শীত আসছে, আপনি প্রস্তুত তো!

হেমন্তের ভোর
হেমন্তের ভোর  © টিডিসি ফটো

হেমন্তের ভোর। ভোরের আকাশে ছড়িয়ে আছে কুয়াশা। হিমেল আবেশে স্তব্ধ চরাচর। সুন্দর সকাল ও কুয়াশার চাদরে মুড়ে যাচ্ছে আমাদের চারপাশ। আর কুয়াশার প্রলাপে ঢেকে আছে আমাদের দৃষ্টিসীমা। ধান ও গাছের ডগায় আলগতে পা ফেলে নামছে কুয়াশা।

ফসলের মাঠে ও ঘাসের ডগায় উঁকি দিচ্ছে মুক্তময় শিশির। শিশির জন্মেছে গাছের পাতায়, ঘাসের ডগায়, শস্যক্ষেত্রে। শিশির বিন্দু টুপ-টাপ শব্দ আর মৃদু শীতলতা ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। গাছের মাথার উপরে জমাটবদ্ধ মেঘের আদলে শীতের হাতছানি দিচ্ছে হিমেল বাতাস। কুয়াশার ফাঁক গলে উঁকি দিচ্ছে কুয়াশায় চাদরে মোড়ানো মিষ্টি সূর্য। প্রকৃতির এই হিম শীতল বন্দনায় জানান দিচ্ছে ঋতু পরিবর্তনের খবর।

এদিকে শহরে একটু শীত দেরিতে আসে। কিন্তু হেমন্তের এই সময়ে গ্রামীণ জনপদে টের পাওয়া যাচ্ছে শীতের আগমন। শীতকাল আসন্ন। তাই আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার কবিতায় শীতের বার্তা এভাবে দিয়েছেন-

‘‘হেমন্তের ঐ শিশির নাওয়া হিমেল হাওয়া
সেই নাচনে উঠল মেতে।
টইটুম্বুর ঝিলের জলে
ফাঁটা রোদের মানিক জ্বলে
চন্দ্র ঘুমায় গগন তলে
সাদা মেঘের আঁচল পেতে।’’

সকালের সোনা রাঙ্গা রোদ বাড়িয়ে দিয়েছে মাঠের- পথের উজ্জ্বলতা। গ্রামের মাঠে যতদূর চোখ যাচ্ছে শুধু সবুজ ধান। গ্রামের ঘরে ঘরে এখন চলছে নতুন ধানের উৎসব। খেজুর রসের মৌ মৌ ঘ্রাণ আর নানা রকম পিঠাপুলির আয়োজন।

আবার অনেকেই হেমন্তের শেষ ভাগকে মনে করেন পিঠা-পায়েসের মহোৎসব। কুয়াশাযুক্ত হিমশীতল সকালে পিঠা খেতে কার না ভালো লাগে। গ্রামে কি শহরে, সবখানে এখন চলছে পিঠা উৎসব। নতুন ধানের চালের গুঁড়ি আর খেজুর গুড় দিয়ে বানানো পিঠা ছোট-বড় সবার পছন্দ। খেজুরের গুড় আর নতুন চাল দিয়ে তৈরি হয় মজাদার পিঠাপুলি।

এগুলোর মধ্যে যেমন- ভাঁপা পিঠা, ছাঁচ পিঠা, ছিটকা পিঠা, আস্‌কে পিঠে, চাঁদ পাকন পিঠা, ছিট পিঠা, পুলি পিঠা, পাতাপিঠা, পাটিসাপটা, পাকান পিঠা ইত্যাদি। সেজন্যেই পিঠাকে ঘিরে পল্লী মায়ের কোল কবিতায় বাংলাদেশের বিখ্যাত কবি বেগম সুফিয়া কামাল লিখেছেন,

‘‘পৌষ পার্বণে পিঠা খেতে বসি খুশীতে বিষম খেয়ে,
আরও উল্লাস বাড়িয়াছে মনে মায়ের বকুনি পেয়ে।’’

এতো গেল পিঠাপুলির কথা।এবার আসি শাকসবজির দিকে। শাকসবজির কথা বলতে গেলে ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, লালশাক, পালংশাক, মুলা, শালগম, শিম, টমেটো, পেঁয়াজ পাতা, লাউ, ব্রোকলি, মটরশুঁটি, গাজর, ধনিয়াপাতা ইত্যাদি কথা মনে পড়ে।

নানা ধরনের বৈচিত্র্যতায় আর নতুনত্বে হেমন্তের শেষ ভাগ অন্যান্য ঋতু থেকে আলাদা। ফ্যাশন থেকে শুরু করে তাই নিত্যদিনের খাবার তালিকাতেও এর উপস্থিতি চোখে পড়ে। এ সময়ে খাবার তালিকাতে আসে বেশ পরিবর্তন।

খাবার তালিকার কেবল শাক সবজি নয় ফলের দিক থেকে হেমন্তের শেষ সময়ে দেখা মেলে নানা ধরনের মুখরোচক ফলের। এ সময়ে অন্যান্য সময়ের তুলনায় ফলের সমারোহ অনেকাংশে বেশি। এ সময় দেখা মেলে বরই, জলপাই, আমলকি, সফেদা, কমলালেবু, আপেল আর ডালিমের ইত্যাদি ফলের।

প্রকৃতির এই পরিবর্তন মুগ্ধ করে মানুষকে। কিন্তু খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের কাছে এই শীত বেশ কষ্টের। কারণ আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ প্রান্তিক জনগোষ্ঠী শ্রেণীর। যারা খেটে খায়। যাদের সামর্থ্য নেই শীতনিবারক ভালো বস্ত্র কেনার। যার কারণে এই শীতে তাদের কাছে খুবই কষ্টের। দেশের ভিন্নপ্রান্তে জমতে শুরু করেছে কুয়াশা। ঋতু হিসাবে শীতকাল শুরু না হলেও রাতের শেষভাগে এখন পাওয়া যাচ্ছে হিমেল অনুভূতি। হেমন্ত প্রায় শেষ। শীত আসতেছে। আপনি প্রস্তুততো!

লেখক: শিক্ষার্থী জার্নালিজম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence