এখন এই দেশ থেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চলে গেলেই বাঁচি: ভুক্তভোগী ছাত্রী
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ০৭ মার্চ ২০২৫, ১১:১৯ AM , আপডেট: ০৭ মার্চ ২০২৫, ১১:৩২ AM

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক ছাত্রীকে পোশাক নিয়ে মন্তব্য করে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ উঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির সহকারী-বাইন্ডার মোস্তাফা অর্নব অরণ্য নামের এক কর্মচারীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায় পুলিশ। পরে আদালত তার জামিন মঞ্জুর করে।
আজ শুক্রবার (৭ মার্চ) সকালে গত দুই দিনের ঘটনায় হতাশা প্রকাশ করে নিজের ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্ট দিয়েছেন ভুক্তভোগী সেই ঢাবি ছাত্রী।
পাঠকদের জন্য ভুক্তভোগী ছাত্রীর পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো—
‘গত দুই দিন ধরে আমার সাথে যা হলো এই নিয়ে কিছু বলতে ইচ্ছা করলো। আমাকে যারা না চিনে শাহবাগী বললেন তারা কিসের বেসিস এ বললেন । কতটুকু চিনেন আমাকে?? রাস্তায় একটা লোক পথ আটকে দাঁড়িয়ে আপনাকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলবে আর আপনি এইটার প্রতিবাদ করলে হয়ে যাবেন শাহবাগী বাহহহ। আমার বাবা-মা প্র্যাকটিসিং মুসলিম। আমি হয়তো পরিপূর্ণ পর্দা করতে পারিনি। কিন্তু সব সময় শালীন পোশাকে বের হই। আমাকে যারা চিনেন তারা জানেন আমি সালোয়ার-কামিজ এবং শাড়ি ছাড়া অন্য পোশাক খুব একটা পরি না। তবু সব সময় ফুল স্লিভ হাতা ড্রেস পরি। যতটুকু জানি, এইটা আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির সাথে মানানসই পোশাক।’
‘এবার আসি জুলাই অভ্যুত্থানের সময় কিছু ঘটনা নিয়ে। আমি প্রত্যেক দিন আন্দোলনে যেতাম। ফ্রন্টলাইনার ছিলাম না। কিন্তু রেগুলার আন্দোলনে যাওয়া ছিল আমার রুটিন। যেদিন ঢাবি হল খালি করে দিচ্ছিল। আমরা ৬-৭ জন মেয়ে সবার শেষে বের হই। আমাদের বের করেই গেট এ তালা লাগায় হলের দায়িত্বরত কর্মচারীরা। কেনো যেতাম আন্দোলনে জানেন?? আমি বিসিএস দেবও না। শুধু দাবিটা যৌক্তিক, তাই যেতাম।’
‘গত ৪ আগস্ট আমি সারারাত ঘুমাই নাই। সারারাত জেগে তাহাজ্জুদ পড়েছি, কুরআন পড়েছি। যাতে করে আমার যে ভাইগুলো গণভবনে যাবেন, তারা যেন বিনা বাধায় ফ্যাসিস্টের পতন করতে পারে। তাদের ওপর যেন আর হামলা না হয়। আমার এখনো মনে আছে আমি সিজদায় গিয়ে কান্না করে বলেছিলাম, যাতে আমার কোনো ভাই আগামীকাল মারা না যায়। আমরা যেন বিজয়ী হতে পারি। কিন্তু দেখেন আমি কতটা বোকা। ভেবেছিলাম হাসিনার পতনের পর নতুন বাংলাদেশ গড়বো। যেখানে সব মতাদর্শের মানুষ সহাবস্থান করবে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে।’
‘যারা নিজেকে তৌহিদী জনতা বলে থাকেন আপনারা কি জানেন, আপনারা যখন ৫ আগস্ট এরপর নিজের ধর্মীয় লেবাসে বের হতেন আমি নিজে এই বিষয়টাতে কতটা খুশি হতাম। ভাবতাম যাক সবাই ব্যক্তি স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছে। মানুষগুলার উপর গত ১৬ বছর ধরে জুলুম হয়েছে। আর দেখেন আমি যখন আমার দেশীয় পোশাক পরে রাস্তায় হাঁটি তখন আপনারা আমার শরীরের সাইজ মাপেন। কত সুন্দর আপনার আকিদা তাই না?’
‘এইবার আসি দেশের বিচার ব্যবস্থা নিয়ে, আমার সেন্সিটিভ ইনফরমেশন পুলিশ পাবলিক করেছে। তাদের জিজ্ঞাসা করায় বলেছে এজহার কপি নাকি পাবলিক করা যায়। তাহলে এজহার কপিতে এত ইনফরমেশন তারা কেনো রাখেন? এগুলা অন্য আরেক জায়গায় রাখুক। আর এই বিষয়টা আমাকে শুরুতেই তারা কেনো বলে দেয় নি? তাহলে আমি মামলাই করতাম না। আপনাদের এই ফালতু নিয়মের জন্য আমার গত সারারাত কি কি সহ্য করা লেগেছে কোনো আইডিয়া আছে আপনাদের? এই পুলিশ বাহিনী আর তাদের এসব ফালতু নিয়ম কবে চেঞ্জ হবে?? অসংখ্য নাম্বার থেকে রেপ আর ডেথ থ্রেট দেওয়া হয়েছে। কেনো? প্রতিবাদ করেছি তাই। আপনারা তো ফ্যাসিস্ট হাসিনার চেয়ে খারাপ। আপনারা তো দেশকে নরক বানাবেন।’
‘আর ইন্টেরিম গভর্নমেন্ট কে বলছি দেশের বিচার ব্যবস্থা কবে চেঞ্জ করবেন?? কবে আসবে আপনাদের সংস্কার?? যদি না করতে পারেন দায়িত্ব ছেড়ে দেন। কিছু মানুষ গিয়ে থানায় মব করবে তাও এমন একজনের বিরুদ্ধে যে নিজের দোষ স্বীকার করেছে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। বাহ্ পুলিশ বাহ্।’
‘এই ঘটনা এইটাই প্রমাণ করে যে দেশে এখন অপরাধ করে, ইভটিজিং করে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ানো যাবে। ভিকটিম স্টেপ নিলেও উল্টা তাকে হয়রানি করা হবে। বিশ্বাস করেন এই দেশ নিয়ে আর কোনো আশা নেই। আমাদের আন্দোলন করা ভুল হয়েছে। এতগুলো মানুষ এমনিই মারা গেছেন। পারবেন তাদের রক্তের ঋণ শোধ করতে?? ভেবেছিলাম দেশে থাকবো। বিদেশ এ যাবো phd করে একদিন এই দেশের জন্য কিছু করবো। কিন্তু বিশ্বাস করেন এখন এই দেশ থেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চলে গেলেই বাঁচি।’
এর আগে বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে এক ছাত্রীকে পোশাক নিয়ে মন্তব্য করে উত্ত্যক্ত করার ঘটনা ঘটে। পরবর্তী সময়ে পরে ঘটনার বিবরণ দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই ছাত্রী পোস্ট করলে তা ভাইরাল হওয়ার পর বিষয়টি আলোচনায় আসে এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অভিযুক্ত কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।