গল্প: বিসিএস হয়নি বলে...

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি  © ফাইল ফটো

ঢাকায় বিসিএস কোচিংয়ে শিমুর সঙ্গে রাহাতের পরিচয়। শিমু খুবই পরিশ্রমী উদ্যমী মেধাবী মেয়ে। মমতাময়ীও বটে । তার মধ্যে স্নেহ, প্রেম, আবেগ, রোমান্স, ভালবাসা টইটম্বুর। ইডেন থেকে ইতিহাসে অনার্স মাস্টার্স কমপ্লিট করা। সদ্য পাশ করে বের হয়েছে। একাডেমিক রেজাল্ট খারাপ না। চাকরির পড়াশোনাতেও সো ফাস্ট। মানে খুবই গতিশীল ও চটপটে স্বভাবের।সহজেই সবকিছু মনে রাখতে পারে।পাঁচ ভাই দুই বোনের সংসার। বাবা মা বেঁচে আছেন। ভাইবোনদের মধ্যে সে সবার ছোট। স্বাভাবিকভাবেই শিমু সবার আদরের।

এক সময় ঢালিউড কাঁপানো নায়িকা শাবনূরের সাথে তার ফেসের মিল থাকায় পরিবারের অনেকে তাকে শাবনূর নামে ডাকে। তাকে নিয়ে পরিবারের স্বপ্নটাও একটু বেশি। ভাইয়েরা সবাই নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। ছোট ভাই সোহান একটি প্রাইভেট ফার্মে জব করে।সোহানের ওপর শিমুর দেখাশুনার ভার। সব মিলিয়ে শিমুর পরিবার দুচারটা মধ্যবিত্ত পরিবারের মতো নয়। যথেষ্ট শিক্ষিত ও উচ্চ বংশীয় পরিবারের মেয়ে শিমু। জব শিমুর জন্য খুব বেশি এসেনশিয়াল না। উচ্চ শিক্ষিতা একটা মেয়ে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকবে তা কেমন দেখায়?চৌধুরী পরিবারের মেয়ে বলে কথা। এদিকে রাহাতেরা পাঁচ ভাই এক বোন। রাহাত সবার ছোট। ছাত্র হিসেবে রাহাত কখনো খারাপ ছিল না এসএসসি এইচএসসিতে দুটোতেই এ প্লাস।

লেখক মো. আবু রায়হান

 

এডমিশনের সময় অসুস্থ থাকায় কাঙ্ক্ষিত ভার্সিটিতে সে ভর্তি হতে পারেনি। জগন্নাথ ভার্সিটি থেকে রাহাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স মাস্টার্স কমপ্লিট করেছে। সে ঢাকায় কলাবাগানে মেসে থাকে। গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জের শীতলপুরে। মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে রাহাত। বেশ কয়েক বছর হলো পড়াশোনা শেষ হয়েছে। এখনো একটা চাকরি জুটাতে পারেনি। এদিকে চাকরির বয়সও শেষের দিকে। তাই বর্তমানের শেষ সময় টুকু কাজে লাগানোর অভিপ্রায়ে বিসিএস কোচিংয় ভর্তি হয়েছে।এখন সবকিছু তার ঠিকঠাক চলছে যেন সে বইয়ের পোকা। সময়ের গুরুত্ব এখন বুঝতে পেরেছে। শেকসপিয়র উক্তি “I wasted time, and now doth time waste me."কথাটি কাগজে লিখে দেয়ালে লাগিয়ে দিয়েছে।

সকাল বিকেল সেখানে চোখ পড়লেই যেন তার পড়াশোনার গতি বেড়ে যায়। চোখে মুখে যেন এখন আবছা অন্ধকার দেখে রাহাত।ভবিষ্যত নিয়ে খুব বেশি শঙ্কিত । তবে তাকে পারতেই হবে। কেন পারবে না। চোখের সামনে ভেসে উঠে রবিনসন ব্রুসের মাকড়সা থেকে অনুপ্রেরণা পাবার গল্প। ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠে রাহাত। গিয়ে বসে পড়ার টেবিলে। পাঁচ মাস পরে বিসিএস প্রিলি সময় কম সাগরসম বিস্তৃত সিলেবাস। পুরানো চাল ভাতে বাড়ে ইনশাআল্লাহ।আগের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চায় রাহাত। আজ বৃষ্টির কারণে রাহাত কোচিংয়ে যায়নি। রুমমেট শাকিলও নেই। সকালে বের হয়েছে গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে। রাহাতের মনে আজ নিঃসঙ্গতা দোলা দিচ্ছে। একাকীত্বের যন্ত্র‌ণা তাকে কুড়ে খাচ্ছে। ফেসবুক এবং মোবাইল ফোন থেকে সে এখন দূরে। ফেসবুক আনইন্সটল দিয়ে রাখছে। পড়াশোনার জন্য।মন মানে না এরমধ্যে সে ফোনটা হাতে নিয়ে ফেসবুক ইন্সটল দিল। ফেসবুক লগইন করেই চোখ রীতিমতো ছানাবড়া, কোচিংয়ের সেই শাবনূরের মত ফেসকাটিং দুধের গড়ন সবচেয়ে সুন্দরী স্মার্ট শিমুর ফ্রেন্ড রিকুয়সট।

এরকম গেঁয়ে আনস্মার্ট ছেলের কাছে ফ্রেন্ড রিকুয়েসট রাহাতের কাছে রীতিমতো স্বপ্ন মনে হচ্ছে। নিজেকে চিমটি কেটে দেখে। মেসেনজারে দেখে শিমুর মেসেজ।তাতে লেখা কেমন আছেন? আজ কোচিংয়ে আসলেন না যে? রাহাত কিছুক্ষণ চুপথাকে কি রিপ্লাই দেবে।আবেগে খুশিতে অস্থির। রাহাত দেখলো শিমু এ মুহুর্তে লাইনে নেই। এরমধ্যে সে ঘুমিয়ে পড়ে। সপ্তাহে চারদিন কোচিং পরের দিন রাহাত কোচিংয়ে গেলে শিমু ক্লাসের ফাঁকে রাহাতকে কাছে ডাকে। রাহাতের হার্টবিট বাড়তে লাগলো। হাতপা যেন নিস্তেজ হয়ে আসছে। গলা আড়ষ্ট। রাহাত মেয়েদের থেকে সব সময় দূরে থাকে, মিশতে অভ্যস্ত না। কাছে যেতেই শিমু এই যে সিন বয়। রাহাত বলল না আমি রাহাত। আমার নাম রাহাত। তা জানি আপনাকে মেসেজ পাঠালাম সিন হলো রিপ্লাই দিলেন না যে। মানে মানে এমবি ছিল না রাহাতের জড়তা কাজ করছে। শিমু হাহাহা করে হেসে দিয়ে বলল তাহলে সিন হয় কিভাবে?

রাহাত আমতা আমতা করে বলল ঐ সময় ওয়াইফাইয়ের কানেকশন ছিল। আচ্ছা বুঝছি। তো আপনার ক্যাডার চয়েস জানতে পারি? রাহাত মাথা নেড়ে সম্মতি দিল। তো প্রথম কোন ক্যাডার চয়েজ দিয়েছেন? মাথা চুলকাতে চুলকাতে রাহাত ভাবছে প্রিলি রিটেন পাসের আগে এই কোন ভাইভার মুখোমুখি হলাম। শিমু কিছুটা নিচু গলায় বলল কি কিচ্ছু বলছেন না? এবার রাহাত একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল পুলিশ।শিমু কিছুটা তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের সুরে বলল আপনি পুলিশ হবেন? একথা বলে হাহাহা শব্দে শিমু হাসতে লাগলো। কোচিংয়ের আশেপাশের সবার দৃষ্টি এখন দুজনের দিকে। শিমুর দিকে সবারই একটা লোভাতুর দৃষ্টি ছিল।কি মায়াবিনী! ফর্সা গড়ন।কথা বলার অপূর্ব স্টাইল। ডাগর ডাগর চোখ। কি নেই তার রুপ মেধা সব দিয়ে পরিপূর্ণ। স্রষ্টা যেন নিজ হাতে সৃজন করেছেন। একজন পারফেক্ট নারী বলতে যা বোঝায়। পরমা সুন্দরী। তাকে ঘরণী করার স্বপ্ন সাধ কার না জাগতে পারে।

কোচিংয়ের সবগুলো মডেল টেস্টে শিমুর মার্ক সবচেয়ে বেশি। গম্ভীর প্রকৃতির শিমু কোনো ছেলের সঙ্গে একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কথা বলে না।দুমিনিট কথা বললে যেকোনো ছেলে পটে যাবে। শিমুকে পাবার আরাধনায় অর্ঘ্য নিবেন করবে। আজকে রাহাত শিমুর এতোটা খোশগল্প আড্ডা তাদের যেন ঈর্ষানিত করছে। এরমধ্যে যার ক্লাস সেই জাহিদ সাহেব ক্লাসে প্রবেশ করল।ক্লাসে এখন পিনপতন নীরবতা। সবাই চুপচাপ মুহুর্তের মধ্যে সেই কোলাহল আড্ডার ক্লাস রুমটাকে সুনসান নীরবতায় শ্মশানের পরিবেশ এনেদিল। জাহিদ সাহেবের দেড় ঘন্টা আন্তর্জাতিক বিষয়াবলীর ক্লাস যেমন অসাধারণ তেমনি উপভোগ্য। উনি কিছুদিন আগে এডমিন ক্যাডারে জয়েন করেছেন।জাহিদ সাহেব আপাদমস্তক নিখাদ একজন নিরহংকারী পরোপকারী বন্ধু বৎসল মানুষ। মোটামুটি সকলেই তার ক্লাসের ভক্ত। ক্লাস শেষ হলে রাহাত দ্রুত বের হয়ে যায়। যেন হাফ ছেড়ে বাঁচে। মনে মনে পড়ে নেয় দোয়া ইউনুস। বাপরে বাপ কি বিপদ থেকে বাঁচলাম। আমেরিকান ক্যাটরিনা ঝড় যেন তার ওপর আছড়ে পড়েছিল। শিমু সবার শেষে বের হয়ে ফার্মগেট থেকে তাদের বাসা শ্যামলীতে রওনা দেয়। শ্যামলীতে শিমু তার ভাই সোহানসহ থাকে। বাসার পাশেই সোহানের অফিস। সোহান এখনো বিয়ে করেনি। বিয়ের প্রতি ইন্টারেস্টেট না। সবার জীবনে প্রেম আসে! সোহানের সঙ্গে ঋতু নামের একটি মেয়ের পাঁচ বছরের রিলেশন ছিল। সেইসময় সোহান ঋতুকে চাঁদপুর থেকে ঢাকায় ঋতুর বাসায় পৌঁছে দিতে গিয়ে মর্মান্তিক সিএনজি দূর্ঘটনায় ঋতু সোহানের সামনেই মারা যায়। চোখের সামনে প্রিয়জনের করুণ মৃত্যু এখনো তাকে তাড়া করে। যদিও সেই যাত্রায় সোহান অল্পের জন্য জীবন ফিরে পেয়েছে।

এরপর থেকে সোহানের আজীবন একাকী থাকার সিদ্ধান্ত। পরিবারের হাজারো চাপ উপেক্ষা করে সোহান তার সিদ্ধান্তে অবিচল। এখনো ঋতু যেন তার সঙ্গে আছে তাকে ছায়ার মত আগলে রেখেছে। শিমু পড়ার টেবিলে। কলিং বেল বেজে উঠল।শিমু একটু দেরিতে দরজা খুলে দিল। সোহান প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে সোজা শিমুর রুমে গেল। শিমুর টেবিলে থাকা মোবাইলটা হাতে নিয়ে সোহানের যেন চক্ষুস্থির হয়ে গেল। মেসেনজারে রাহাতকে শিমু এসএমএস করেছে কিছু ভালো লাগছে না। এখনো মেসেজ সিন হয়নি। সোহান শিমুকে ধমক দিয়ে খুব করে শাসিয়ে দিল। তুই তো জানিস ভালো করেই রিলেশনের বিয়ে কোনোভাবেই আব্বু আম্মু মেনে নেবে না। মোবাইলটা সজোরে বেডে রেখে সোহান তার রুমে চলে গেল। এ মুহুর্তে সোহানের ঋতুর কথা খুব মনে পড়ছে। রেগে না খেয়ে সোহান ঘুমিয়ে পড়ে।এদিকে শিমু ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে থাকে। বাসায় শান্তনা দেবার কেউ নেই। শিমু অমিত নামের একটা ছেলেকে পছন্দ করত কিন্তু সোহান জেনে ফেলার কারণে সেটি বেশিদূর এগুতে পারিনি। এরমধ্যে মোবাইলে মেসেজের টন বেজে উঠল। শিমু তার রুমের দরজা বন্ধ করে রাহাতের সঙ্গে চ্যাট করতে লাগল।কার কথা কে শোনে।কোচিং ছাড়া শিমু সারাদিন বাসায় একাই। যথেষ্ট হাঁপিয়ে উঠেছে একা একা। রাহাতও একাকীত্বে ভুগছে। পড়াশোনায় মন বসছে না। কোচিংয়ে শিমুর সেই জেরা। সুন্দর চাহনি। হৃদয় কাড়ানো হাসি যেন বর্শার ফালের মতো বিদ্ধ করছে রাহাতের হৃদয়কে। দুজনে মধ্যরাত পর্যন্ত এসএমএস বিনিময় করে। শিমু রাহাতের নাম্বারটা চেয়ে নেয়। সেই রাতের চ্যাট শেষ হলো।ঘড়ি দিকে তাকিয়ে দেখে রাত তিনটার কাটা ছুঁইছুঁই। এতক্ষণে রাহাত খাবারের কথা ভুলেই গেছে। এতোটা রোমান্টিক মুডে থাকলে কি ক্ষুধা লাগে।

ডাইনিংয়ে গিয়ে দুলোকমা গাপুস গুপুস খেয়ে মোবাইল টা হাতে নিয়ে এপাশ ওপাশ। ঘুম আসে না। রুমমেট ঘুমের ঘোরে বিভোর। নাক যেন আজ বিহগলের করুণ সুরে বাজছে।কানে অাঙুল দিয়ে রাহাত ঘুমানোর চেষ্টা করছে। রাত সাড়ে তিনটায় রাহাতের ঘুমের রাজ্যে অনুপ্রবেশ ঘটল। সকাল সাড়ে পাঁচটায় একটা অচেনা নাম্বার থেকে ফোন এলো। রাহাত চোখ দুটো বন্ধ রেখে ঘুমের ঘোরে বলল হ্যালো, অপর প্রান্ত থেকে ভেসে এলো সুরেলা নারীর কন্ঠ। কোনোদিন এত সুইট কন্ঠের অনুরণন তার কর্ণে কখনো প্রবিষ্ট হয়নি। রাহাত কিছুটা শিহরিত । চোখ দুটো খুলে ফোনটার দিকে হালকা দৃষ্টি নিক্ষেপ করল কাস্টমার সার্ভিসের কোনো কল নয়তো? আবার এই সাত সকালে? এবার রাহাত গলাটা খেকিয়ে জিজ্ঞেস করল কে? উত্তর এলো রাহাত আমি শিমু। ডিসটারব করলাম নাতো? আরে না কি বলো ?ডিসটারব হবে কেন? বলেই রাহাত শোয়া থেকে বসে পড়ল। শিমু বলল নামাজ পড়েছেন? আমি নামাজ পড়ে তোমাকে কল দিলাম। হঠাৎ আপনি থেকে তুমিতে রাহাতও কোনো আপত্তি করলো না।

নামাজের কথা শুনে রাহাতের কাসেম বিন আবুবকরের কোন এক উপন্যাসের নায়িকার কথা মনে পড়ে গেল। সফটলি উত্তর দিল না। আগে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তাম ইদানিং জুমআর নামাজ ছাড়া পড়া হয় না। ও আচ্ছা এখন থেকে পড়বেন তো? দেখুন নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে সাহায্য চান আপনার ভালো একটা রিজিকের ব্যবস্থা আল্লাহ করে দেবেন । রাহাত কিছুটা ভড়কে গেল এই মেয়েটা কি তালেবান না আইএস হঠাৎ দুদিনের পরিচয়ে এতোটা কেয়ার ধর্মীয় কথাবার্তা! পরক্ষণে ভাবলো তাকে দেখে এমনটা তো মনে হয়নি। আমি তো বেগানা পুরুষ আমার সঙে এমন আচরণ? রাহাত কিছু ঠাওর করতে পারছিল না।শিমু বলে উঠল আচ্ছা আপনি এতো ভীতু কেন?
কই নাতো। আমি যথেষ্ট সাহসী একজন সুপুরুষ। হেসে হেসে বলল রাহাত। একাত্তরের আগে জন্ম নিলে নিশ্চিত বীর উত্তম, বীরশ্রেষ্ঠ কিছু একটা হতাম।শিমু সায় দিয়ে বলল হুম বুঝলাম। এবার আপনার লেকচার থামান। এরমধ্যে শিমু বলে উঠলো আচ্ছা এখন রাখি নামাজ পড়ে নিয়েন। পরে কথা হবে ইনশাআল্লাহ।

ঠাস করে লাইনটা কেটে গেল রাহাত আবার শুয়ে পড়ল। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। সকাল সাড়ে আটটায় আবার ফোন। রাহাতেের দুচোখে রাজ্যের ঘুম। কোনমতে ফোনটা রিসিভ করে করল। অপর প্রান্ত থেকে শোনা গেল নাস্তা করেছেন? রাহাত বলল না। পরে করব। আচ্ছা করে নিয়েন। দশটায় রাহাত গোসল করে ফ্রেশ হয়ে রেস্টুরেন্টে গেল। সকালে বুয়া না আসায় রেস্টুরেন্টেই নাস্তা সারতে হয়। এরমধ্যে পকেটে হাত দিয়ে ফোন বের করতেই শিমুর কল। কলটা রিসিভ করেই খুব উচ্ছ্বসিত ভাবে রাহাত বলল আপনি অনেকদিন বাঁচবেন।আপনি না তুমি। ও আচ্ছা তোমাকে কল দেব বলে... এরমধ্যে শিমু রাহাতের কথা কেড়ে নিয়ে বলল আলহামদুলিল্লাহ বলো। রাহাত কিছুটা দ্বিধান্বিত। কেন? মশকরা করে বলল তোমার কি বিয়ে ঠিক হইছে? আরে না। তাহলে কোনো সুখবর? শিমু বলল হুম সুখবর। আমার প্রাইমারিতে জব হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে জয়েন। আগামীকালই আমি চাঁদপুর চলে যাব। আর এ সুসংবাদটা তোমাকেই প্রথম জানালাম।

এক নিঃশ্বাসে যেন শিমু কথাগুলো বলে ফেলল। বলায় একটুও জড়তা ছিল না। একথা শুনে রাহাত যেন নির্বাক হিম হয়ে গেল। কথা গলায় আটকে গেল। গেল যেন শুকিয়ে সাহারা মরুভুমি। শিমু বলল কি চুপচাপ কেন? খুশি হওনি বুঝি? রাহাত কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বলল হাহাহা হয়েছি।খুব খুশি হয়েছি। আচ্ছা এখন রেখে দেয়। বন্ধু বান্ধবীদের তো জানাতে হবে।টেক কেয়ার। আল্লাহ হাফেজ । ফোনটা রাখতেই রাহাতের বুকের বামপাশটা যেন মোচড় দিয়ে উঠল। একই সঙ্গে চাকরির আনন্দে পুলকিত হলেও দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে যাবার সংবাদে মনে প্রচন্ড ধাক্কা খেল। মনে রাখবে তো? না আউট অব সাইট আউট অব মাইন্ড।নানা হযবরল চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। ধীরে পায়ে রাহাত রুমে ফিরে। ফ্যানটা ছেড়ে দিয়ে নিজেকে জিরিয়ে নিচ্ছে। ঢাকা শহরের এই ঘিঞ্জি পরিবেশটা তার আর ভালো লাগে না। চার হাজার টাকা রুম ভাড়া দিয়ে দুই রুমমেট যেন ব্লাকহোলে থাকে। যেখান থেকে রোদ বৃষ্টি সূর্যের আলো পর্যন্ত গোচরীভূত হয়না।

পরেদিন শিমু চলে যায়। সোহান শিমুকে রেখে আসে। শিমু নিজের এলাকার কদমতলী স্কুলে জয়েন করে। সব ঠিকমতো চলছে। শিমুর তাদের বসুধা ভিলায় বাবা মা ছোট ভাই ভাবীসহ থাকে। বড় ভাইয়েরা কেউ প্রবাসী কেউবা ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত। সোহান ঢাকা থেকে দুই ঈদের সময় বাসায় যায়। এখন বড্ড একা। রবিবারে সোহানের অফিস বন্ধ একটা দিনের জন্য পরিবারের টানে সে প্রতি সপ্তাহে বাড়ি ছুটে যায়। রবিবার রাহাত শিমুর কথা জমে না, সোহান বাসায় থাকায়। এছাড়া প্রতিদিন শিমু রাহাত চুটিয়ে ফোনে কথা বলে। যেন নতুন করে তারা টিনএজে ফিরে গেছে। বিসিএসের আর দুমাস বাকি রাহাত পড়াশোনায় মনযোগী হতে পারে না একটু পর পর কথা চলে।আর ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকে। পড়তে গেলে বইয়ের পাতায় পরীর মতো শিমুর মুখখানি ভেসে উঠে। রাহাত কোচিংয়েও আর যায় না। সকাল সন্ধ্যা গভীর রজনী শিমুর সঙে ফোনে কথা বলা নিয়ে ব্যস্ত।

জীবনের প্রথম প্রেম বলে কথা। হঠাৎ একদিন শিমু ফোনে রাহাতকে বলে আমি যদি এখন তোমার কাছে চলে আসি তুমি কি আমাকে নেবে? আচমকা এমন কথা শুনে রাহাত কিছুটা অপ্রস্তুত ও ভয় পেয়ে যায়। একে তো জব নেই ধার দেনা করে সে বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অপেক্ষায়। শিমুকে রাখবে কোথায়, খাওয়াবে কি? বাড়ির সবাই তার দিকে চেয়ে আছে । গত দুই ঈদে রাহাত বাড়ি পর্যন্ত যেতে পারেনি । শুধু একটা জব নেই বলে। শিমুর কথায় রাহাত নিরুত্তর থেকে যায়। শিমু অভিমানে বলে বুঝছি তুমি আমাকে একটুও লাভ করো না। কিন্তু শিমু জানে না রাহাতের হৃদয়ে কতটুকু ভালোবাসা তার জন্য। যে ভালোবাসা তার সুপ্ত মনে আশা জাগিয়েছে। ভালো থাকার প্রেরণা জুগিয়েছে। পরে কথা হবে বলে শিমু ফোনটা রেখে দেয়।ঐদিনের মতো রাহাত ঘুমিয়ে যায়। পরের দিন দশটার দিকে একটা অচেনা নাম্বার থেকে কল আসে। কলটি ছিল ফার্মগেটের কুরিয়ার সার্ভিস থেকে রাহাতের নামে পার্সেল আসছে। সে একপা দুপা করে ফার্মগেটের দিকে যায়।

শিমু এক কার্টুন গিফট রাহাতের জন্য পাঠিয়েছে। গিফট রিসিভ করে সাথে সাথে শিমুকে ফোন দিল রাহাত।বলল এসব কি এসবের মানে কি? শিমু বলল তেমন কিছু না। আগে বলোনি কেন? শিমু বলল সারপ্রাইজ দেব বলে ।এইটা বাসায় নিয়ে ভেতরে যা কিছু আছে ছবি তুলে পাঠিয়ে দেব। ওকে বাই বলে শিমু ফোন রেখে দেয়। বাসায় গিয়ে রাহাত ছবি তুলে মেসেনজারে পাঠিয়ে দিল। শিমু বলল হুম ঠিক আছে। শিমু রাহাত অধিকাংশ সময় ফোন মেসেনজার ইমুতে কথা বলতো। সমস্যা হলে সারারাত দিন চ্যাট চলত। রবিবারে সোহান বাসায় থাকায় খুব একটা কথা হতো না ঐদিন। এখন দুজন দুজনার কত যে আপন যেন দুটো দেহের একটি আত্মা। শিমু একটা কথা খুব বলতো সেটা হলো খুব ভালো। কথাটি রাহাতের খুবই হৃদয়গ্রাহী। এরমধ্যে সপরিবারে শিমু সিলেট কক্সবাজারে পারিবারিক টুরের যায়। সেখানে কি করছে সব আপডেট ছবি পাঠাতো। এভাবে রাহাতের ফোনে শিমুর, ভাই ভাবীর কয়েকশ ছবি জমা হয়।আর প্রতিদিনের সেলফি তো আছেই। একে অপরকে প্রচন্ড মিস করতে থাকে। একদিন কোন এক বিষয় নিয়ে প্রচন্ড খুনসুটি ও ঝগড়া হয়। শিমু রাহাতকে ফেসবুক, ফোনে ইমুতে ব্লক করে রাখে। তিনদিন পর্যন্ত কথা হয়না। রাহাত অস্থির হয়ে উঠে। বন্ধু বান্ধব দোকানী সবার ফোন থেকে চেষ্টা করে কিন্তু শিমু সায় দেয় না। শেষ পর্যন্ত অচেনা পথ ধরে রাহাত শিমুর কদমতলী স্কুলে হাজির হয়। রাহাতকে দেখে শিমু তো সারপ্রাইজড। তাড়াতাড়ি স্কুল থেকে ছুটি নিয়ে শিমু রাহাত বেরিয়ে পড়ে। বিষন্ন উসকোখুসকো রাহাতকে সেদিন বড়ই জীর্ণ ও অসহায় দেখাচ্ছিল। শিমুর সাক্ষাতে মুহুর্তে রাহাত সে সবকিছু ভুলে যায়। দুজনে রেস্টুরেন্ট কিছু খেয়ে গল্প জুড়িয়ে দেয়। এরকম এর পরেও কয়েকবার হয়েছে। অনেক সময় ঢাকা থেকে স্কুলে গিয়ে না পেয়ে রাহাত ওদের বসুধা ভিলার দিকে সারাদিন তাকিয়ে থাকতো একনজর দেখবে বলে।দুতলা বাসা ওপরে অসংখ্য কবুতর কিন্তু রাহাতের কবুতর তখন বাকবাকুম করে না। বিফল মনোরথ হয়ে রাহাত ঢাকা ফেরে। এর কিছুদিন পরে সরিটরি বলে রাহাত রিলেশনটা স্বাভাবিক করে।একদিন সারাদিন চুপচাপ শুয়ে আছে রাহাত। শিমু কল দেয়।

কি করো? রাহাত বলে শুয়ে আছি।শিমুর জিজ্ঞাসা অসময়ে কেন?রাহাত বলল মনটা খারাপ!শিমু কেন? রাহাত একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, শিমু আমি তোমাকে প্রতিদিন আর দেখতে পারবো না। শিমু অনেকেটা ক্রুদ্ধ কন্ঠে কেন আমি কি মারা গেছি? এভাবে বলছো কেন? তোমার মৃত্যুর আগে আমার যেন আমার মরণ হয়। আমি সইতে পারবো না। শিমু কিছুটা রাগান্বিত হয়ে হইছে ঢং দেখাতে হবেনা।কি ইইছে বলো? রাহাত আমার ফোনটা নষ্ট হয়ে গেছে। এ মুহুর্তে এতো টাকা নেই যে ফোন কিনতে পারবো। ঠিক আছে এ নিয়ে তোমার টেনশন করতে হবে না শিমু বলল। তোমার জিপি বিকাশ আছে না? হ্যাঁ আছে । আজ সন্ধ্যায় দোকানে গিয়ে নতুন সেট কিনবে।আর আমি মডেল বলে দেব ওকে?বলে শিমু ফোনটা রেখে দেয়।সন্ধ্যায় বিকাশে দশ হাজার টাকা চলে আসে। রাহাত আর দেরি না করে নতুন হ্যান্ডসেট কিনে। দোকান থেকে ভিডিও কল দিয়ে শিমুকে জানায়। প্রথম কলটা শিমুকে দেয়। এরপর থেকে ওদের মধ্যে প্রচুর কথা হতে থাকে। মাঝেমধ্যে বিসিএসের পড়াশোনা নিয়েও আলোচনা করে দুজনে। রাহাতের যেন আর কোনো কাজ নেই কথা বলা আর পড়াশোনা।এভাবে কাটছে ওদের দিন রাত। ততদিনে রাহাতের পড়াশোনার গতি মনযোগ সব তিরোহিত। পড়াশোনা এখন শিকেয়।কখনো চাকরি নেই ভেবে রাহাত হতাশ হয়ে পড়ে। শেষ বিসিএস এটা মিস গেলে জীবনের স্বপ্নটা যেন অধরা রয়ে যাবে। আজ রাহাতের মাথায় ছাতার মতো ঠাঁই দাঁড়িয়ে শিমু। রাহাত বাড়ি থেকেও টাকা নেয় না। শিমু মাঝেমধ্যে বিকাশে পাঠিয়ে দিতো। চলছে রাহাতের হতাশা আর টেনশনের দিন। শিমুর টাকা নিতেও তার খারাপ লাগে । দুএকটা টিউশন করাবে সেই ফুরসত যেন নেই। তার একদম ইচ্ছে করে না।আর টিউশন পাবে কোথায়। নিজের তো প্রচুর পড়াশোনা।

একদিন চাকরির পত্রিকায় চোখ বুলাতেই রাহাতের চোখ আটকে গেল। একটি নামীদামী টি কোম্পানিতে ম্যানেজার পদে লোক নিয়োগ করবে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছবি তুলে রাহাত শিমুর কাছে পাঠিয়ে দেয়। শিমু আবেদন করতে বলে। আবেদন খরচ পরবর্তীতে পরীক্ষা যাতায়াত সব খরচ শিমু দিয়েছিল। একজন পূর্ণাঙ্গ বাঙালি মেয়ের সব চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য শিমুর মধ্যে ছিল। যেমন পরমা সুন্দরী রুপবতী, তেমনি একজন গুণবতী মেধাবী নারীও বটে। যেন রাহাতের স্বপ্নে পাওয়া সাত রাজার ধন। রাহাতের কিছু দিতে ইচ্ছে করে কিন্তু সাধ থাকলেও সাধ নেই। তবুও শিমুর জন্য রাহাত নীলক্ষেত থেকে কিছু বই কিনে কুরিয়ারে পাঠিয়ে দেয়। তবে শর্ত হলো রাহাত এই বই শিমুর নামে পাঠাতে পারবে না। কারণে শিমুর পরিবার জানলে আস্ত রাখবে না। তার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী ছিল নিশাত।নিশাতে এসএসসির পর বিয়ে হয়েছে। এখন তিনটা বাচ্চা। বাচ্চা কাচচা ঘর সামলাতে সে ব্যস্ত। রাহাত প্রায় শিমুকে জিজ্ঞেস করত নিশাত কি ছেলে না মেয়ে? অনেক ছেলের নাম থাকে নিশাত।এনিয়ে কত হাসাহাসি।

আগেই বলেছি রাহাতের টাকা পয়সার টেনশন শিমু কিছুটা হলেও কমিয়ে দেয়। তবে শিমুর একটি বদ অভ্যাস ছিল সে ফোনে প্রচুর কথা বলতে ভালবাসে। যেন কথামালার ফুলঝুরি। দুবেলা দুমুঠো অন্ন না পেলেও চলে। যদি ফোনে কথা বলতে পারে। অধিকাংশ সময় রাহাত শিমু ফোনে এনগেজড থাকতো। সারাদিন যেন ওদের কথা শেষ হয় না।প্রায়শই শিমু রাহাত কে তার ফোনে ছাব্বিশ টাকা রিচার্জ করতে বলতো।রাহাত দিয়ে দিতো যতই কষ্ট হোক। শিমুর সকাল টা শুরু হতো রাহাতের সঙ্গে কথা বলে আবার শেষ হতো গভীর রাত পর্যন্ত কথা বলে। ময়না টিয়া জানু না শুনলে যেন শিমুর ঘুম আসে না। সকালে বাসা থেকে বের হয়ে কল, স্কুলে পৌঁছানো পর্যন্ত চলে নন স্টপ কথা। এক ঘন্টা আধা ঘন্টা পর তো কথা হচ্ছেই। কখনো ক্লাসেই ফোন রিসিভ করে বাচ্চাদের চেঁচামেচির শব্দ শুনছে। টিফিন পিরিয়ডে কথা চলছে তাদের।স্কুল ছুটির পর সিএনজি বাস সব জায়গায় কথা চলছে দুজনের।

কথা বলতে শুনতে দুজনই উদগ্রীব।দুজনের মধ্যে চরম বোঝা পড়া। বিশ্বাসটাও প্রবল। রাহাত যেন জীবনের উনত্রিশ বসন্ত পেরিয়ে ফুটন্ত ফুলের সৌরভে দিশেহারা। সে খুব বেশি শিমুকে বিশ্বাস করত। শিমুর কথা আচার আচরণে রাহাত কখনো সন্দেহর কিছু দেখেনি। কবি গুরুর অমর বাণী যেন তার জন্য শিরোধার্য মানুষের ওপর বিশ্বাস হারানো পাপ। আবার চারপাশে কিছু টাউট বাটপার দেখে তার মনে হয় মানুষের ওপর বিশ্বাস রাখাটাও পাপ। রাহাতের বিসিএসের আর প্রায় কুড়িদিন বাকি। জীবনের শেষ বিসিএস পড়াশোনা একদম গোল্লায়।কখনো কখনো দুজনের মধ্যে ধুমছে চলছে গান গাওয়ার প্রতিযোগিতা। শিমুর গানের গলা বেশ। যে কোনো গান একবার শুনে অবিকল সুরে দারুণ গাইতে পারে।এটা তার অনন্য প্রতিভা বৈকি। তুমি রবে নীরবে গানটি তার কণ্ঠে এক কথায় অসাধারণ, যেন জেনুইন শিল্পীকেও হার মানায়। রাহাত সেই তুলনায় গান গাওয়াতে একেবারে শিশু। শিমু রাহাতের কাছে গান শুনতে চায়। রাহাতের গানের কণ্ঠ তেমন ভালো না।শুধু শিমুর আবদারের কারণে সুবীর দার কত যে তোমাকে বেসেছি ভালো গানটি যেন রাহাতের জীবনে জাতীয় সঙ্গীত হয়ে গেছে। গাইতে গিয়ে যে কতবার ভুল করে তা শুমার করে শেষ করা যাবে না। শেষমেষ শিমুই পুরোটা গেয়ে শোনায়।
রাহাতের শিমুর প্রতি টানটা প্রবল তা শিমু ভালো ভাবেই জানে।

মাঝেমধ্যে পারিবারিক বা কোন কারণে শিমুর মেজাজ খিটখিটে হয়ে যেত। এ অবস্থা রাহাত মানিয়ে নিতে পারে না। যার হাসিতে মুক্ত ঝরে কথায় ঝরে মধুর ঝর্ণা। তার এমন অস্বাভাবিক আচরণ সে নিতে পারে না। মিষ্টি কথায় চিঁড়া ভেজে না কে বলেছে? শিমুর কথায় রস শিল্পবোধ যাদু আছে। জীবনে যেরকম মেয়ে নিয়ে সুখের সংসার সাজানোর কল্পনায় মগ্ন রাহাত। সেই স্বপ্নের রাজকন্যা তার হাতের মুঠোয়। এখন একটা চাকরি শুধু।শিমুকে নিয়ে টুকিটাক কবিতা লিখত রাহাত। শিমুকে ডাকতো আশালতা সেন বলে। ঠিক যেন জীবনানন্দ দাশের বনলতা সেনের মতো। রাহাত ঢাকায় মেসে। দুদিন ধরে শিমুকে কল দেয় হঠাৎ কল ব্লক। সে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। খাওয়া নেওয়া ঘুম বন্ধ। আননোন নাম্বার থেকে কল দিলে রাহাতের কণ্ঠ শোনা মাত্র শিমু কল কেটে দেয়।রাহাত বিষয়টা স্বাভাবিকভাবে নিতে পারছে না। কোনো প্রবলেম নয়তো?শিমুর বিয়ে ঠিক হয়নি তো? কষ্ট সইতে না পেরে রাহাত কয়েকটা স্লিপিং পিল খেয়ে ফেলে। ভাগ্যিস রুমমেট ছিল।

কাছেই হসপিটাল ছিল। সেই যাত্রায় রাহাত বেঁচে যায়। এরপর থেকে রাহাত বুকের কোণে চিনচিন ব্যথা অনুভব করে। পরে ডাক্তার অবশ্য বলছে হার্টের প্রবলেম।রাহাতের বিসিএস পরীক্ষার বেশিদিন বাকি নেই। এদিকে শিমুর প্রাইমারি জব ভালো লাগে না। সেই সকাল থেকে প্রায় সন্ধ্যা পর্যন্ত স্কুলের পেছনে চলে যায়। বাড়ি থেকেও স্কুল বেশ খানিকটা দূরে। রিকশা বাস সিএনজি সহযোগে শিমুকে স্কুলে দৈনন্দিন যাতায়াত করতে হয়। বর্ষাকাল হলে রক্ষা নেই।বিভিন্ন কারণে শিমু জবটা চেঞ্জ করতে চায়। তাই সে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নিতে ইচ্ছুক । রাহাতও তাকে অনুপ্রাণিত করে।এরমধ্যে শিমু ঢাকায় শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা দিতে আসে । শিমু লেকচারার পদে পরীক্ষা দেবে। রাহাতের হাতে বিসিএস পরীক্ষার কয়েকদিন বাকি। শিমু উত্তরায় কাজিনের বাসায় উঠেছে। রাহাত মিট করতে চাইলে শিমু নিষেধ করে। সামনে বিসিএস পরীক্ষা রাহাতকে ভালভাবে পড়তে বলে। যেদিন শিমু ঢাকায় ঐদিন বিকেলে রাহাত ঘুমিয়ে ছিল রুমে।ঘুম থেকে জেগে দেখে তার ছোট ফোন ওয়ালেট, হাতঘড়ি গায়েব। ভাগ্যিস শিমুর দেওয়া ফোনটা তার বালিশের নিচে ছিল।শিমু ঢাকায় মিট হচ্ছে না। এ অসময়ে মূল্যবান জিনিস চুরি সব মিলে রাহাতের মন খারাপ। কাজিনের বাসায় থাকায় শিমু ঠিকমতো কথাও বলতে পারছে না। অনেক কষ্ট নিয়ে রাহাত রাতে ঘুমিয়ে গেল।

ভোর সাড়ে চারটায় হঠাৎ রাহাতের ঘুম ভেঙ্গে গেল। ফোনটা হাতে নিয়ে সে শিমুকে একটা কল দেয়। মেনে নিতে পারছে না দুজনেই ঢাকা অথচ মিট হবেনা। রাহাত কল দিয়ে যা দেখল রীতিমতো মাথায় বাজ পড়ার মতো।শিমুর কল ওয়েটিং। নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না রাহাত। প্রচন্ড রেগে ঘেমে অস্থির। এতদিনের বিশ্বাস ও ভালোবাসার প্রতিদান তাহলে এই। ঘন ঘন শ্বাস বের হচ্ছে। বুকটা মনে হয় রাহাতের ফেটে যাচ্ছে। নিজেকে কোনমতে সামলিয়ে নিয়ে আবার রাহাত কল দিল, ততক্ষণে লাইন ক্লিয়ার। কল রিসিভ করেই শিমু বলল কি ঘুমাওনি? রাহাত কোনো উত্তর না দিয়ে বললো কার সঙ্গে কথা বললে? শিমু বলল বলবো না। শিমুর প্রতিক্রিয়া ছিল সাপের লেজে পা পড়লে যেমন ফোঁস করে উঠে তেমনি। এবার রাহাতের মাথায় যেন রক্ত উঠে গেল। দম বন্ধ হতে চলছে। চেঁচিয়ে কথা বলছে রাহাত। ততক্ষণে রুমমেট আশেপাশের সবাই সজাগ। এবার কিছুটা শান্ত গলায় রাহাত বলল আজ না তোমার পরীক্ষা ? ওকে ভালো ভাবে পরীক্ষা দিও। বাই।ফোনটা রেখে রাহাত ছোট বাচ্চাদের মত কাঁদতে শুরু করল। এখনো ভোরের আলো ফুটেনি। সবাই তাকে শান্তনা দিতে লাগলো। কোনো শান্তনায় কাজ হচ্ছে না। অঝোরে কেঁদেই যাচ্ছে। রাহাত যথেষ্ট আবেগী ছেলে। রিয়েল ভালোবাসাটায় ছিল রাহাতের। রাহাত কোন মেয়ের দিকে চোখ তুলেও তাকাতো না। কেননা সে শিমুর মধ্যে সব খুঁজে পেয়েছে।সব স্বপ্ন আশা যেন শিমুকে ঘিরে। রাহাত বিসিএস পরীকার সপ্তাহ খানেক আগে মানসিকভাবে প্রচন্ড কষ্ট পায়। রাহাত বিড়বিড় করে পাঠ করতে থাকে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের তুমি কবিতাটি,
বেদনা মাধুর্যে গড়া তোমার শরীর
অনুভবে মনে হয় এখনও চিনি না,
তুমি প্রতীক বুঝি এই পৃথিবীর :
আবার কখনো ভাবি অপার্থিব কিনা।

এ যাত্রায় শিমুর সঙে রাহাতের দেখা হয় না। শিমু চাঁদপুর চলে যায়। এক বছরের রিলেশনে বিশ্বাসের জায়গাটায় ক্ষত তৈরী হয়েছে। সেদিনের পর থেকে শিমু রাহাতকে এড়িয়ে চলতে থাকে। ঠিকমতো কথা বলে না। ফোন রিসিভ করে না। রাহাতের শেষ বিসিএস পরীক্ষার আগে তার হৃদয় আকাশে যেন অমাবস্যা। শিমু বিসিএসের দুদিন আগে রাহাতের বিকাশে কিছু টাকা পাঠিয়ে দেয়। ভালো কিছু খেতে । রাহাত কথা বলতে চাইলে শিমু বলে এখন কিসের কথা দুদিন পর পরীক্ষা পড়াশোনা করো। বলে শিমু ফোনটা রেখে দেয়।এভাবে কি পড়াশোনা হয়? যেখানে একবারের বেশি কল দিতে হয় না। একবার কল দিলেই ছোঁ মেরে রিসিভ করতো। সেখানে কল রিসিভ করার নাম গন্ধ নেই। হয়তো পরে ফোনটা রিসিভ করে কত অ্জুহাত দেখাবে। রাহাত রুমে বসে অপলক দৃষ্টিতে ফ্যানের দিকে তাকিয়ে ভাবছে। জীবনটা এই ফ্যানের মতো ঘুরতে ঘুরতে এক সময় থেমে যায়, জীবনটাও তেমনি একদিন থেমে যাবে কারো অনাদর আর ভালোবাসার অভাবে।রাহাত ভাবছে তার শিমু আর বিসিএসের কথা দুটোই আজ হাত ছাড়ার পর্যায়ে। বিসিএস না হোক শিমুকে পেলেও তো একটা শান্তনা ছিল। বিসিএস ক্যাডার না হবার দুঃখটা অন্তত ভুলে থাকা যেত। এর আগে দুইবার রিটেন দিয়েছিল কিন্তু বিধিবাম। এবার মনের কষ্টে রাহাত অস্ফুট কণ্ঠে আবৃত্তি করছে কাজী নজরুলের পূজারিণী কবিতার কয়েকটি পংক্তি,
নারী কভু নাহি চায় একা হতে
কারো এরা দেবী, এরা লোভী যত
পূজা পায়, ততো চাই আরো
ইহাদের অতি লোভী মন একজনে
তৃপ্ত নয় এক পেয়ে সুখী নয় যাচে
বহুজন !!

রাহাত কবিতা আবৃত্তি করছে আর দুচোখ জুড়ে যেন শ্রাবণ ধারা প্রবাহিত। জীবনের অর্থ সে খুঁজে পাচ্ছে না। যার জন্য দিওয়ানা। এতো এতো ভালোবাসা। সে আজ অবহেলা করছে। একদিন কথা না বললে যে শিমু থাকতে পারে না, সেই শিমু তাকে ভুলে কেমনে নিশ্চিন্তে আছে? সে কি আমাকে ফিল করে নানান চিন্তা রাহাতের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।রাহাত কিছুই ভাবতে পারছে না। এমনি লিকলিকে তালপাতার সেপাই গড়নের রাহাতের কোনো বাজে অভ্যেস নেই। এতো চাপ টেনশন যেন সে নিতে পারছে না। জীবনের তবে কি এটি ভুল সিদ্ধান্ত ছিল? নানান সাত পাঁচ ভাবনা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে । পাশের রুমের বড় ভাইয়ের সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট এনে ধরালো। জীবনে এই প্রথম সে সিগারেট হাতে।

বন্ধু বান্ধব অনেক চেষ্টা করেছে রাহাতকে সিগারেট টানাতে কিন্তু কেউ পারেনি। আজ রাহাত স্বেচ্ছায় সিগারেটের কাছে নিজেকে সপিয়ে দিচ্ছে । সিগারেট টানছে আর শুভ্র ধোঁয়ায় রাহাত যেন নিজের ভেতরের নীল কষ্ট গুলো বের করে দিচ্ছে। সিগারেট টেনে সে নিজেকে হালকা অনুভব করছে। পড়াশোনা একদম নেই বললেই চলে। এভাবে চলছে দিন।রাহাত বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিল। আত্মবিশ্বাস আগেই হারিয়ে গেছে। জানে হবে না। এত চড়াই উৎরাই পেরিয়ে বিসিএস কি হয়? রিলেশনটা চলছে টানাপোড়েনে। কথা হয় কখনো হয়না। শিমুর এতোদিনের টান আন্তরিকতা ততদিনে কিছুই অবশিষ্ট নেই। একমাস পর বিসিএস প্রিলির রেজাল্ট হলো চারবার বিসিএস দিয়ে এই প্রথম রাহাতের প্রিলিতে ফেল। রাহাতের মনের অবস্থা দিনদিন খারাপ হতে থাকে। শরীরের অবস্থা, মানসিক অবস্থা কিছুই আগের মত নেই। বিকেলে টিএন্ডটি নাম্বার থেকে ফোন এলো।

মি.রাহাত বলছেন। জি বলেন রাহাত বলল। আপনার মেসার্স চৌধুরী চা কোম্পানিতে জব হয়েছে। আগামী দশদিনের মধ্যে জয়েন করতে হবে। আমরা এপয়েনটমেনট লেটার আপনার এড্রেসে পাঠিয়ে দিয়েছি। এখন রাহাতের একটু হলেও ভালো লাগছে। অন্তত পরিচয় দেবার একটা পজিশন হয়েছে। অবশ্য এ জবের কৃতিত্ব সবটায় শিমুর। শিমুই রাহাতকে আবেদন করতে বলেছিল। পরীক্ষা যাতায়াত খরচ হাত খরচ সব শিমুই দিয়েছিল। শিমুকে সে ফোন দিল। এবার ফরচুনেটলি শিমু কলটা রিসিভ করে। শিমু আমার জব হয়েছে কিছুটা ক্ষীণ কণ্ঠে রাহাত। শিমু বলল আলহামদুলিল্লাহ। তোমাকে অভিনন্দন। এবার রাহাত বলল সবই তোমার জন্য সম্ভব হয়েছে শিমু। শিমু বলল এমনটা কেন হবে? সব আল্লাহ পাকের ফয়সালা। আমি আর কি? না শিমু তুমি অনেক কিছু বলল রাহাত। এবার কি রিলেশনটা কনটিনিউ করা যায় না? আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। শিমু কিছু না বলে ফোনটা রেখে দিল।শিমুর এমন আচরণে ব্যথিত হলো। যেন আজকাল শিমু পাত্তাই দিচ্ছে না। রাহাতের নিজেকে বড্ড ছোট মনে হলো।রাহাতের পোস্টিং হলো মৌলভীবাজার। সেখানেই জয়েন করল রাহাত। কিন্তু দুটো পিছুটান তাকে অতৃপ্তিতে ভোগায় বিসিএস আর শিমুর অবহেলাটা। টুকটাক এখনো যোগাযোগ হচ্ছে ওদের কিন্তু ওতোটা আন্তরিকতা ভালোবাসা আগের মতো নেই।


রাহাত প্রথম মাসের সেলারি তুলে শিমুর জন্য একটা থ্রি পিচ পাঠিয়ে দেয়। কুরিয়ার সার্ভিস থেকে শিমু সেটি রিসিভ করে নিয়ে যায়। শিমু যদিও এগুলো দেওয়া পছন্দ করেনা। সে দিতে পছন্দ করে নিতে নয়। শিমুর অসম্ভব আকর্ষণীয় একটি গুণ হলো সে লোভী স্বার্থপর টাইপের কোনো মেয়ে না। ঈর্ষা পরশ্রীকাতরতা শিমুকে কখনো পেয়ে বসেনি। এতদিনে রিলেশনে রাহাত কখনো চুল পরিমাণ দোষ খুঁজে পায়নি।সেদিনের ঘটনার আগে। শিমুকে পরে রাহাত ফোন দেয় গিফট পেয়েছে কি না? শিমুর এক বাক্যে উত্তর এসবের প্রয়োজন ছিল না। পরে শিমু সেই ড্রেস পরে রাহাতের ইমুতে ছবি পাঠিয়েছিল। থ্রি পিসটা শিমুর সঙ্গে খুব ম্যাচিং করেছে। শিমুর খুব পছন্দ হয়েছে বলে জানায়। রাহাত জীবনের প্রথম কোনো মেয়ের ড্রেস কিনে দারুণভাবে প্রশংসিত হলো। এভাবে তাদের যোগাযোগ আনন্দ খুঁনসুটি সব মিলিয়ে চলছে। একদিন বিকেলে রাহাত খুব শিমুকে ফিল করছিল। শিমুকে কল দেয়। ফোন বিজি। প্রায় দু ঘন্টা শিমু বিজি ছিল। এরকম বিজি কখনো রাহাত পায়নি। কথা শেষ হলে শিমু রাহাতের ফোন রিসিভ করে। শিমু বলে তার বান্ধবী নিশাতের সঙ্গে কথা বলছিল। রাহাত খুব রেগে গেল। তখন শিমু আসল ঘটনা খুলে বলে। শিমুর এইচএসসি পড়ার সময় তার এক কলেজ ফ্রেন্ড ছিল সেজান। তার সঙ্গে সে কথা বলছিল।

রাহাতের সামনে ভেসে উঠল শিমুর আগের বলা কথা। শিমুর পিকনিকের ছবিগুলো ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছিল সোহান। এই সেজানের কারণে, যে কিনা সব সময় শিমুর পাশ ঘেঁষে ছবি তুলেছিল, ঘুরঘুর করছিল । এই ছেলেটা তো ভারী দুষ্ট,যথেষ্ট আলুর দোষ আছে।

এবার রাহাত শান্ত গলায় বলল এতক্ষণ ধরে কথা? শিমু বলল সেজান নাকি কলেজ লাইফ থেকে শিমুকে খুব পছন্দ করে। রাহাত এবার কিছুটা নিশ্চুপ ও উত্তেজিত।আচ্ছা একথা আগে কখনো বলোনি তো? শিমু ডিরেক্ট বলে ফেলে ইচ্ছে হয়নি তাই কখনো বলিনি। এবার রাহাত নিজেকে আর আটকাতে পারলো না গলার ভলিউম বাড়িয়ে ব্জ্রকন্ঠে বলতে লাগলো ও আচ্ছা এতক্ষণ কি বললে? তাকে বুঝিয়ে বলেছি আমার রিলেশনের কথা শিমু বলল। দুই ঘন্টা ধরে বোঝাতে হলো রাহাত উত্তেজিত হয়ে? হ্যাঁ হলো, শিমুর সাফ জবাব। ঢাকায় গিয়ে ভোররাতে এই সেজানের সঙ্গে কথা বলেছি বুঝলে? আজ আসল রহস্য বেরিয়ে এলো।তার মানে প্রায় শিমু সেজানের সঙ্গে কথা বলে।রাহাত ভাবছে আজ শিমু আর তার আয়ত্তে নেই। শিমু এখন অনেক দূরে সেজানকে নিয়েই সে ভাবছে, কথা বলছে। যে সময়টা শিমু ফোনে রাহাতকে দিতো সেই সময়টা এখন সেজানকে দিচ্ছে।

এবার রাহাত চিৎকার করে বলে উঠল বাহ কি চমৎকার ইচ্ছে করলেই মন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা যায়। পুরনো কাপড় চোপড়ের মত ভালোবাসার মানুষ বদলানো যায়। হাউ সেলুকাস!তোমার মনে এই ছিল শিমু? এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে ফেলে রাহাত। রাহাত এখন নিয়ন্ত্রণহীন প্রচন্ড কাঁপছে আর ঘামছে। শিমু ফোনের ওপাশে চুপচাপ। রাহাত চুপ কেন বল।শিমু বলে সেজান প্রায়দিন তার স্কুলে যাবার পথে এবং বাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকে। সেজান অনেক ভালো গান করে, কবিতা আবৃত্তি করতে পারে। বারবার কল দেয়। কথা না বললে কান্নাকাটি করে। শিমুর কথা শোনে রাহাত আরো ভড়কে গেল।পায়ের নিচে মাটি যেন ক্রমশ আলগা হয়ে যাচ্ছে। ভাবছে শিমু তো আর তার নেই। রাহাত এবার শান্ত গলায় বলল, আমার এখন কি হবে? শিমু সোজা সাপটা উত্তর আমি কি জানি? আমাদের রিলেশনটা রাহাত বলল। শিমু বলল কোনো রিলেশনই ছিল না। রাহাত এবার ক্ষিপ্ত কণ্ঠে কি বললে? আমার দোষ কি? শিমুর উত্তর তোমার বিসিএস হয়নি, তুমি বিসিএস ক্যাডার হতো পারোনি । সেজান কি বিসিএস ক্যাডার? রাহাতের জিজ্ঞাসা। শিমু বলল ক্যাডার না হোক তাতে কি হয়েছে? ভবিষ্যতে হবে। বলেই ফোনটা রেখে দিল শিমু।অবশেষে রাহাত সম্বিত ফিরে পেল।এসবই ছিল শিমুর সাজানো। জাসট টাইম পাস। তার একাকীত্ব নিঃসঙ্গতা দূরীকরণের উপকরণ মাত্র।

রাহাতের মুখ থেকে শিমুর প্রতি প্রচন্ড ঘৃণায় বেরিয়ে এলো You can sell a drug once, but a women you can sell more than once each day and everyday -- This is the reality(বাস্তবতা হলো, তুমি যে কোন ড্রাগ একবার বিক্রি করতে পারো কিন্তু একটি নারী তুমি প্রতিদিন কয়েকবার করে বিক্রি করতে পারবে, তা দিনের পর দিন বিক্রি করতে পারবে)।পরিশেষে রাহাতের মনের অজান্তে মুখ থেকে বেরিয়ে এলো কবি গুরুর কবিতার চরণ, ‘নারীর মন সহস্র বছরের সাধনার ধন’।

(গল্পটি কাল্পনিক। আগামী বই মেলায় উপন্যাস আকারে প্রকাশিতব্য )


সর্বশেষ সংবাদ