেলো কিনা; প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় হলো কিনা; অন্যের বাচ্চার চেয়ে আমার বাচ্চা বেশি নম্বর পেলো কিনা; এই বিষয়গুলো নিয়ে অতিমাত্রায় ব্যস্ত ছিলেন তারা। সে জায়গা থেকে বেরিয়ে প্রত্যেকটি কাজে সহযোগিতার জায়গায় তারা কাজ করছেন। এই বিষয়গুলোর জন্য বাবা-মায়ের কিছু সংশয় তো কাজ করছেই। সেগুলোকে এই গোষ্ঠী (মিথ্যাচারকারী) কাজে লাগাচ্ছে।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সবচেয়ে খারাপ যেটা, একেবারেই অগ্রহণযোগ্য, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে মিথ্যাচার করছে। এমনকি ধর্মীয় বিষয় নিয়েও মিথ্যাচার করছে, সেগুলো জঘন্য মিথ্যাচার। তার পাশাপাশি অতি সম্প্রতি দেখছি—যেগুলো আমাদের প্রশিক্ষণের অংশ নয়, শিক্ষক প্রশিক্ষণের অংশ নয়, ক্লাসের অংশ নয়, নতুন কারিকুলামের অংশ নয়, তেমন নানান রকমের ভিডিও ছড়িয়ে দিয়ে মিথ্যাচার করা হচ্ছে। অতীতের কোনও প্রশিক্ষণের ব্রেক থাকে, প্রশিক্ষণার্থীদের উদ্বুদ্ধ করতে নিজেরা নিজেরা বিনোদনের জন্য সেই রকম; যা মাধ্যমিকেরও নয় সেই রকম অতীতের অন্যান্য প্রশিক্ষণের বিনোদনের অংশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে বলা হচ্ছে এইগুলো প্রশিক্ষণ। এমনকি নতুন ভিডিও তৈরি করেও ছড়িয়ে দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence