প্রতি কিলোমিটারে একটির বেশি মাদ্রাসা নয়

যুদ্ধাপরাধী বা মানবতাবিরোধী ব্যক্তির নামে মাদ্রাসা নয়

মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড লোগো
মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড লোগো  © ফাইল ফটো

 

মহানগর অঞ্চলে এক কিলোমিটারের মধ্যে একাধিক মাদ্রাসাকে একীভূত করে একটি মাদ্রাসায় পরিণত করার নিয়ম সহ আরো তিনটি শর্ত সংযোজন করে ইবতেদায়ী মাদ্রাসা সংক্রান্ত নীতিমালায় সম্মতি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

বাকি শর্তগুলো হলো বাজেটের প্রতি খেয়াল রেখে মাদরাসাগুলোতে পর্যায়ক্রমে শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে এবং তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে । এছাড়া কোটায় প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধা অনুযায়ী শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। বৃহস্পতিবার ওই নীতিমালা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পৌঁছেছে।

সূত্র জানায় , এই নীতিমালা বাস্তবায়িত হলে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি সহ প্রধান শিক্ষকদের সম্মানী বর্তমানের তুলনায় ২৪০ শতাংশ এবং সহকারী শিক্ষকদের ২১৭ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে প্রধান শিক্ষকরা ২৫শ’ আর সহকারী শিক্ষকরা ২৩শ’ টাকা করে সম্মানি পাচ্ছেন।

প্রস্তাবিত নীতিমালা অনুযায়ী, সরকারের পূর্বানুমোদন সাপেক্ষে নতুন মাদ্রাসার অনুমোদন প্রদান করবে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড। সেই সাথে যুদ্ধাপরাধী বা মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত কোনো ব্যক্তি ব্যতীত যে কোন ব্যক্তির নামে মাদ্রসা স্থাপন করা যাবে।

মাদ্রাসা অনুমোদনের ক্ষেত্রে মহানগর, পৌর ও শহর এলাকার মাদরাসায় কমপক্ষে ২০০ শিক্ষার্থী থাকতে হবে। এর মধ্যে প্রতি শ্রেণিতে কমপক্ষে ২০ শিক্ষার্থী থাকা বাধ্যতামূলক। মফস্বলের প্রতিষ্ঠানে ন্যূনতম ১৫০ শিক্ষার্থী থাকতে হবে। সেখানে ক্লাসপ্রতি ১৫ জন থাকতে হবে। তবে দুর্গম ও বিচ্ছিন্ন এলাকার জন্য এ শর্ত শিথিল। ইবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষায় মহানগর/পৌর/শহর এলাকার প্রতিষ্ঠান থেকে ন্যূনতম ২০ শিক্ষার্থীকে অংশ নিতে হবে। তাদের মধ্যে ১৫ জনকে পাস করতে হবে। গ্রাম এলাকায় সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে ১৫ শিক্ষার্থীকে। তাদের মধ্যে ১০ জনকে পাস করতে হবে।

পাঠদানের ক্ষেত্রে সরকারি নির্দেশনা এবং শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি মেনে মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বা জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড অনুমোদিত সিলেবাস বা পাঠ্যপুস্তকে পাঠদান করতে হবে। পাশাপাশি সহশিক্ষাক্রম কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।

মাদ্রাসা স্থাপনের পূর্বে মাদরাসার নামে জমি রেজিস্ট্রিকরণ পূর্বক সেই দলিলসহ মাদরাসা স্থাপনের জন্য আবেদন করতে হবে। আবেদনপত্রের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের নামে স্থায়ী আমানত হিসাবে ব্যাংকে ২০ হাজার টাকার গচ্ছিত থাকার প্রমাণপত্র দিতে হবে। বছরের প্রথম তিন মাস কেবল আবেদন নেয়া হবে।

প্রস্তাবিত মাদরাসার নামে মফস্বল এলাকায় শূন্য দশমিক ৩৩ একর জমি থাকতে হবে। শহর বা পৌর এলাকায় শূন্য দশমিক ২০ একর এবং মহানগর এলাকায় শূন্য দশমিক ১০ একর জমি থাকতে হবে। মাদরাসার নামে রেজিস্ট্রি করা জমির নামজারি ও ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের হালনাগাদ দাখিলা থাকতে হবে।

এছাড়াও মাদরাসা ভবনের ব্যাপারে আটটি শর্ত আরোপ করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে- ন্যূনপক্ষে টিনের বেড়াসহ টিনশেড ঘর থাকতে হবে। শিক্ষকের বসার জন্য একটি কক্ষ এবং পাচঁটি শ্রেণিকক্ষ থাকতে হবে। শ্রেণিকক্ষের আয়তন হবে মফস্বলে দেড় হাজার এবং মহানগর/পৌর/শহর এলাকায় দুই হাজার বর্গফুটের। শিক্ষকের কক্ষের আয়তন হবে দেড়শ’ বর্গফুটের। বসার জন্য পর্যাপ্ত আসবাবপত্র, মানসম্মত টয়লেট, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা থাকতে হবে। বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকলে পর্যায়ক্রমে সংযোগ নিতে হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য খেলার মাঠ ও পাঠাগার থাকতে হবে।

বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে তিন হাজার ৪৩৩টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা আছে। এসব প্রতিষ্ঠানে ১৫ হাজার ২৪৩ শিক্ষক কর্মরত।

বর্তমানে প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা পাঁচ লক্ষাধিক। ২০১০ সালের শিক্ষানীতি অনুযায়ী, শিক্ষার অন্যান্য ধারার সঙ্গে সমন্বয় রেখে ইবতেদায়ী পর্যায়েও বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বাংলাদেশ স্টাডিজ, আইসিটির মতো বিষয়গুলো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

 

 


সর্বশেষ সংবাদ