স্বাস্থ্যখাত সংস্কারে জাতীয় মেডিকেল স্টুডেন্টস ফোরামের ৫৩ দফা

৫৩ দফা প্রস্তাবনা উপস্থাপন করছেন সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ
৫৩ দফা প্রস্তাবনা উপস্থাপন করছেন সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ  © টিডিসি ফটো

স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন প্রণয়ন এবং স্বাস্থ্য সেবা উন্নত করা সহ স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের জন্য ৫৩ দফা প্রস্তাবনা দিয়েছে জাতীয় মেডিকেল স্টুডেন্টস ফোরাম। আজ বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ প্রস্তাবনা জানান সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ। 

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনটির সহকারী পরিচালক শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী মশিউর রহমান। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারের অবসানের পর গণমানুষের বিপুল আশা-আকাঙ্ক্ষা ও সমর্থন নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হয়েছে। অন্তবর্তীকালীন সরকার সংস্কার কার্যক্রমকে গতিশীল করার লক্ষ্যে বিভিন্ন সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশন তাদের মধ্যে একটি।

বক্তব্যে আরো বলা হয়, দেশের বিপুল মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত কল্পে এই খাতের যথাযথ সংস্কার প্রয়োজন। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার দেশের অন্যান্য খাতের পাশাপাশি স্বাস্থ্য খাতেরও বেহাল দশা সৃষ্টি করেছে। তাই উপদেষ্টা পরিষদ কর্তৃক গৃহীত স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের উদ্যোগকে যথোপযুক্ত মনে করি এবং এরকম সাহসী উদ্যোগকে জাতীয় মেডিকেল স্টুডেন্টস ফোরাম এর পক্ষ থেকে স্বাগত জানাই। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশন কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে। এসময় স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং উপদেষ্টা পরিষদে ৫৩ দফা সংস্কার প্রস্তাবনা উপস্থাপন করা হয়।  

৫৩ দফা দাবির মধ্যে অন্যতম দাবিগুলো হলো- স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করতে হবে, চিকিৎসকদের নিরাপত্তার জন্য স্বাস্থ্য পুলিশ নিয়োগ করতে হবে, চিকিৎসকদের চিকিৎসা সংক্রান্ত অবহেলার দরুন রোগীর জীবন বিপন্ন হলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে, বাজেটের কমপক্ষে ৫% (শতকরা পাঁচ ভাগ) স্বাস্থ্য খাতের জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে, WF ME সহ বিশ্বের আধুনিক চিকিৎসার স্বীকৃতি নিশ্চিত করতে হবে, চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের জন্য বিভিন্ন দেশের সাথে কোরিলেশন তৈরি করতে হবে।

এছাড়া এমবিবিএস ও বিডিএস ডিগ্রিধারী ব্যতীত কেউ প্র্যাক্টিস এবং ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে পারবে না এবং সাদা এপ্রন শুধু ডাক্তার ও মেডিকেল স্টুডেন্ট এর জন্য নির্ধারণ করতে হবে, রেফারাল সিস্টেম কার্যকর করতে হবে, চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশন ব্যাতিত মেডিসিন বিক্রি সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে (OT C ব্যতীত), চিকিৎসকদের কর্মদ্দোমতা বৃদ্ধি এবং একঘেয়েমি দূরীকরণে বাধ্যতামূলক ত্রৈমাসিক ছুটির ব্যবস্থা করতে হব, কবিরাজি ও হাতুড়ে চিকিৎসা সমূলে উৎপাটন করতে হবে, বিশেষায়িত হাসপাতালে বেড এর জন্য দিনের পর দিন অপেক্ষা দূরীকরণে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং সরকারি হাসপাতালের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে বলে প্রস্তাবনা দেন সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ।

এসময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় মেডিকেল স্টুডেন্ট ফোরামের উপদেষ্টা রাজন শিকদার ও সমন্বয়ক রাগিব ওমর রাসেল। এছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন নির্বাহী পরিচালক খালিদ হোসেন আরাফাত, সহকারী পরিচালক মশিউর রহমান শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ, সাধারণ সম্পাদক রিফাত হাসান, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন, অর্থ ও কল্যাণ সম্পাদক মোহাম্মদ ওসামা আল মারুফ, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সৌরভ হাসান জীবন, দপ্তর ও রক্তদান ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আব্দুল আজিজ, দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ আমির হামজা মুন্না প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, জাতীয় মেডিকেল স্টুডেন্টস ফোরাম সারাদেশের মেডিকেল শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্বকারী একটি সংগঠন। বহুল কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কার্যক্রমকে গতিশীল করার জন্য জাতীয় মেডিক্যাল স্টুডেন্টস ফোরাম সারাদেশের মেডিকেল শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে বৈশ্বিক মানের চিকিৎসা শিক্ষা ব্যবস্থার চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।


সর্বশেষ সংবাদ