রাজনীতির ওপেন সিক্রেট

  © টিডিসি ফটো

রাজনীতিতে একটা ওপেন সিক্রেট আছে। যারা ২৯(কার্ড গেম) খেলেন তারা ভালো বুঝতে পারবেন। ২৯(কার্ড গেম) খেলার নিয়ম আপনি যদি ঠিকঠাকভাবে জানেন তারপরেও খেলায় জিততে হলে আপনাকে কোনো ভুল করা যাবে না। আপনার একটা ভুল প্রতিপক্ষের জন্য অনেক বড় একটা সুযোগ তৈরি করে দিবে। একটা ভুলের কারনে আপনি পয়েন্ট হারাতে পারেন।

তেমনি রাজনীতিতে একটা ভুল বিরোধী দলকে অনেক বড় একটা সুযোগ তৈরি করে দিতে পারে। ২৯ খেলার আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আপনাকে অসৎ হতে হবে। আপনি যতো বেশি অসৎ হবেন এবং এই অসততায় ধরা খাবেন না আপনি ততো বড় মাপের খেলোয়ার। আপনাকে অসৎ হতে হবে এই কারণে যে আপনার প্রতিপক্ষও অসৎ পন্থা অবলম্বন করবে। আপনি সাধু থেকে জিততে পারবেন না। আর আপনি যদি অসৎ পন্থা অবলম্বন করে ধরা খান তাহলে আপনি তো পয়েন্ট পাবেনই না উল্টা আপনার পয়েন্ট থেকে মাইনাস করা হবে।

রাজনীতির এটাই ওপেন সিক্রেট যে অসৎ হতে হবে এবং ধরা খাওয়া যাবে না(ব্যতিক্রম আছে)। আমার কাছে বাংলাদেশের রাজনীতির সবথেকে ঘৃণার জায়গা হচ্ছে কাঁদা ছোড়াছুড়ি করা। একদল কোনো অন্যায় করলে দোষ তো স্বীকার করবেই না উল্টো বলে দিবে ওইদল তো এর থেকেও খারাপ কিছু করেছে। বিষয়টা এরকম যে অন্যদল কোনো অন্যায় করলে সেই অন্যায় করা জায়েজ হয়ে যায়। এতে ভুক্তভোগী হয় সাধারণ মানুষ। সাধারণ মানুষ রাজনীতির বলি হয়। এতে হয় সরকারের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাবোধ তো বারেই না উল্টো ক্ষোভ ঘৃণার জন্ম নেয়।

জনগণ অতীতের কথা মনে রাখে না, তারা চায় ফলাফল।এতে করে সরকারি দল বিপুল পরিমাণে জনপ্রিয়তা হারায়। তখন জোড় করে ক্ষমতায় টিকে থাকার প্রবণতা বেড়ে যায় সরকারের। এর থেকে যদি সরকারি দল ভুল স্বীকার করতে জানতো, ২/ ৪ জন ভুল স্বীকার করে পদত্যাগ করতো জনগণের আস্থা অনেকাংশেই বেড়ে যেতো, উন্নত দেশে এটাই হয়ে থাকে।

বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুবই বিচক্ষণ এবং বুদ্ধিসম্পন্ন একজন রাজনীতিবিদ। তাকে জ্ঞান দেয়া আমার শোভা পায় না। তবুও বলি কেউ যদি দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়ে পদত্যাগ করতে নাও চায় প্রয়োজনে তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করান। এতে আপনি যদি তার সমর্থন নাও পান আপনার জনপ্রিয়তা অনেকাংশেই বেড়ে যাবে। জনগণই চাইবে আপনাকে যুগ যুগ ধরে ক্ষমতায় টিকায় রাখতে। অন্য কেউ কি ভাবে জানি না, তবে বর্তমান বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ নয়। এরকম বাংলাদেশের স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু দেখতেন না যেখানে ভাইয়ের হাতে অন্য আরেক ভাই খুন হয় শুধুমাত্র মতের বিরোধিতার কারণে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্যই এদেশের মানুষ বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে জীবনের মায়া ত্যাগ করে নির্দ্বিধায় যুদ্ধে ঝাপায় পড়েছিলো। শুধু সরকারকে এটাই বলবো যে এমন কিছু করবেন না যাতে দিনশেষে বলতেই হয় আমাদের স্বাধীন হওয়াটাই ভুল ছিলো, এদেশের স্বাধীনতার প্রয়োজন ছিলো না। গণতন্ত্রকে হত্যা করবেন না, এমন কিছু করবেন যেন জনগণের স্বার্থ রক্ষা হয়। তাহলে জনগণ আপনাকে যুগ যুগ মনে রাখবে শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধু কন্যা হিসেবে নয় একজন সত্যিকারের দেশরত্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হিসেবে। মন্দের ভালো হয়ে থাকবেন না। জনগণের আস্থা অর্জন করে এক এবং একমাত্র অপশন হয়ে ওঠেন, জনগণের আস্থার প্রতীক হয়ে ওঠেন, একজন তুচ্ছ বাংলাদেশী হিসেবে এই শুভকামনা থাকবে।

বাংলাদেশী হিসেবে আমাদের করণীয়: জানিনা পুরো একটা জাতিকে জ্ঞান দেয়া আমার মতো তুচ্ছ একজন মানুষের জন্য কতোটা যৌক্তিক। তবুও বলি একটা দেশের উন্নয়ন শুধুমাত্র সরকারের একার পক্ষে করা প্রায় অসম্ভব। দেশের উন্নয়ন করতে হলে আগে জাতি হিসেবে আমাদের উন্নত হতে হবে। শুধুমাত্র সরকারের উপর দোষ চাপায় দিয়ে সাধু সেজে বসে থাকবেন না। অনেক অনিয়মের জন্য জাতি হিসেবে আমরাই দায়ী। সরকার নয়। দলকানা হয়ে বসে থাকবেন না। আত্মসমালোচনা করতে শিখুন। সাহসী হয়ে উঠুন। অন্যায়কে প্রশ্রয় দিবেন না, নিজেও অন্যায় করবেন না। অপরাধকে অপরাধ বলতে শিখুন। সেটা শুধুমাত্র ফেইসবুক জীবনে নয় বাস্তব জীবনেও। ফেইসবুকে দুই চারটা কথা সবাই লিখতে পারে বাস্তব জীবনে কে কতটা সচেতন এবং দায়িত্বশীল সেটাই মূখ্য বিষয়। সমালোচনা সবার জন্যই প্রযোজ্য সে যে দলই হোক না কেন। তাহলে একসময় দেখবেন দলগুলোও সাবধান হয়ে যাবে। দলগুলোও তখন দূর্নীতিগ্রস্থ রাজনীতিবিদকে ছাটাই করা শুরু করবে। অনিয়ম দূর্নীতি অপরাধ কমতে কমতে একসময় শূন্যের কাছাকাছি পৌঁছে যাবে। জাতি হিসেবে আমরা দায়মুক্ত হবো। স্বাধীনতার সত্যিকারের অর্থ খুঁজে পাবো। জাতি হিসেবে হবো উন্নত। দেশও উন্নতির সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছে যাবে।

শিক্ষার্থী, তথ্য ও যোগাযোগ প্রকৌশল বিভাগ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস।


সর্বশেষ সংবাদ