দায়িত্বের মাঝে আটকে থাকা নয়টি ঈদ, এবার নিজ উঠোনে নাসির উদ্দিন
- ঢাকা আলিয়া প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৮ জুন ২০২৫, ১২:১১ AM , আপডেট: ০৯ জুন ২০২৫, ০১:০২ AM
নরসিংদীর এক নিভৃত গ্রাম মোহরপাড়ায় হয়তো এবার ঈদের সকালটা একটু অন্যরকম হবে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর সেই ঘরে ফিরছেন একজন মানুষ, যিনি নয়টি বছর টানা থেকে গেছেন অন্য একটি ঘরে—ঢাকার সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়ার কেন্দ্রীয় মসজিদে। তিনি মোঃ নাসির উদ্দিন ফরাজী—এই মসজিদের মুয়াজ্জিন, দায়িত্বশীল, নিঃশব্দে নিজের কাজ করে যাওয়া এক নির্ভরতার নাম।
২০১৬ সালে তিনি এই মসজিদে মুয়াজ্জিন হিসেবে যোগ দেন। সেই থেকে একটানা দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। ঈদ আসত, চারদিকে উৎসবের রং ছড়াত, কিন্তু তার জন্য ঈদ মানে ছিল না নতুন জামা বা গ্রামের উঠোনে ছেলেমেয়েদের হাসিমাখা মুখ দেখা।
নয়টি ঈদুল আযহা কেটেছে ঢাকায়, স্ত্রী, দুই মেয়ে আর এক ছেলেকে দূরে রেখেই। প্রতিবারই হয়তো সন্তানের কচি কণ্ঠে প্রশ্ন এসেছে—“আব্বু, এবার কি বাড়ি আসবা?” আর তিনি নীরবে মাথা নেড়েছেন না-সূচক, দায়িত্বের খাতিরে। তবে এবার ভিন্ন এক ঈদ। এবার ঈদের নামাজ শেষে তিনি রওনা হবেন নরসিংদীর পথে—পরিবারের কাছে, আপন উঠোনে।
নাসির উদ্দিন বলেন, “এই ঈদটা আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের ঈদ। নয় বছর পর পরিবারের সঙ্গে ঈদ করব—এটা ভেবেই চোখে পানি চলে আসে। ছেলে-মেয়েগুলো তো এখন অনেক বড় হয়ে গেছে, এবার তাদের সঙ্গে বসে একসঙ্গে খেতে পারব, হাসতে পারব—এটাই জীবনের বড় আনন্দ।”
আজান ও নামাজের সময় ছাড়া নাসির উদ্দিনকে পাওয়া যায় আরেকটি নীরব জায়গায়—মাদ্রাসার কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি। বইয়ের ধুলো মুছতে মুছতেই তিনি হয়ে উঠেছেন শিক্ষার্থীদের প্রিয় মানুষ।
শিক্ষার্থী তাশফিকুল ইসলাম বলেন, “নাসির ভাই শুধু আজান দেন না, তিনি লাইব্রেরির বই নিয়েও অনেক কিছু জানেন। কোন বিষয়ের বই কোথায় আছে, তাকে জিজ্ঞেস করলেই তিনি সাথে সাথে দেখিয়ে দেন।”
এভাবেই ধীরে ধীরে তিনি হয়ে উঠেছেন একটি প্রতিষ্ঠানের নীরব প্রহরী—আত্মনিবেদিত, নির্ভরযোগ্য।
এবারের ঈদ যেন শুধুই একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, নাসির উদ্দিন ফরাজীর জীবনে এটি হয়ে উঠেছে এক আবেগঘন প্রত্যাবর্তন—পরিবারের কাছে, সন্তানদের কাছে, নিজের ভেতরের ছেলেবেলায় ফিরে যাওয়ার এক মুহূর্ত।