নুরের জন্মই যেন মার খেতে

মো. আবু রায়হান-নুরুল হক নুর
মো. আবু রায়হান-নুরুল হক নুর  © টিডিসি ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসুর নির্বাচিত ভিপি নুরুল হক নুর বারবার ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের কতিপয় অতি উৎসাহী সন্ত্রাসীদের দ্বারা আক্রমণের শিকার হয়েছেন।

গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু)ভিপির রুমের আলো নিভিয়ে ভিপি নুরসহ তার অনুসারীদের পেটায় কথিত গজে উঠা মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতা-কর্মীরা। এই মঞ্চের অনেকেই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী।

এ সময় নুরের সঙ্গে থাকা বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের অন্তত ৩০ জনকে বেধড়ক মারধর করা হয়। তাদের মধ্যে গতকাল রাত পর্যন্ত ১৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। দুজন আইসিইউতে ভর্তি। এই আক্রমণ সম্পূর্ণ সন্ত্রাসী কায়দায় করা হয়েছে তাকে নিঃশেষ করার উদ্দেশ্যে। এ পর্যন্ত প্রায় দশবারের মতো জীবন নাশের উদ্দেশ্যে নুরের ওপর হামলা করা হয়েছে কোনো কারণ ছাড়াই।ঢাকার বাইরে বি-বাড়ীয়া ,বগুড়া, নিজ জেলা পটুয়াখালীতেও ক্ষমতাসীন দলের নেতা কর্মীরা তার ওপর হামলা চালিয়েছে। রাষ্ট্রযন্ত্রের কর্তারা দেখেছেন, চুপ থেকেছেন। কারো বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আজ যদি নুরের ওপর হামলাকারী একজনের বিরুদ্ধে প্রশাসন আইনানুগ ব্যবস্থা নিতো তাহলে এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতো না। গতকাল ডাকসু অফিসে যেভাবে নুরসহ তার অনুসারীদের নির্যাতন করা হয় তা পৈশাচিক তো বটেই এবং নিন্দার অযোগ্য। মানুষ গড়ার আঙিনায়, সভ্যতার উন্মেষ ঘটানোর পাদপীঠে অসভ্য জন্তু জানোয়ারদের এই নির্মমতা বিবেকবান মানুষ মেনে নিতে পারে না। তারা যাই হোক মানুষ নই, মানুষ নামের কুলাঙ্গার, জাতির জন্য পাপ। এদের সমূলে বিনষ্ট করতে না পারলে জাতি এদের দায় এড়াতে পারবে না।

মুক্তিযুদ্ধ নামের পবিত্র ও আবেগের শব্দটি তারা ব্যবহার করে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের এরা অবমাননা করেছে। এসব কুলাঙ্গার, দুস্কৃতকারীদের অবিলম্বে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া উচিত। সোনার ছেলেরা যে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠনকে ব্যবহার করে একটার পর একটা দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে এর দায়ভার কার? এদের লাগাম টেনে ধরে এদের প্রকৃত রাজনীতির ছবক দেওয়া হোক। এরা রাজনীতির চেয়ে বিশৃঙ্খলা ও হালুয়া রুটি বেশি পছন্দ করে। নুরের ওপর পৈশাচিক হামলার পর দু'কলম না লিখাটা সত্য থেকে দুরে থাকা। মিথ্যার সঙ্গে ঘর বসতি করার মতো। যে যে দলই করুক না কেন যেকোনো অবিচার, মানবাধিকার লংঘন, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়াটা বিবেকের দায়বদ্ধতা। চুপ থাকাটা বিবেক প্রতিবন্ধিতার শামিল। পদ পদবী, সরকারি চাকরি ইত্যাদির কারণে সত্যের পক্ষে আওয়াজ তোলা বাধা হতে পারে না।

আজ আপনার সত্য বিমুখতা, নীরবতা সমাজের দুর্গতি, মানুষের কষ্ট ও দুর্ভোগ বাড়াবে। সুতরাং অন্যায় যেখানেই মাথা চাড়া দেবে সেখানেই এর কবর রচনা করতে হবে। আপনি চুপ থাকলে সেই অন্যায় আপনার ওপরেও একদিন বর্তাবে। সো বি কেয়ারফুল। এতো আনন্দ, হাসি খুশির কিছু নেই।ছোট বেলা থেকে পড়ে আসছি নিশীথ সূর্যের দেশ নরওয়ে তা ঠিক আছে। এর সঙ্গে নতুন পড়া যুক্ত হয়েছে নিশীথ ভোটের দেশ বাংলাদেশ। এই নিশীথের ভোট জনগণের বাক স্বাধীনতা, সরকারের জবাবদিহিতা কেড়ে নিয়েছে। যে কারণে অন্যায় অপরাধের মাত্রা দিনদিন বেড়েই চলেছে। এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে নুর অতন্দ্র প্রহরী। যুলুমবাজ, শোষকের বিরুদ্ধে ব্জ্র নিনাদ। তাইতো নুর আজ সুবিধালোভী শোষকের কোপানলে। নুরের সেই বিখ্যাত বক্তব্য যেন শোষকের বিরুদ্ধে নিষ্পেষিত জনগণের কণ্ঠ, "বেঁচে থাকলে লড়াইটা চলবে; মরে গেলে তোমরা চালিয়ে নিও।"আমি মনে করি নুর বিশাল জলরাশির মাঝে জেগে উঠা একখন্ড দ্বীপ। যে দ্বীপে আশ্রিত কূলহারা, সহায় সম্পত্তি হারা অসহায় মানুষ। নুর তো বিশাল আকাশের পূর্ণিমা শোভিত জোৎস্না। যে জোৎস্নার আলোয় আলো বঞ্চিতদের পথের দিশা। নুর তো পাহাড় বেয়ে নেমে আসা ফোয়ারা। যেখানে তৃষ্ণার্তদের নিরাপদ বিশুদ্ধ জলের সম্ভার।নুর তো কবি ফররুখ আহমেদের পাঞ্জেরি। নুর সৈয়দ শামসুল হকের নূরুলদীন, ... মৃতযুসময নূরুলদীন বলে যায়- হামার মরণ হয়,জীবনের মরণ যে নাই।

নুর হলো এদেশের নির্যাতিত নিপীড়িত অসহায় ছাত্রদের অধিকার আদায়ে ব্জ্রকণ্ঠ। জাগো বাহে কোনঠে সবায়? দুর্নীতিবাজ, লুটেরাদের নির্ঘুম রাত। সেই নুরকে স্তব্ধ করতে পারলে সন্ত্রাসী, মাস্তানদের বাজিমাত। সেই মিশনকে সামনে রেখে আতঙ্কবাদীদের এই নির্মতা, পৈশাচিকতা। হায়েনার দৃষ্টি।সত্যের পক্ষে বুক টান টান করে যে দন্ডায়মান তাকে পরিণত করা হয়েছে নির্ভুল টার্গেটে। নুর কেন বারবার টার্গেট করে হামলা করা হচ্ছে?প্রথমত : নুরের ব্যাপক জনসমর্থনে ঈর্ষান্বিত সরকারি দলের ছাত্র সংগঠন। বিগত একযুগের ছাত্ররাজনীতি পর্যালোচনা করলে এটা পরিষ্কার সরকারি দলের ছাত্র সংগঠন ছাড়া বিরোধী মতের কোনো ছাত্র সংগঠন এতোটা ফোকাসিং পয়েন্টে ছিল না। বর্তমান সরকারের সময় বিগত প্রায় বছর তিনেক ধরে কোটা সংস্কারের দাবিতে সংঘঠিত সংগঠনটি ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনকে জনপ্রিয়তাকে ছাড়িয়েছে, যা ছাত্রলীগের গাত্রদাহের কারণ।

দ্বিতীয়ত: সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ইতিবাচক ধারণা এবং তাদের সমর্থন। কোটা সংস্কার আন্দোলন ও নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন যার প্রকৃষ্ট প্রমাণ।
তৃতীয়ত : ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন আপাদমস্তক টেন্ডারববাজি, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ, চাঁদাবাজি, গুম খুনে ব্যস্ত। এতে সংগঠনটির জনপ্রিয়তা শূন্যের কোটায়।সেখানে বিকল্প হিসাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে ভরসাস্থল নুর ও তার সংগঠন ।
চতুর্থত: বর্তমান বাকস্বাধীনতা তিরোহিত, গণতন্ত্র নির্বাসিত, উন্নয়নতন্ত্র বুলি আউড়িয়ে সুবিধাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। লুটেরা, চাঁদাবাজ দিয়ে দেশ ভরপুর। নুর এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে ব্জ্রকন্ঠ। তার প্রতিবাদী কণ্ঠকে স্তব্ধ করতে বারংবার এই পৈশাচিক হামলা।
পঞ্চমত: ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের যারা কিছু পাবার আশায় রাজনীতি করেছিল তারা নিরাশ। কেননা নুর তাদের অপকর্মের বিরুদ্ধে সব সময় সোচ্চার। নুর তাদের হালুয়া রুটি অর্জনে প্রধান বাধা।

ষষ্ঠত : ডাকসুর ২৫ জন সদস্যের মধ্যে নুররা মাত্র দুজন। বিভিন্ন অভিযোগে, ভয়ভীতি দেখিয়ে, দুর্নীতিবাজ আখ্যা দিয়ে এদের বিদায় করতে পারলে ডাকসুর বিগত আটাশ বছরের সব সম্পদ লুটেপুটে খাওয়া যাবে।এপথে নুর তাদের প্রধান বাধা।এই এজেন্ডা বাস্তবায়নে সরব পদ হারানো সাধারণ সম্পাদক। শেয়ালের লেজ কাটার পর সব শেয়ালের লেজ কাটার মতো এখন তার অবস্থা। নিজে চাঁদাবাজির অভিযোগে পদ খুইয়ে নুরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে পদত্যাগে সংবাদ সন্মেলন করে বিষয়টা খুবই হাস্যকর দেখায়।যখন সে বলে "নুর আহত নাকি নিহত হয়েছেন, ডাজ নট ম্যাটার।" তাহলে তার কাছে ম্যাটার কি?এক কথায় বলা যায়, সত্য উচ্চারণে কেউ যেন সামনে না দাঁড়ায়। নুর ওদের টেন্ডারে বাধা, নুর ওদের অপকর্মে বাধা, নুর ভিপি পদে নির্বাচিত হয়ে ওদের অনাথ করেছে।পরাজয়ের গ্লানি ওরা ভুলতে পারিনি। নুরের জনপ্রিয়তায় ওরা ঈর্ষান্বিত। তাই তো নুরের ওপর এতো হামলা। নুর দুর্নীতি করেছে, চাঁদাবাজি করেছে। আজ রাষ্ট্রযন্ত্র, দুদক সবই তাদের নিয়ন্ত্রণে।তারা তো ইচ্ছে করলেই

অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নিতে পারে।দুর্নীতির প্রমাণ না করে নুর দুর্নীতি করেছে বলাটা তো সত্যের অপালাপ।ভিপি নির্বাচিত হবার পর কয়েক দফা হামলার শিকার হন নুর। ছয়দিনের ব্যবধানে দুই বার হামলার শিকার হলেন নুর। কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের মাধ্যমে তিনি দেশের ছাত্রসমাজের মধ্যে যে আস্থা তৈরি করেছেন, তা নিয়েই একটি মহল আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। যার ফলে অন্যায়ভাবে তার ওপর বারবার এভাবে হামলা করা হচ্ছে। মহানবী (সা.) বলেন '‘আল্লাহ অত্যাচারীকে অবকাশ দেন। অবশেষে যখন তাকে পাকড়াও করেন তখন তার পলায়নের অবকাশ থাকে না।"


সর্বশেষ সংবাদ