বাকৃবির সাবেক উপাচার্যের অবসর কাটছে শৈশবের স্কুলে শিক্ষকতা করে

বাকৃবির সাবেক উপাচার্যের অবসর কাটছে শৈসবের স্কুলে শিক্ষকতা করে
বাকৃবির সাবেক উপাচার্যের অবসর কাটছে শৈসবের স্কুলে শিক্ষকতা করে  © সংগৃহীত

বাকৃবির সাবেক উপাচার্য একুশে পদকপ্রাপ্ত ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এম এ সাত্তার মণ্ডলের অবসর কাটছে শৈসবের স্কুলে শিক্ষকতা করে। চাকরি থেকে অবসর নিলেও কাজ থেকে অবসর নেননি। শিক্ষার্থীদের কল্যাণে নানামুখী কাজ করছেন তিনি। কৃষি অর্থনীতিবিদ সাত্তার মণ্ডল মাসে অন্তত দুবার ফরিদপুরের নগরকান্দায় গ্রামের বাড়ি গিয়ে তিন-চার দিন থেকে গ্রামের বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করান তিনি। তিনি শিক্ষক। পাশাপাশি শিক্ষকতা তাঁর নেশাও বটে।

অধ্যাপক এম এ সাত্তার বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক হিসেবে পাঁচ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান অনুষদের কৃষি অর্থনীতি বিভাগে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি গ্র্যাজুয়েট এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১তম উপাচার্য ছিলেন। বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা কমিশনের অন্যতম সদস্যের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

খাতায়-কলমে অবসর নিলেও শিক্ষকতা ছাড়েননি তিনি। বরং, শেখানোর উৎসাহে এবং অনাবিল স্নেহে তিনি এখনও কাটিয়ে চলেছেন শিক্ষকতা জীবন। স্কুলে এসে পড়ানোর গুরুদায়িত্ব এখনও নিয়েছেন নিজের কাঁধেই। গত বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার কৃষ্ণারডাঙ্গী উচ্চবিদ্যালয়ে নবম শ্রেণির ইংরেজি ক্লাস নিতে দেখা গেছে তাঁকে। ড. এম এ সাত্তার এই বিদ্যালয়েই মাধ্যমিক পর্যায়ে পড়াশোনা করেছেন।

এ প্রসঙ্গে ড. এম এ সাত্তার মণ্ডল বলেন, ‘আমি এখানে আসি শেকড়ের টানে। এখানে আমার জন্ম। অনেক খেলার সাথিও রয়েছে এই এলাকায়। ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও তাঁদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করতে পারি না ব্যস্ততার কারণে। তবে সময় পেলেই ছুটে আসার চেষ্টা করি এই জন্মস্থানে। এখানকার মানুষকে মন থেকে ভালোবাসি।’ ‘আমি এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস নিচ্ছি। আমার উদ্দেশ্য, গ্রামের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা সঠিক শিক্ষা পেয়ে ভালো কলেজে লেখাপড়ার সুযোগ পাবে। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাফল্য ও শিক্ষার্থীদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করি।’

অধ্যাপক সাত্তার মন্ডল বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজ বিজ্ঞান অনুষদ থেকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন (১৯৭২-১৯৭৪)। তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষি অর্থনীতিতে ১৯৭৯ সলে পিএইচ.ডি. ডিগ্রি লাভ করেন এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি পোস্ট ডক্টরাল স্টাডি সম্পন্ন করেন (১৯৮৭-৮৮)। 

পরে বাকৃবিতে কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক, বিভাগীয় প্রধান এবং ডীন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালনসহ দেশে-বিদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ও ভাবমূর্তি উজ্জ্বলকল্পে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ের বাবা।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাসুদ মোল্লা বলেন, ‘ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এম এ সাত্তার মণ্ডল স্যার এই বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। তাঁর শিক্ষাদান সত্যিই আমাদের আনন্দিত করছে। শিক্ষার্থীরাও পড়াশোনায় উৎসাহী হচ্ছে। তিনি আমাদের তথা সারা দেশের গর্ব। আল্লাহ তাআলা তাঁকে যেন দীর্ঘ হায়াত দান করেন।’

কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়নের ওপর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নালে ড. সাত্তার মন্ডলের কয়েক শতাধিক গবেষণামূলক প্রবন্ধ, বই ও সেমিনার পেপার এবং জনপ্রিয় নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশ জার্নাল অব এগ্রিকালচারাল ইকোনোমিক্স এর সম্পাদক ছাড়াও ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ইরিগেশন অ্যান্ড ড্রেনেজ-সিস্টেমের সদস্য ছিলেন তিনি সুদীর্ঘ সময়। তিনি দেশী-বিদেশী উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গবেষণা প্রকল্পের প্রধান হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনার ও পলিসি ফোরামে অংশগ্রহণ করেন।


সর্বশেষ সংবাদ