তা’মীরুল মিল্লাতের সানজিদুল ইসলাম

শরীরে ২০০ ছররা গুলি নিয়ে দুর্বিষহ জীবন— পাননি আর্থিক সহায়তা, নাম নেই আহতদের তালিকায়

তা’মীরুল মিল্লাতের সানজিদুল ইসলাম
তা’মীরুল মিল্লাতের সানজিদুল ইসলাম  © টিডিসি সম্পাদিত

যন্ত্রণায় দিন কাটছে সানজিদুল ইসলামের। শরীরে ২০০ ছররা গুলি। বর্তমানে হাসপাতালের বেডে দুর্বিষহ দিন কাটছে তার। গত জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিয়ে পুলিশের ছররা গুলিতে মারাত্মক আহত হন গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীস্থ তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী সানজিদুল ইসলাম।

বর্তমানে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) চিকিৎসা নিলেও জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে পাননি কোনো ধরনের সহায়তা পাননি। এমনকি আহতদের তালিকায়ও তার নাম নেই, কোনো ক্যাটাগরিতেই অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে নিজেই হলেন বৈষম্যের শিকার?

জানা যায়, গত ১৮ জুলাই ঢাকার উত্তরা বিএনএস সেন্টার পরিণত হয়েছিল রণক্ষেত্রে। পুলিশের গুলিতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আবু সাঈদের হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিলেন তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা টঙ্গী’র একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সানজিদুল ইসলাম। সকাল ৯টায় মেস থেকে বের হয়েছিলেন, একটাই সংকল্প নিয়ে—শহীদদের রক্তের বদলা নেবেন তিনি।

সানজিদুল ইসলাম বলেন, ‘‘সকাল ১০টা থেকেই সংঘর্ষ শুরু হয়। ছাত্রলীগ, পুলিশ, র‍্যাব—সবাই একসঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়ে। মুহূর্তেই যুদ্ধক্ষেত্র হয়ে যায় বিএনএস সেন্টার। ইটের টুকরো হাতেই আমরা প্রতিরোধ গড়ছিলাম। শহীদের সংখ্যা বাড়ছিল, আমরাও পিছু হটিনি। একপর্যায়ে কিছু বুঝে ওঠার আগেই ছররা গুলি এসে বিদ্ধ হয় আমার শরীরে।’’

জানা যায়, দুপুর দেড়টার দিকে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। পরে তার সহযোদ্ধারা তাকে দ্রুত উত্তরা কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু সেখান থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, এক্সরে করা সম্ভব নয়। এক বন্ধুর ভাইয়ের সহযোগিতায় সেদিন মেসে ফিরে যান তিনি। পরদিন গুটিয়া ইন্টারন্যাশনাল হাসপাতালে এক্সরে করান।

পরিবার যখন জানতে পারেন, তখন তাকে দিনাজপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরিচিত ডাক্তার মো. রবিউল আলমের পরামর্শে চিকিৎসা নেন। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভর্তি হন রংপুর সিএমএইচে, সেখানেই হাতের থেরাপি চলে এক সপ্তাহ।

ঢাকায় ফিরে তা’মীরুল মিল্লাত কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদের (টাকসু) সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা ১৯ হাজার টাকা সহায়তা দেন এবং ঢাকার সিএমএইচে চিকিৎসা নিতে পরামর্শ দেন।

কিন্তু এখানেই শেষ নয়। জুলাই বিপ্লবে আহতদের তালিকাভুক্ত হওয়ার আশায় জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন এবং উপজেলা ইউএনও অফিসে তথ্য জমা দিলেও আজও তিনি আহতদের তালিকায় জায়গা পাননি। ফাউন্ডেশন থেকে কোনো সহায়তাও পাননি।

এখনও শরীরে ২০০-র বেশি ছররা গুলি নিয়ে দিন পার করছেন সানজিদুল। প্রচণ্ড ব্যথা, দুর্বলতা নিত্যসঙ্গী। 

সানজিদুল ইসলাম জানান, বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি আমরা। স্বৈরাচার হাসিনার রক্তচক্ষু ভয় করিনি। তবে  ২০০-র বেশি গুলি শরীরে নিয়ে বেঁচে আছি, অথচ আহতদের তালিকায় নিজের নাম যুক্ত করতে পারিনি এখনো। তবু দেশ ও আন্দোলনের প্রতি  ভালোবাসা অটুট।

“আমি চাই, শহীদদের স্বপ্ন যেন পূর্ণতা পায়। আমরা যে যুদ্ধ করেছিলাম, সেটা যেন ব্যর্থ না হয়।” 

সানজীদুল ইসলামের বাবা আবেদ আলী কাদেরী আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, আমি নিজেই স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছি, দিনের পর দিন ঘরবাড়ি ছাড়া থেকেছি। জুলাই বিপ্লবে আমার ছেলে যে সাহসিকতা দেখিয়েছে, তাতে আমি গর্বিত। আমি চাই, সরকার আমার ছেলের মতো আহত শিক্ষার্থীদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেয়, যেন তারা ন্যায়বিচার ও প্রয়োজনীয় সহায়তা পায়।

কিন্তু এই যোদ্ধা ও তার পরিবারের প্রশ্ন—বৈষম্যের বিরুদ্ধে যে লড়াই তিনি করেছিলেন, সেই সমাজই কি আজ তার প্রতি বৈষম্য করছে? শরীরে ২০০ ছররা গুলি নিয়ে তিনি আজও বেঁচে আছেন। এই লড়াইয়ের মূল্য কি তিনি কখনোই পাবেন না?


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence