সংবাদ সম্মেলনে যুবলীগ কর্মী

দিনমজুর থেকে যুবলীগ নেতা-ইউপি চেয়ারম্যান, বনে গেলেন কোটিপতি

  © সংগৃহীত

২০০৫ সালেও অন্যের জমিতে দিনমজুর হিসেবে কাজ করতেন চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার জেহালা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মকলেছুর রহমান ওরফে শিলন। সেসময় দুই কাঠা ভিটে ছাড়া তার সম্পদের তালিকা ছিল শুন্য। দেড় বছর আগে তিনি জেহালা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

এর মধ্যে নিজ গ্রামে তিনি ৩০ বিঘা জমির মালিক। বাড়ি তৈরির জন্য ৪০ লাখ টাকা মূল্যের জমি কিনেছেন চুয়াডাঙ্গা শহরেও। মাত্র দেড় বছর সময়ের চেয়ারম্যান কোটি কোটি টাকা কোথায় পেলেন?—ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মকলেছুর রহমান ওরফে শিলনের প্রতি এমন প্রশ্ন ছুড়েছেন তাঁরই এক সময়ের সহযোগী যুবলীগ কর্মী কামাল হোসেন।

সোমবার (১০ জুলাই) যুবলীগ কর্মী কামাল হোসেন চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ তোলেন। এসময় তিনি চেয়ারম্যানের মাদক কারবার ও অবৈধ আয়সহ তাঁকে মাদক ব্যবসা করতে বাধ্য করা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ তোলে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। গত ৬ জুলাই রাতে কামাল হোসেন আলমডাঙ্গায় সাংবাদিক ইউনিট কার্যালয়েও এসব অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেন।

আরো পড়ুনঃ ফের পেছাল নাহিদ হত্যাসহ ৩ মামলার প্রতিবেদন

মকলেছুর রহমান ওরফে শিলন ২০২১ সালের ২৮ ডিসেম্বর জেহালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। একই এলাকার বাসিন্দা ও যুবলীগের কর্মী কামাল হোসেন সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে দাবি করেন, কৃষিকাজের পাশাপাশি তিনি চেয়ারম্যান মকলেছুর রহমানের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করতেন। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে মকলেছ তাঁকে বিভিন্ন জায়গায় মাদক পাঠাতে চাপ দিতেন। একদিন তাঁকে দিয়ে কেদারনগর গ্রামে মাদক পাঠানো হয়। কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর আগেই র‍্যাব পৌঁছে যায়। এরপর তাঁর নামে থানায় মামলা হয়। মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাঁকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।

কামালের দাবি, বন্দী থাকার সময় চেয়ারম্যান কারাগারে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। চেয়ারম্যান তখন বলেন, ‘আমি তোকে বের করতে পারি, যদি আমার কথা শুনিস। আমার কথা মতো চললে পুলিশ তোকে ছুঁয়েও দেখবে না। যদি তোর নামে মামলা হয় তার সব খরচ আমি করব, না হলে জামিন হতে দেব না।’

যুবলীগ কর্মী কামাল আরও বলেন, কারাগার থেকেই চেয়ারম্যানের কথায় রাজি হয়ে যান তিনি এবং আবারও মাদক ব্যবসা শুরু করেন। এরই মধ্যে আব্বাস নামের এক মাদক ব্যবসায়ী পুলিশের হাতে ধরা পড়লে কামালের নাম বলে দেন। মামলা থেকে নাম কাটিয়ে দেওয়ার জন্য ওইসময় চেয়ারম্যান তাঁর কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা নেন। এমন অবস্থায় কামাল মাদক ব্যবসা করতে রাজি না হওয়ায় শুরু হয় চেয়ারম্যানের অত্যাচার। তাঁকে হত্যারও চেষ্টা করা হচ্ছে বলে দাবি কামালের। 

এর আগে সাংবাদিক ইউনিট কার্যালয়ে দেয়া এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ উত্থাপন করলে পরের দিন পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে ইউপি চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতা মকলেছুর রহমান জানিয়েছেন, প্রায় আড়াই মাস ধরে তিনি মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। ফলে অনেক মাদক ব্যবসায়ী পুলিশের হাতে আটক হয়েছে। এ কারণে এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারি একাধিক মামলার আসামি কামাল হোসেন তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ হন। তাঁকে সামাজিকভাবে হেয় করতে ও নিজে বাঁচার জন্য সংবাদ সম্মেলনে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দিয়েছেন।


সর্বশেষ সংবাদ