বুদ্ধের ক্ষমা ও সহিষ্ণুতার বাণী পাল্টে দিতে পারে জীবন

স্বকৃত নোমান
স্বকৃত নোমান  © টিডিসি সম্পাদিত

বৌদ্ধদর্শনে ক্ষমা আর জীবপ্রেমকে দেওয়া হয়েছে অগ্রাধিকার। পৃথিবীর সকল ধর্মপ্রবর্তক মানুষকে দিয়েছেন অগ্রাধিকার। ঘোষণা করেছেন মানুষের জয়। মানুষকেই দিয়েছেন শ্রেষ্ঠ আখ্যা। কামনা করেছেন মানুষেরই কল্যাণ। ব্যতিক্রম গৌতম বুদ্ধ। বলেছেন, ‘সব্বে সত্তা সুখিতা ভবন্ত।’ জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক। এই সর্বপ্রাণবাদই তথাগতের মূলমন্ত্র।

বৌদ্ধপন্থা অনুযায়ী ক্ষমার মূল চাবিকাঠিটি হলো ব্যক্তিকে তার অথবা নিজের ক্ষতিকারক বা ধ্বংসাত্মক কর্ম থেকে অথবা তার ভুল থেকে আলাদা করা। বৌদ্ধদর্শন বলে, আমরা ধ্বংসাত্মক কাজ করি, ভুল-ত্রুটি করি। এর অর্থ এই নয় যে আমরা খারাপ। বৌদ্ধদর্শনে ক্ষমার অর্থ হলো অপরাধ ও অপরাধীকে আলাদা করা। অর্থাৎ পাপকে ঘৃণা করো, পাপীকে নয়। ধর্মপদে উল্লেখ, সে আমাকে গালি দিয়েছে, সে আমাকে আঘাত করেছে, সে আমাকে পরাস্ত করেছে, সে আমাকে ছিনতাই করেছে―যারা এই ধরনের চিন্তাভাবনা করে তাদের মধ্যে ঘৃণা কখনো বন্ধ হবে না।

বুদ্ধের ক্ষমা ও সহিষ্ণুতার একটি গল্প বলি। বুদ্ধের তখন বয়স হয়েছে। তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করল এক ধূর্ত লোক। সে ভেবেছিল কয়েক বছর পরে তো বুদ্ধ মারা যাবেন। এই ফাঁকে তার কাছ থেকে অলৌকিক ক্রিয়াকলাপ কিছু শিখেটিখে নিতে হবে, যাতে তার মৃত্যুর পর নিজেকে বুদ্ধের অবতার বলে ঘোষণা করা যায়। একবার লোকে অবতার ভাবতে শুরু করলে তাকে আর পায় কে! সারা জীবন পায়ের ওপর পা তুলে কাটিয়ে দিতে পারবে।
পরিকল্পনা মোতাবেক সে শুরু করল কাজ। সারাদিন বুদ্ধের সেবাযত্ন করে। গুরুকে দেখায় সে কত নিবেদিত একজন শিষ্য। সিদ্ধার্থ তো সিদ্ধপুরুষ। সহজেই ধরে ফেললেন শিষ্যের ধূর্ততা। তবে কিছু বলেন না। বছরের পর বছর পার হয়ে যায়, অথচ শিষ্যের অলৌকিক ক্রিয়াকলাপ কিছুই লাভ হয় না। সে বুঝে গেল বুদ্ধের কাছ থেকে যে কিছুই পাওয়া যাবে না। একদিন সে গেল ক্ষেপে। সিদ্ধান্ত নিল প্রতিশোধ নেওয়ার। সেদিন সকালবেলা। বুদ্ধ তখন ধ্যান করছিলেন। ধূর্ত শিষ্য তার কাছে গিয়ে শুরু করল গালাগাল, ‘বেটা বুড়া, এতদিন তোর কাছে থাকলাম, অথচ কিছুই শিখতে পারলাম না। তুই বেটা আস্ত ভণ্ড, মহা প্রতারক!’

বুদ্ধ নির্বিকার। গালাগাল করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেল শিষ্য। দেওয়ার মতো আর গালি খুঁজে পাচ্ছিল না। এবার মুখ খুললেন বুদ্ধ। শান্ত গলায় বললেন, ‘আমি কি তোমাকে কোনো প্রশ্ন করতে পারি?’ শিষ্যের মেজাজ তো তখন চড়া। খেঁকিয়ে বলল, ‘কী বলবেন জলদি বলেন।’ বুদ্ধ বললেন, ‘ধরো তোমার কিছু জিনিস তুমি কাউকে দিতে চাইছ, কিন্তু যাকে দিতে চাইছ সে নিচ্ছে না। জিনিসটা তবে কার কাছে থাকল?’
 
ক্ষ্যাপা শিষ্য জবাব দিল, ‘এতদিন ধরে ধ্যান-জ্ঞান করছেন, অথচ এই সামান্য কথাটা জানেন না? আমার জিনিস আমি যাকে দিতে চাই সে না নিলে জিনিসটা তো আমারই থাকবে।’ বুদ্ধ হেসে বললেন, ‘তাহলে এতক্ষণ তুমি আমাকে যেসব গালি উপহার দিয়েছ তার কিছুই আমি নিলাম না।’

বুদ্ধের ক্ষমা ও সহিষ্ণুতার গল্প পাল্টে দিতে পারে আমাদের জীবন। ভারতবর্ষে বুদ্ধের জন্ম একটি বড় ঘটনা। বুদ্ধপূর্ণিমার শুভেচ্ছা সবাইকে।

লেখক: কথাসাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence