বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস আজ

বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস
বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস  © ফাইল ছবি

আজ ২৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস। জলাতঙ্ক নির্মূলে অগ্রগতি তুলে ধরা এবং জলাতঙ্ক প্রতিরোধে মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও প্রতিবছর নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালিত হয়। এবারের জলাতঙ্ক দিবসের প্রতিপাদ্য ‘জলাতঙ্কের অবসান, সকলে মিলে সমাধান’।

মূলত জলাতঙ্ক বা র্যাবিস হচ্ছে র্যাবডোভিরিডি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত একটি ভাইরাস যেটি কুকুর, শেয়াল, বাদুর, বেজি প্রভৃতি উষ্ণ রক্তের প্রাণীদের মাঝে রোগ সৃষ্টি করে। ভাইরাসটি আক্রান্ত প্রাণীর মস্তিষ্কে বংশবিস্তার করে এবং আক্রান্ত প্রাণীর লালা বা রক্ত দ্বারা কামড় বা আঁচড়ের মাধ্যমে মানুষেও সংক্রমিত হয়। বিশ্বের প্রায় সকল দেশে এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেলে প্রাণীর মৃত্যু ঘটে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে জলাতঙ্কের কারনে প্রতি বছর বিশ্বের ১৫০টি দেশের প্রায় ৫৯ হাজার মানুষের মৃত্যু হয় যার ৯৫ শতাংশ ঘটে এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলোতে। তবে প্রাণীর কামড় বা আঁচড়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নিলে রোগটি শতভাগ প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) মাইক্রোবায়োলজি ও ইম্যুনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সুলতান আহমেদ বলেন, এই ভাইরাসটা রাস্তার কুকুর ও বন্য শিয়ালের (প্রায় ৫%) এর মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে। তাছাড়া  অধিকাংশ মানুষ ভ্যাকসিন নিচ্ছে না অপর্যাপ্ততার জন্য এবং একটি সম্পূর্ণ ডোজের খরচ প্রায় চার হাজার টাকা। যার ফলশ্রুতিতে দরিদ্র মানুষ সম্পূর্ণ ডোজ নিতে পারে না। এছাড়াও অনেক মানুষ আছে যারা এ বিষয়ে সচেতন না। তাই এর প্রতিরোধের জন্য রাস্তা ঘাটে যে কুকুরগুলো থাকে যেগুলোকে আমরা কমিউনিটি ডগ বলি এই কুকুরগুলোকে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক পর্যায় থেকে জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন দিতে হবে। এদেরকে একটি নিয়ম নীতির আওতায় আনতে হবে । কমিউনিটি ডগ গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে বন্য শিয়ালের দ্বারা ভাইরাস ছড়ানোর হারও কমে যাবে।

তিনি আরো বলেন, ভাইরাসটির সুপ্তাবস্থা বছর পর্যন্ত হতে পারে যার কারণে কোন কবিরাজি চিকিৎসা নিলেও পরবর্তী ভাইরাসটি মানুষের শরীরে ক্ষতি করে থাকে। যখন কাউকে কুকুর কামড়াবে তাকে যতদ্রুত সম্ভব ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। শরীরের হাত বা পায়ে কামড়ালে সে ক্ষেত্রে র্যাবিস ভ্যাকসিন দিলে ভ্যাকসিন এর কার্যকারিতা শতভাগ থাকে কিন্তু যদি মাথায় কামড়ায় সে ক্ষেত্রে অনেক সময় ভ্যাকসিন কাজ নাও করতে পারে। সর্বোপরি গণসচেতনতা বাড়াতে হবে।

উল্লেখ্য, ১৮৮৫ সালে বিজ্ঞানী লুই পাস্তুর ও তার সহযোগীরা জোসেফ মেস্টার নামক নয় বছর বয়সী জলাতঙ্কে আক্রান্ত এক শিশুকে জলাতঙ্কের টিকা প্রয়োগ করে সফলতা পান। পরে এই টিকা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি পায়। বিখ্যাত এই চিকিৎসা বিজ্ঞানী ১৮৯৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। জলাতঙ্কের টিকা আবিষ্কারক হিসেবে স্মরণীয় করে রাখতে এবং মানুষের মাঝে জলাতঙ্ক নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০০৭ সাল থেকে সারাবিশ্বে এই দিনটি জলাতঙ্ক দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।


সর্বশেষ সংবাদ