৫১-তে বাংলাদেশ

বেড়েছে শিক্ষার পরিমাণ, কমেছে গুণগত মান

দেশে শিক্ষার গুণগত মান কমেছে বলে মনে করেন শিক্ষাবিদরা
দেশে শিক্ষার গুণগত মান কমেছে বলে মনে করেন শিক্ষাবিদরা  © ফাইল ছবি

সরকারি হিসাবে বর্তমান বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন। এর মধ্যে বর্তমানে স্বাক্ষরতার হার ৭৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ বলে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রথম ডিজিটাল ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’-এর প্রাথমিক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। স্বাধীনতার পাঁচ দশকে দাঁড়িয়ে দেশের আর্থিক, সামাজিক, রাজনৈতিক নানা সূচকে উন্নতি হলেও কতটুকু উন্নতি হয়েছে দেশের সামগ্রিক শিক্ষায়?

দেশের শিক্ষা ও তৎসংশ্লিষ্ট খাতে উন্নতির মাপকাঠি বিচার করলে শিক্ষার পরিমাণগত উন্নতি হলেও গুণগত উন্নতি খুব বেশি হয়নি-বলে মনে করছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। যদিও সরকার প্রতিবছর বিনামূল্যে প্রায় ৩৫ কোটি বই দিচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এছাড়া পিছিয়ে পড়া বা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর শিক্ষা নিশ্চিত করতে বৃত্তি ও উপবৃত্তিসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করছে। সার্বিক সূচকের হিসেবে উন্নতি উর্ধ্বমূখী হলেও নিম্নমুখী দেশের বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নতি ও শিক্ষিতদের দক্ষতা কিংবা সাফল্যের সূচক। ফলে, অর্জন কেবলই পরিমাণগত।

দেশে বর্তমানে শিক্ষা কেবলই চাকরি পাওয়ার মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। তরুণরা শিক্ষা এমনকি উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেও চাকরি পাচ্ছে না। যার ফলে তারুণ্যের হতাশা আর বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নতির বেহাল দশা। এর প্রমাণ বর্তমানে আমাদের পাঠ্যক্রমে পড়ানো হচ্ছে বা জোর দেয়া হচ্ছে এমন সব বিষয়ে, যাতে সহজে চাকরি পাওয়া যায়।

যদিও এ্যাকশন এইড বাংলাদেশ ও সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) তথ্য বলছে ভিন্ন কথা। তাদের তথ্য বলছে, বাংলাদেশে যুবগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ আর্থ-সামাজিক ঝুঁকির মধ্যে আছে। বৈষম্য আর গুণগত শিক্ষার অভাবে ৭৮ শতাংশ তরুণ মনে করেন, পড়াশোনা করে তাঁরা চাকরি পাবেন না। গরিব শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এ হার ৯০ শতাংশ। এছাড়া চাকরি, পড়াশোনা বা প্রশিক্ষণে নেই ২৯ দশমিক ৮ শতাংশ তরুণ। অর্থাৎ কেবল চাকরির জন্য শিক্ষা মাধ্যমের অঘোষিত যাত্রাও সাফল্য পাচ্ছে না প্রয়োজনীয় ও সময়োপযোগী দক্ষতার অভাবে।

আরও পড়ুন: বুদ্ধিবৃত্তির পঞ্চাশ বছর কি কেবলই পিছিয়ে যাওয়ার?

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ‘বিশ্বজুড়ে তরুণদের কর্মসংস্থানের প্রবণতা ২০২২’ (দ্য গ্লোবাল এমপ্লয়মেন্ট ট্রেন্ডস ফর ইয়ুথ) শিরোনামের তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মহামারিকালে দেশে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে তরুণ বেকারদের সংখ্যা। তাদের তথ্য বলছে, দেশে তরুণদের মাঝে বেকারত্বের হার ১০ দশমিক ৬ শতাংশ এবং জাতীয় পর্যায়ে এ হার ৪ দশমিক ২ শতাংশ বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। 

আর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রথম ডিজিটাল জনশুমারি ও গৃহগণনার প্রতিবেদনের প্রাথমিক তথ্যবিশ্লেষণ বলছে, দেশের মোট জনসংখ্যার ১৯ দশমিক ১১ শতাংশ তরুণ সংখ্যার হিসেবে যা ৩ কোটি ১৫ লাখ ৬১ হাজার ৮১১। তাদের সবার বয়স ১৫ থেকে ২৪ বছর।

বৈশ্বিক মহামারী, মন্দা, যুদ্ধসহ নানা কারণে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রতিনিয়ত তরুণদের লড়াই করে নিজেকে প্রমাণ করতে হয়। তথ্য বলছে, প্রচলিত ব্যবস্থায় বর্তমানে দেশে উচ্চশিক্ষিত বেকার তরুণের সংখ্যা ২৭ লাখ। বিবিএস-এর  জরিপ বলছে, দেশের বেকার তরুণদের মধ্যে সবাইই কর্মক্ষম বেকার। যদিও আইএলওর প্রতিবেদনে বলছে, দেশে শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত ও অশিক্ষিত মিলিয়ে মোট বেকারের সংখ্যা ৩ কোটি। তরুণদের দক্ষ করে গড়ে তুলে কর্মসংস্থান সৃষ্টিই বড় চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ্য করে সংস্থাটি। 

আর অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, এতে বড় আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি পরোক্ষ অপচয় মেধা, সময় আর তরুণদের উদ্যমের। ফলাফল আমাদের শিক্ষা মাধ্যম তরুণদের আশা বাঁচিয়ে রাখতে পারছে না। তথ্য বলছে, মালয়েশিয়া, কোরিয়া, চায়না ৫০ বছর আগেও উন্নতির সূচকে বাংলাদেশের সম-পর্যায়ে ছিল। আর কিউবা তাদের স্বাধীনতার পাঁচ বছরের মাথায় শিক্ষার হার শতভাগ নিশ্চিত করতে পেরেছে। তাহলে আমাদের যা পরিমাণগত বৃদ্ধির তাও মান বিচারে না হওয়ার পাশাপাশি সন্তোষজনক নয় চলমান পরিমাণেরও।

আরও পড়ুন: অপরিকল্পিত উচ্চশিক্ষা: মেধা আর অর্থ দুটোরই অপচয়

পরিসংখ্যান মতে, পাঁচ দশকের একটি পরিণত বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। আর এ সময়ে আমাদের জনমিতিতে যে পরিবর্তন, তার সুফল পেতে আমাদের বর্তমান তরুণদের জন্য জন্য আশা বাঁচিয়ে রাখতে হবে। আমাদের সামাজিক ও আর্থিক কাঠামোয় শক্তিশালী ভিত দাঁড় করাতে হলে আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নতি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি বৃদ্ধি করতে হবে প্রচলিত দক্ষতারও। জনমিতিতে পরিবর্তন ও সময়ের সামাজিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বর্তমান প্রজন্মকে বর্তমান সময়ের তুলনায় তিন থেকে চার গুণ বেশি দক্ষ হতে হবে।

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, উন্নতি নিশ্চিত করতে হবে আমাদের গুনগত শিক্ষায়, নিশ্চিত করতে হবে মানসম্মত শিক্ষা। পাশাপাশি উন্নতি নিশ্চিত করতে হবে শিক্ষার মাধ্যমে বুদ্ধিবৃত্তিক বিন্যাসে। একইসাথে আমাদের ‘সফট স্কিল’ অর্থাৎ ন্যায়বোধ, মানবিক মূল্যবোধ এবং সামাজিক সচেতনতা জাগিয়ে তুলতে হবে সবার মাঝে। আমাদের সকল স্তরের শিক্ষা মাতৃভাষার মাধ্যমে হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি।

যার ফলে আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিন্যাস কাঙ্ক্ষিত হয়নি জানিয়ে লেখক, প্রাবন্ধিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, শিক্ষার গুণগত মান আমরা বাড়াতে পারিনি; পরিমাণগত বাড়িয়েছি। এর নিদর্শন হলো যারা আমাদের শিক্ষা কারিকুলামে ত্রুটি রয়ে গেছে। যেমন ইতিহাসের চর্চা কমে গেছে; ইতিহাসকে কোনো গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না।

বরেণ্য এই শিক্ষাবিদ বলেন, বর্তমানে এটি শুধুমাত্র একটি সমাজবিজ্ঞানের অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অথচ ইতিহাস একটি জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধুমাত্র তার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যই নয় বরং ইতিহাসে একটি জাতির অর্জন, তার গৌরব, তার ব্যর্থতা সবকিছুই তার ইতিহাসের অংশ। বর্তমান শিক্ষা-ব্যবস্থায় বা কাঠামোয় ইতিহাস পাঠকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না।

আরও পড়ুন: সরকারিতে বাড়লেও মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম কমেছে বেসরকারিতে

পাশাপাশি আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নতি না  বা শিক্ষা থেকে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল না পাওয়ার আরেকটি কারণ বর্তমানে সাহিত্যকেও গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না বলে মনে করেন প্রবীণ এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, ইতিহাসের পাশাপাশি সাহিত্যকে গুরুত্ব না দেয়া আমাদের শিক্ষার জন্য খুব খারাপ হচ্ছে। এর ফলাফল হচ্ছে বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নতিতে পিছিয়ে যাওয়া, দক্ষতা উন্নয়নে পিছয়ে যাওয়া-যুক্ত করেন অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।

তিনি সমাধান হিসেবে মনে করেন আমাদের শিক্ষানীতিতে এসব সমস্যার সমাধান করতে হবে। বাড়াতে হবে ইতিহাসও সাহিত্যের মতো বিষয়গুলো; ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করতে হবে। যাতে আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নতি নিশ্চিত করা যায়। পাশাপাশি তিনি মনে করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষায় আমাদের দক্ষতা পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় হয়নি। ফলে তরুণরা তাদের তুলনায় দক্ষতা, জ্ঞান ও প্রযুক্তিতে পিছিয়ে আছে। তাদের দক্ষতার উন্নয়নে কাজ করা দরকার; এসব বিষয়ে আমাদের শিক্ষানীতি ও সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন করা দরকার।

আমাদের এখন শিক্ষার হার প্রায় ৭৫ শতাংশ জানিয়ে অর্থনীতিবিদ, উন্নয়ন চিন্তাবিদ ও জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির কো-চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, শিক্ষার হার বেশি মানে এটা নয় যে, সবাই তা আত্মস্থ করতে পেরেছে বা পারবে। শিক্ষার মানে হলে নিজেকে প্রকাশ করতে পারা, অন্যের লেখা পড়তে পারা, নিজের মতামতকে প্রকাশ করতে পারা, সবকিছু আত্মস্থ করতে পারা। অর্থাৎ গুনগত শিক্ষা অর্জন করা। সেখানে আমাদের ঘাটতি আছে; সেসব জায়গায় বা খাতে আমাদের অগ্রগতি দরকার।

আমাদের শিক্ষার হার বেড়েছে, এবার আমাদের মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার দিকে নজর দিতে হবে জানিয়ে ড. কাজী খলীকুজ্জমান বলেন, তা না হলে আগামীতে আমাদের বিভিন্ন খাতে যে দক্ষ জনশক্তি লাগবে তা পাওয়া যাবে না; এবং তা খুবই জরুরি তা না হলে আমাদের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা নিশ্চিত করা যাবে না। এখন আমাদের দক্ষতা উন্নয়ন দরকার, দক্ষ লোকবল দরকার। আর শিক্ষার ভিত শক্ত হলেই আমাদের দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে।

আরো পড়ুন: র‍্যাংকিংয়ে ভারত-পাকিস্তানের ধারেকাছেও নেই বাংলাদেশ

তিনি বলেন, পাশাপাশি আমাদের নৈতিকতার দিকেও নজর দিতে হবে। এখন তো মূল্যবোধের একেবারেই অবক্ষয় হয়েছে। আমাদের এখানে দুর্নীতি, ব্যাপক, দায়িত্ব পালনে অনীহা, সৎ চিন্তা না করা, অন্যের উপকার না করা, অন্যের ক্ষতি করা ইত্যাদি সমস্যা লক্ষ করা যাচ্ছে। একইসঙ্গে আমাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে; বিশেষ করে আমাদের তরুণদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা বেশি জরুরি বলে মনে করেন প্রবীণ এই অর্থনীতিবিদ ও উন্নয়ন চিন্তাবিদ।

পরিসংখ্যান তুলে ধরে ড. কাজী খলীকুজ্জমান বলেন, এখন ১৫-৩৫ বছরের মধ্যে আমাদের তরুণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ৫২ মিলিয়ন, আর ১৫-২৯ এরমধ্যে ৪৫ মিলিয়ন যাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছে যারা শিক্ষা পায়নি। এরমধ্যেও যারা শিক্ষা পেয়েছে তাদের অনেকের প্রয়োজনীয় দক্ষতা বৃদ্ধি হয়নি। যার কারণে দেশের বেসরকারি খাতে আমাদের দক্ষ জনবলের অভাবের সুযোগ নিয়ে পার্শ্ববর্তী ভারত ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশ আমাদের দেশ থেকে প্রায় ৫-৬ বিলিয়ন ডলার আয় করছে। এখানে সামঞ্জস্য করা দরকার; দক্ষতা বৃদ্ধি করা দরকার।

ড. কাজী খলীকুজ্জমান মনে করেন, বর্তমানে সরকারের প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আওতায় দেশের তরুণদের সুযোগ আছে প্রশিক্ষণ নিয়ে বিদেশে যাওয়া, চাকরি করা কিংবা উদ্যোক্তা হওয়ার। তবে সরকারের এসব উদ্যোগেরও আরও সম্প্রসারণ করা, সঠিক বাস্তবায়ন করা এবং তদারকি করারও দরকার আছে।

তিনি বলেন, আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ ও প্রযুক্তিনির্ভর সমাজ কাঠামো বিনির্মাণে একই বিষয়ে কাজ করতে হবে আমাদের উচ্চশিক্ষায়ও। সেইসাথে আমাদের নীতির ধারাবাহিকতাও রক্ষা করতে হবে। রাজনৈতিক পরিবর্তন যেন আমাদের নীতির পরিবর্তন না করে; আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ অর্থাৎ দেশের সকলকে নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।

আরও পড়ুন: ৫৭ শতাংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কম্পিউটার নেই, পাঠ্যবইয়ে সীমাবদ্ধ প্রযুক্তি শিক্ষা

শিক্ষা অর্থনীতি বিযুক্ত নয়; শিক্ষা দেশপ্রেম বিযুক্ত নয় এবং বর্তমানে শিক্ষা তো কেবল জাতীয় ইস্যু না এটি একটি আন্তর্জাতিক বিষয় জানিয়ে জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন কমিটি ও শিক্ষা আইন প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমাদের আরও দক্ষতা বৃদ্ধি করা দরকার, গতি বৃদ্ধি করা দরকার।

তিনি বলেন, আমাদের জনমিতিক বিন্যাসে আমাদের তরুণদের মাধ্যমে আরও ২০ বছর কাজ করাতে পারবেন। এরপর আপনি যদি সময়ের সাথে অর্থাৎ সামাজিক পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়াতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে। সেজন্য আমাদের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষা-ব্যবস্থাপক ও শিক্ষা প্রশাসকদের সামগ্রিক সচেতনতা বাড়াতে হবে। আমাদের সবার দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিবর্তন করতে হবে বলে মনে করেন দেশের শিক্ষা ও শিক্ষক আন্দোলনের প্রবীণ এই নেতা।

অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ আরও বলেন, শিক্ষা শুধুমাত্র তো জীবিকা অর্জনের বিষয় নয়; আবার এর সাথে শিক্ষা দেশপ্রেম বিচ্ছিন্ন নয়। শিক্ষা একটি সামগ্রিক বিষয়। বর্তমানে শিক্ষা বিশ্বজনীন সেটাকে আপনি অস্বীকার করতে পারবেন না। আমাদের উন্নয়ন হয়েছে, তাই বলে আপনার বসে থাকার সুযোগ নেই। কারণ, একই সময়ে বিশ্ব আরও অনেক দূর এগিয়ে যাবে বা যাচ্ছে। তাই আমাদের আরও অনেক কিছু করতে হবে; আপডেটেড থাকতে হবে। মূলকথা হলো আমাদের উন্নতিতে কাঙ্ক্ষিত ফল আনতে হলে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে।

তিনি বলেন, গত ৩০ বছরে বিশ্ব যতদূর এগিয়েছে গত ৩০০ বছরেও তা হয়নি। অনেকেই বলেন আমাদের সম্পদের অপ্রতুলতা রয়েছে; আমি তা মনে করি না। আমাদের যেমন শিক্ষায় আরও অর্থায়ন করা দরকার তেমনি তার স্বচ্ছতা ও তদারকিও করা দরকার। এর পাশাপাশি দক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে।

আরও পড়ুন: বিজ্ঞানের ল্যাব নেই ৩০ শতাংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে

আমাদের সমস্যা আছে বা হচ্ছে তা নিয়ে বসে থাকার সুযোগ নেই; সেজন্য আপনাকে কাজ করতে হবে যেন সমস্যা আর না বাড়ে। আমাদের সকলের দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিবর্তন করতে হবে- যুক্ত করেন অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক অলাভজনক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘এ্যাকশন এইড’-র বাংলাদেশে কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, পঞ্চাশ বছরের উন্নতি, অর্জন অনেক জায়গায় হয়েছে, অনেক ক্ষেতেই হয়েছে। আপনাকে দেখতে হবে উন্নতির সূচকগুলো কী-এমন প্রশ্ন জানিয়ে তিনি বলেন, সামাজিক এবং মানসিক পরিবর্তনের সূচকে আমাদের উন্নতি হয়নি কাঙ্ক্ষিতভাবে। সেজন্য আমাদের সামষ্টিকভাবে কাজ করতে হবে। কারণ সমষ্টিগতভাবে কাজ না করলে মূল্যবোধ থাকে না, জবাবদিহিতা থাকে না; এটা কোনো একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর ওপর ছেড়ে দিলে হবে না।

মূল্যবোধের অবক্ষয় খুব পীড়া দেয় জানিয়ে তিনি বলেন, যে মূল্যবোধ রক্ষার জন্য আমাদের স্বাধীনতা তার অবক্ষয় মেনে নেয়া যায় না। তিনি বলেন, কী হয়নি তা নিয়ে বসে থাকা যাবে না বরং এখন আমরা কী করবো তা ঠিক করতে হবে; তা নিয়ে কাজ করতে হবে। আমাদের সমস্যা সমাধানে কাজ করতে হবে, ঘাটতি পূরণ করতে হবে। 

শিক্ষার উন্নয়নে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করছে জানিয়ে এ্যাকশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, শিক্ষায় শুধুমাত্র আমাদের অংশগ্রহণ (এনরোলমেন্ট) দিয়ে দেখলে হবে না। আমাদের শিক্ষায় মান নিশ্চিত করতে হবে। মূল্যবোধকে সাথে নিয়ে আমাদের মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে কাজ করতে হবে।

আরও পড়ুন: আইসিপিসি ওয়ার্ল্ড ফাইনালস ঢাকা: বাংলাদেশের প্রত্যাশা-প্রাপ্তির মেলবন্ধন কতদূর?

তিনি বলেন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বেশি কাজ করতে পারছে এবং এতোদিন ধরে তাই দিয়ে আসছে। আমাদের এগিয়ে যাওয়ার জন্য, উন্নতির জন্য সবাইকে সঙ্গে নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। কাউকে রেখে কাউকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব না। সমষ্টিগতভাবে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে বলেও মনে করেন ফারাহ করিব।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence