স্নাতক ফলে দীর্ঘসূত্রতা: হতাশা আর অনিশ্চয়তায় ভুগছে প্রত্যাশীরা
- জুনাইদুল ইসলাম
- প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২০, ১০:০৭ AM , আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১২:৫৭ AM
কষ্টগুলো ভারী হতে হতে নাকি জমাটা বাধাঁ নীরব ঘাতক হয়ে যায়। আমি বলি এটাকে কষ্টের পাথর যা আঘাত পেলেও ভাঙে না। তবে কষ্টটা ঠিকই পাওয়া যায় বা থেকে যায় যার পরিসমাপ্তি ঘটে ধ্বংসের পরিণতির মাধ্যমে।
যাহোক ধ্বংসটা কখনই কাম্য নয়, তারা বাঁচতে চায়, স্বপ্নকে বাঁচাতে চায়। লালিত সেসব ইচ্ছেগুলো যেগুলো প্রতিনিয়ত এই চ্যালেঞ্জিং সমাজে বাঁচাতে সাহয্য করে। দেশ ও মানুষের কল্যাণের অভিপ্রায় নিয়েই নিরন্তর পথচলা তদের। শত কষ্ট, ত্যাগ তিতীক্ষা আর পরিশ্রমের বিনিময়ে তারা হয়ে উঠে পরিবার, সমাজ ও দেশের আশা ভরসার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে।
হ্যাঁ, আমি তাদের কথা বলছি যারা নিম্ম মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান খুব আশা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে দীর্ঘ চার কিংবা পাঁচ বছর কারো আবার এর থেকেও বেশি সময় লেগে যায় অনার্স (সম্মান) ফাইনাল পরীক্ষা দিতে। দিয়েও ফলাফলের প্রতীক্ষায় থেকেও অনিশ্চয়তার মাঝে দিন কাটাতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিকাংশ বিভাগের সম্মানের ফাইনাল পরীক্ষা ডিসেম্বর মাসেই সম্পূর্ণ হয়ে থাকে। কোনো কোনো বিভাগে কোর্স সম্পূর্ণ না হওয়ার জটিলতার কারণে পরীক্ষা নিতে একটু দীর্ঘ হয়, তবে জানুয়ারি কিংবা ফেব্রুয়ারির দিকেই বিভাগ নিয়ে নেয়। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর ফলাফল পাওয়ার অপেক্ষা সেটা হতে পারে দেড় কিংবা দুইমাস তারপর প্রত্যাশিত ফলাফল। কৃতকার্য হওয়া শিক্ষার্থী আর তাদের পরিবারের জন্য একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস।
কারণ, বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সকল বাবা-মাই প্রত্যাশা করে অনার্স শেষ করে সরকারি বা বেসরকারি চাকরিতে আবেদন করবে। ভাগ্য ভালো হলে একটা চাকরি নিয়ে বিপর্যয় আর অভাবে থাকা সংসারের হাল ধরবে।
কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে ৬/৭ মাস অতিক্রম হলেও বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন পর্যন্ত অনার্স ফাইনাল পরীক্ষার ফলাফল দেয়া হয়নি তাছাড়া স্পষ্ট কোনো নোটিসও দেয়া হচ্ছে না। তাই শিক্ষার্থীরা অনিশ্চয়তা আর হতাশার মাঝে থাকতে হচ্ছে সাথে সাথে প্রতিটা শিক্ষার্থী এই করোনাকালে অস্বচ্ছল পরিবারের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে যার ফলশ্রুতিতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছে এসব শিক্ষার্থীরা।
বৈশ্বিক করোনা মহামারী প্রাদুর্ভাবে বিশ্ব যখন উদ্বিগ্ন সেখানে আমাদের দেশও এর ব্যতিক্রম নয় তারই ধারাবাহিকতায় ১৭ মার্চ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয় যার ফলশ্রুতিতে ঢাকা কিংবা ঢাকার বাহিরে থাকা শিক্ষার্থী যারা টিউশন করে শিক্ষা ও থাকার ব্যয়ভার বহন করত এবং পরিবারকেও সহযোগিতা করত সেই সুযোগটুকু তারা হারায়। তাই বাধ্য হয়ে অসচ্ছল পরিবারেই তাদেরকে অবস্হান করতে হচ্ছে।
যা না বললেই নয়, শিক্ষামন্ত্রী করোনকালে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন তা অবশ্যই প্রশংসনীয় ও যুগোপযোগী, শিক্ষার্থীবান্ধব সিদ্ধান্ত। এই করোনাকালে শিক্ষার্থীদের এই বিষয়টি গুরুত্বের সাথে আমলে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আটকে থাকা স্নাতক ফলাফলের দীর্ঘসূত্রতায় হতাশা আর অনিশ্চয়তায় ভুগছে শিক্ষার্থীরা। ফলাফল দিয়ে দেয়া হলে ভোগান্তিতে থাকা শিক্ষার্থীরা অনেক উপকৃত হবে বলে আশা করছি।
কারণ স্নাতকোত্তর বা মাস্টার্সে ভর্তি হওয়া অনিশ্চয়তা, কিছু কিছু সরকারি পরীক্ষার নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিচ্ছে সেখানে আবেদন করার যোগ্যতা হারানো কিংবা বেসরকারি চাকরি আবেদন অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। ফলে স্বাভাবিকভাবে পিছিয়ে পড়ছে স্নাতক ফলাফল প্রত্যাশী শিক্ষার্থীরা।
কয়েকদিন পূর্বে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের ১৪/১৫ সেশনের স্নাতক ফলাফল দিয়েছে এটা এই করোনার সময় শিক্ষার্থীদের জন্য নিঃসন্দেহে স্বস্তিদায়ক ছিলো। তাই বলব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যেহেতু করোনার সময়ে অনলাইনে ক্লাস অব্যাহত। তাই যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্বের সাথে আমলে নিয়ে খুব কম সময়ের মধ্যে যতদ্রুত সম্ভব স্নাতক ফাইনাল পরীক্ষার ফলাফল দিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং যাতে অনিশ্চয়তা আর সমস্যায় থাকা শিক্ষার্থীরা নব উদ্দীপনা ফিরে পেয়ে নতুনভাবে পথচলার সুযোগ পান।
লেখক: সমাজকর্ম বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।