শিল্পী সমিতি নির্বাচন: শিল্পীরা কি অশৈল্পিক হয়ে উঠলেন?

কাবিল সাদি
কাবিল সাদি  © টিডিসি ফটো

প্রায় এক দশক থেকেই নিম্নমানের চলচ্চিত্র পরিবেশনা, মানহীন সস্তা গল্প,পাইরেসি মোকাবিলায় অদক্ষতা, বৈশ্বিক সাংস্কৃতিক আগ্রাসনসহ প্রযুক্তির উন্নয়নের প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে এদেশের সোনালী চলচ্চিত্র শিল্পের দৈন্যদশা শুরু।

এরই মধ্যে বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারী যেন এই শিল্পের স্বাভাবিক জীবনে শেষ পেরেক ঠুকে দিয়েছে। ফলে এই শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট অনেক শিল্পীই কাজ হারিয়ে পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছেন আবার অনেকেই মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
দুই দশক আগেও যেখানে প্রায় ১২০০ সিনেমা হল ছিল এখন তা কমে ২০০টিরও নিচে এবং দিন দিন হল মালিকরা ক্ষতিপূরণ দিয়ে তা বন্ধ করতে এক প্রকার বাধ্য হচ্ছেন, সিনেমা হলের জায়গায় নির্মাণ হচ্ছে শপিংমল, আবার কেউ কেউ ব্যবসাটি ধরে রাখতে গিয়ে ধারাবাহিক লোকশান গুণে পথে বসছে। হাতেগোনা কয়েকটি সিনেপ্লেক্স থাকলেও ভাল ছবির অভাবে সেগুলোও প্রায় বন্ধ হওয়ার পথে। এতকিছুর পরেও এবছরের শুরু থেকেই আলোচনা ছিল চলচ্চিত্র শিল্প সংস্থার শিল্পী সমিতির নির্বাচন নিয়ে।

এক প্রকার কাদা ছুড়াছুঁড়ির মধ্য দিয়েই শুরু হয় চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনী প্রচারণা।

ভোটার সংখ্যা হাতেগোনা হলেও এই নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহের শেষ ছিল না। অন্যন্য বার এই নির্বাচন নিয়ে এভাবে আলোচনায় না আসলেও এবারের চিত্র ছিল একেবারেই ভিন্ন। বলতে গেলে জাতীয় নির্বাচন নিয়েও এতটা মিডিয়া কভারেজ হয় কি না বলা মুশকিল। প্রচারণার শুরুর দিন থেকেই চলছিল পক্ষ-বিপক্ষ দলের নানা অভিযোগ এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে কাদা ছুড়াছুড়ির অবর্ণনীয় অবস্থা এবং গত ২৮ জানুয়ারী নির্বাচন শেষ হয়ে গেলেও সেই কাদা ছুড়াছুঁড়ি বন্ধ তো হয়েইনি বরং বেড়েছে আরও ভয়ানক ভাবে।

এমনকি ভোটে পরাজিত সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী চিত্রনায়িকা নিপুণের অভিযোগে আপিল বিভাগের প্রধান সোহানুর রহমান সোহান নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানের প্রার্থীতা বাতিল করে নিপুণকে তদস্থলে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেছিলেন।  নির্বাচিত একাংশ তথা জায়েদ মিশা প্যানেল ছাড়াই কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেল শপথ গ্রহণও করেছেন, এদিকে এক অংশের শপথ না নেয়া এবং জায়েদ খান হাইকোর্টে আপিল করলে নিপুণের পদ স্থগিত করে আবারও জায়েদ খানকে স্বপদে বহালের আদেশ দেন বিজ্ঞ আদালত। এরই পরিপ্রেক্ষিতে নিপুণ এই আদেশ স্থগিত চেয়ে পাল্টা আপিল করেছেন এবং আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণায় শিল্পী সমিতির কমিটি ও এই নির্বাচন আবারও নতুন সংকটে পড়তে যাচ্ছে তা আপাতত বলার অপেক্ষা রাখে না।

আলোচনার শুরুটাই হয় গত দুবারের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান কে ঘিরেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে সাধারণ নেটিজেনরা সরোব থাকলেও
এবারেও তিনি তৃতীয় বারের মত একই পদে নির্বাচন করে জয় লাভ করেছেন শিল্পীদের ভোটে। সভাপতি পদে জয় লাভ করেন বিপক্ষ প্যানেলের এক সময়ের তুমুল জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেতা ও একুশে পদক বিজয়ী "নিরাপদ সড়ক চাই" আন্দোলনের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন। এবারের এই নির্বাচনে আলাদা মাত্রা যোগ হয়েছে সংস্থাটির বড় দুটি পদে আসীন হয়েছিল ভিন্ন দুটি বিরোধী প্যানেল থেকে। যদিও এ জয় নিয়ে এখনও বিতর্ক চলছে এবং এই বিতর্ক আমাদের জাতীয় নির্বাচনের চেহেরাকেও যেন হার মানিয়েছে। তারা যেন ভুলেই গেছেন এই নির্বাচনী কমিটি দুবছরের জন্য শিল্পী সমিতিকে পরিচালনা করবেন এই দেশকে নয় কিন্ত তাদের নির্বাচন পূর্ববর্তী ও পরবর্তী আচরণে অনেকেই ভাবছেন তারা যেন এই দেশেরই সরকার হতে চলেছেন।

যেভাবে প্রচারণা শুরু থেকেই একে অপরকে হুমকি, জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি, খুনের মামলাতে জরানো চেষ্টাসহ প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে সব রকমের পন্থাতেই সচেষ্ট ছিলেন তাতে কোনভাবেই প্রতীয়মাণ হয় না যে এটি শিল্পী সমিতির নির্বাচন বরং দেশের বৃহৎ দুটি রাজনৈতিক দলের বিরোধী মনোভাবের সম্পর্ককেই মনে করিয়ে দেয়। নির্বাচনের আগে যদিও তারা বলেছিলেন নির্বাচন পরবর্তী তথা ২৮ জানুয়ারী থেকেই আবারও একই ছাতার নিচে হাটবেন কিন্ত বাস্তবতা হলো পুরো বিপরীত, কুশপুত্তলিকা দাহ, পুনরায় নির্বাচন দাবী, দুর্নীতি ও টাকা লদিয়ে ভোট কেনাসহ খোদ নির্বাচন কমিশনার ও সংস্থাটির এমডির বিরুদ্ধেও নানা অভিযোগে একে অপরের বিপক্ষে মামলার প্রস্তুতি নিয়ে ধারাবাহিক সংবাদ সম্মেলন করে এক অশৈল্পিক আবহাওয়া তৈরি করতেও কুণ্ঠাবোধ করছেন না। আর সেই আলোচনা সমালোচনার তথ্যই যেন এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সংবাদ উপজীব্য।

অন্যদিকে ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠা ইউটিউব চ্যানেলগুলোও এসব বিষয়কে অতিরঞ্জিত করে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে যা এই শিল্পের ন্যূনতম সম্মানটুকুও অবশিষ্ট রাখছে না। অন্যদেশে যেখানে মহামারী পরবর্তী এই শিল্পকে কিভাবে নতুন করে বাচিয়ে তোলার চেষ্টা করা যায় তা ভাবা হচ্ছে সেখানে আমাদের শিল্পীরা নিজেরা নিজেদের কুৎসা রটনা নিয়েই ব্যাস্ত সামান্য নির্বাচনকে কেন্দ্র করে।শুধু তাই নয় এই শিল্প সংশ্লিষ্ট পরিচালক ও অন্যান্য ব্যাক্তিরাও নানা ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।

চলচ্চিত্র বা নাটককে বলা হয় সমাজের দর্পণ, জীবনের দর্শন অথচ আমরা গত কদিনে শিল্পীদের যে আচরণ প্রত্যক্ষ করছি তা সত্যিই হতাশাজনক তারা যেন অশৈল্পিক কুশীলবে পরিণত হয়েছেন। সাধারণ দর্শক তাদের কাছে এমনটা প্রত্যাশা করে না,নিজেদের সাময়িক বিভেদ ভুলে আপনাদের আমরা একই ছাতার নিচে দেখতে চাই।নির্বাচিত নেতাদের নিয়ে সরকার ও চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়ে ঝিমিয়ে পড়া সোনালী অতীতের চলচ্চিত্র শিল্পকে জাগিয়ে তুলুন, হলগুলো হোক দর্শকে পরিপূর্ণ। এই পেশার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিরা আবারও পুরোদমে তাদের কাজে ফিরে আসুক, এফডিসি প্রাঙ্গণ হয়ে উঠুক শিল্পীদের মিলনমেলায়, শুটিংয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠুক এফডিসির ফ্লোর গুলো আবারও জেগে উঠুক আমাদের চলচ্চিত্রের সেই সোনালী দিন।

 


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence