সততা নিয়ে বাঁচার অধিকার চাই
- আনোয়ার হোসেন সংগ্রাম
- প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০১৯, ০৪:০৮ PM , আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০১:৪২ PM
অন্যায়, জুলুম, অত্যাচার আর অবিচার মেনে না নিয়ে বরং অন্যায়ের বিপক্ষে প্রতিবাদ করার সাহস করতে হবে। তাহলে দেখা যাবে একদিন অন্যায় সমাজ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হবে।
যত রকমের অন্যায়, জুলুম, অত্যাচার আর অবিচার হয় পুলিশের নিম্ন পদের দিকে। চব্বিশ ঘণ্টার পুলিশের চাকুরীতে নিয়োজিত হবার পর থেকে এক দিকে সাধারণ মানুষ পুলিশ সদস্যদের চরম ঘৃণার চোখে দেখেন, অপরদিকে সিনিয়র অফিসারেরা (অবশ্য সবাই নয়) তাঁহাদের নিম্ন পদের পুলিশ সদস্যদের হয়রানী মুলকভাবে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে বদলী করিয়ে মানবতা বিরোধী অপরাধের দৃষ্টিতে সাজা দেওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে থাকেন।
বড়দের সন্তানেরা ঢাকায় রেখে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে কিংবা দেশের বাহিরে রেখে মানুষ করার সুযোগ পান। অপরদিকে নিম্ন পদের লোকজনদের সন্তানদের লেখাপড়া শেখানোর সুযোগ কোথায়? উদাহরন স্বরূপ আমার বড় ছেলে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র। ইতিপূর্বে ৮টি স্কুল পরিবর্তন করে বর্তমানে তারা ৯নং স্কুল হলো বরিশাল জিলা স্কুল। অনেক সদস্যদের সন্তানেরা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যায়।
পুলিশের সিনিয়র অফিসারেরা অনেক বড় ধরনের মানুষিকতা, নৈতিকতা আর ব্যক্তি সত্ত্বার অধিকারী হয় বলে জুনিয়র পুলিশ সদস্যদের প্রতি ওই রকম অমায়িক মার্কা আচরণ করে থাকেন।
এমন অন্যায় মেনে নেওয়ার নৈতিকতার বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া জরুরী, অন্যায় হজম করার দিন বর্জন করতে হবে এবং প্রতিবাদ করে বাঁচতে শিখতে হবে। একজন পুলিশ অফিসারকে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে বদলী করে হয়রানী করার নমুনা নিম্নরুপঃ
১) পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ঢাকার স্মারক নং-নিয়োগ/৮৭২০১৪/২০০৫/১(২৭),তারিখ-২৯/০৫/২০১৪ ইং মুলে ঝালকাঠি জেলা হইতে রংপুর রেঞ্জের মাধ্যমে কুড়িগ্রাম জেলায় আমাকে বদলী করে ছিলেন।
২) পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ঢাকার বিজ্ঞপ্তি নং-নিয়োগ/১০৮-২০১৫/৪১৬৫, তারিখ-০৮/০৭/২০১৫ ইং মুলে কুড়িগ্রাম জেলা হইতে নৌ-পুলিশে আমাকে বদলী করেছিলেন।
৩) পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ঢাকার স্মারক নং-নিয়োগ/২৩৮-২০১৩/৫০১২/১(৬), তারিখ-২৩/০৮/২০১৫ ইং মুলে বিএমপি বরিশালে আমাকে বদলী করেছিলেন।
৪) পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ঢাকার বিজ্ঞপ্তি নং-নিয়োগ/১০৪-২০১৬/৪৬৭২/১ (২০), তারিখ-৩১/০৭/২০১৬ ইং মুলে বিএমপি বরিশাল হইতে টুরিস্ট পুলিশে আমাকে বদলী করেছিলেন।
৫) পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ঢাকার স্মারক নং- ৪৪.০১.০০০০.০১২.০১০.০১৮.১৭/২১৫৭/ ১(৪২), তারিখ- ১৬/০৪/২০১৭ ইং মোতাবেক বিএমপি, বরিশাল হইতে সিএমপি, চট্টগ্রামে আমাকে বদলী করেছিলেন।
আমাকে শুধু সারা বাংলাদেশে হয়রানী মূলক বদলী করেই থেমে থাকেন নাই। জামায়াত প্রেমী ঝালকাঠি জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, মহিদুল সাহেবের দেওয়া মিথ্যা মনগড়া প্রতিবেদনে আমার নামে ঝালকাঠি জেলার বিভাগীয় মামলা নং- ০৪/২০১৪, তারিখ- ২৯/০৫/২০১৪ ইং রুজু করেছিল। যা নিরপেক্ষ তদন্ত শেষে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আমাকে গত ১৪/০৮/২০১৪ ইং তারিখ মামলা থেকে অব্যহতি প্রদান করা হয়।
তাঁর প্রথম টার্গেট মিস হওয়ায় পুনরায় বেনামী অভিযোগের ভিত্তিতে তিঁনিই প্রতিবেদন দাখিল করে ঝালকাঠি জেলার বিভাগীয় মামলা নং- ০৪/২০১৫, তারিখ- ০৬/০৯/২০১৫ ইং রুজু করেছিল। সেই মামলাটিও নিরপেক্ষ তদন্ত শেষে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আমাকে গত ০৫/০৬/২০১৬ ইং তারিখ মামলা থেকে অব্যহতি প্রদান করা হয়।
তাঁর দ্বিতীয় টার্গেটও মিস হওয়ায় পরে ২০১৫ সালের নিস্পত্তিকৃত বিভাগীয় মামলা নতুনভাবে অর্থাৎ ২০১৭ সালে উপস্থাপনের মত বিরল ঘটনারও সৃষ্টি করেছিলেন তিনি। সেই পুনরুজ্জীবিত মামলা এম এম মাহামুদ হাসান ঝালকাঠি জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল তদন্ত শেষে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় আমাকে গত ২০১৭ সালে মামলা থেকে অব্যহতি প্রদান করেন।
জামায়াত প্রেমী পুলিশ অফিসারের উপরোক্ত হয়রানী মূলকভাবে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে বদলী এবং বিভাগীয় মামলা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য মাননীয় মহা-পুলিশ পরিদর্শকের কাছে ন্যায় বিচারের আবেদন করলে তিনি তাৎক্ষনিক ডিআইজি, বরিশাল রেঞ্জ মহোদয়কে অনুসন্ধান করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। কিন্তু ডিআইজি মহোদয় অপরাধীকে সহায়তা করার জন্য বিষয়টি নিজে তদন্ত না করে তাঁর পোষ্য সহকারী পুলিশ সুপার জনাব ফজলুল করিম, স্টাফ অফিসার টু ডিআইজি রেঞ্জ কার্যালয়, বরিশালকে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
কিন্তু মহিদুল ইসলাম একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আর তদন্তকারী কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ সুপার হওয়াতে তদন্তকারী কর্মকর্তা আমাকে না ডেকে আমার কোনরূপ আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে মহিদুল সাহেবের পক্ষে প্রতিবেদন দাখিল পূর্বক আমার বিরুদ্ধে উল্টো বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেন। যার প্রেক্ষিতে কুড়িগ্রাম জেলার বিভাগীয় মামলা নং-০১/২০১৫, তারিখ-০৮/০১/২০১৫ ইং রুজু করে পুনরায় একইভাবে নিয়ম বহির্ভূত ক্ষমতার অপব্যবহার করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধের অভিযোগ একজন সহকারী পুলিশ সুপার কর্তৃক অনুসন্ধান করা হয়েছিল। তদন্তকারী কর্মকর্তা অনৈতিকভাবে সিনিয়রকে খুশি করার জন্য আমাকে সাজা প্রদান করে ছিলেন। ওই সাজার বিরুদ্ধে আমি বিজ্ঞ আদালতে আপীল করিলে বিজ্ঞ আদালত আমাকে গত ২০১৭ সালে বেকসুর খালাস প্রদান করে।
আমি উপরোক্ত হয়রানীর প্রতিবাদ না করে বরং নীরবে সকল অত্যাচার/অবিচার হজম করতাম তাহলে আজ হয়তো ইন্সপেক্টর হওয়ার সকল পর্যায় অতিক্রম করে পদোন্নতির দৌড় গোড়ায় পৌঁছে যেতাম। তখন হয়তবা সাহস করে লিখতে পারতাম না যে, সততা নিয়ে বাঁচার অধিকার চাই।
এমন অন্যায় মেনে নেওয়ার দিন শেষ বরং প্রতিবাদ করে বাঁচতে শিখতে হবে। একজন অফিসারকে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে বদলী করে হয়রানী করবে তখনই দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে। আমার পাওয়ার কিছু নাই আর হারাবারও কিছু নাই। আমি প্রতিবাদ করেই যাবো। তাতে বদলী যতোবারই হোক। প্রতি ইউনিটে কিছু সংখ্যক অফিসার যুগের পর যুগ কাটিয়ে দিলেও তাহাদের কখনো কোথাও বদলী হয় না।
আবার কাউকে বছরে কয়েকবার বদলী করা হয়। উপরের বিষয়গুলো পুলিশের কর্ণধারদের দৃষ্টিগোছরে পৌঁছাতে হবে। দুর্নীতি দমন কমিশনের নিকট নির্ভরযোগ্য তথ্য দিয়ে নাগরিক হিসাবে ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। পুলিশ হলেও আমরা এই দেশেরই নাগরিক। অন্যান্য নাগরিকদের মতো আমাদেরও সততা নিয়ে বাঁচার অধিকার নিশ্চিত করাও রাষ্ট্রের দায়িত্ব আর এখানে রাষ্ট্র বলতে দুর্নীতি তদারকি সংস্থাকে বুঝানো হয়েছে।
আমি ইতপূর্বে ২০১২ সালে ভোলা সদর থানাতে চাকুরী করেছিলাম। তখনও বেশ কয়েকবার আমাকে শ্রেষ্ঠ এসআই হিসাবে পুলিশ সুপার, ভোলা মহোদয় নির্বাচিত করেছিলেন। আমি ২০১৩-২০১৪ সালে ঝালকাঠি সদর থানাতে চাকুরী করেছিলাম। তখন বাংলাদেশের সংকটময় মূহুর্ত চলছিলো। অর্থাৎ একটি বাহিনী সারা বাংলাদেশে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার মানষে ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড পরিচালনার অপতৎপরতায় লিপ্ত ছিল।
ওই পরিস্থিতি রোধকল্পে ঝালকাঠি জেলা শহরের গ্রেফতার হওয়া এসব রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসীদের মধ্যে শতকরা ৯০ ভাগ আমার একার নেতৃত্বে গ্রেফতার করায় বেশ কয়েকবার আমাকে শ্রেষ্ঠ এসআই হিসাবে পুলিশ সুপার, ঝালকাঠি মহোদয় নির্বাচিত করেছিলেন।
সর্বশেষ ২০১৫-২০১৬ সালে আমাকে বিএমপি, বরিশালের গোয়েন্ধা শাখা (ডিবি) তেও বেশ কয়েকবার শ্রেষ্ঠ এসআই হিসাবে মাননীয় পুলিশ কমিশনার মহোদয় নির্বাচিত করেছিলেন।
উপরোক্ত মতামত প্রকাশ করার জন্য আবারো আমাকে হয়রানী মূলকভাবে বদলী করাতে পারে সেটাই স্বাভাবিক। তবুও আমি অন্যায়ের প্রতিবাদ করে যাবো ইনশাআল্লাহ। আর এভাবেই দেশ একদিন দুর্নীতিমুক্ত হবে। তাই তো আমরা সততা নিয়ে বাঁচার অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।
যেহেতু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গত ২৬/০১/২০১৯ ইং তারিখ তাঁহার ভাষণে দেশ থেকে দূর্নীতি নির্মুলে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন সেহেতু প্রত্যেকের অবস্থান থেকে অন্যায়ের প্রতিবাদ করে দেশ থেকে দূর্নীতি নির্মূল করার সার্বিক সহায়তা করা নাগরিক হিসাবে সকলের দায়িত্ব ও কর্তব্য।