চাকরি নিয়ে জাপান যাওয়ার সুযোগ দিচ্ছে বি-জেট, আবেদন করুন দ্রুতই

তথ্যপ্রযুক্তি, জাপানি ভাষা ও জাপানের করপোরেট কালচার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে বি-জেট
তথ্যপ্রযুক্তি, জাপানি ভাষা ও জাপানের করপোরেট কালচার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে বি-জেট  © সংগৃহীত

বাংলাদেশ-জাপান আইসিটি ইঞ্জিনিয়ার্স ট্রেনিং প্রোগ্রাম (বি-জেট) জাপান যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। আপনার যদি কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, আইটি বা আইসিটি বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি থাকে, তাহলে আপনিও তথ্যপ্রযুক্তি প্রশিক্ষণ নিয়ে জাপানে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। এ প্রোগ্রামের অধীন ১৫তম ব্যাচে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য বিজ্ঞপ্তি চলমান রয়েছে। অনলাইনে আবেদন করা যাবে। আবেদন শুরু হয়েছে ১ জুলাই থেকেচলবে ৩১ জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত।

বি-জেট কী

বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) ও জাপান ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশন এজেন্সি (জাইকা) যৌথভাবে ২০১৭ সালে বি-জেট প্রোগ্রাম চালু করে। জাপানিজ আইটি সেক্টরের উপযোগী করে আইটি ইঞ্জিনিয়ারদের দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্পের অধীন এ প্রোগ্রাম পরিচালিত হচ্ছে। প্রোগ্রামের অষ্টম ব্যাচ পর্যন্ত অর্থায়ন করেছে জাইকা। এ প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করছে নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটি, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ক্যারিয়ার অ্যান্ড প্লেসমেন্ট সেন্টার ও কেইরিনকান (KEIRINKAN)। পুরো প্রোগ্রাম তত্ত্বাবধান করছে আইসিটি ডিভিশন, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) ও জাইকা।

প্রশিক্ষণ যেসব বিষয়ে—

রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বি-জেট সেন্টারে সশরীর ক্লাস অনুষ্ঠিত হবে। তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ের পাশাপাশি জাপানি ভাষা ও জাপানের করপোরেট কালচার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। জাপানি ভাষার এন-৪ লেভেল পর্যন্ত পড়ানো হয়। জাপানের আইটি কোম্পানির কর্মকর্তাদের সঙ্গে চাকরির ভাইভায় কীভাবে কথা বলতে হবে, সেটিও শেখানো হয়। এ ছাড়া জাপানে চাকরির জন্য অনলাইনে আবেদন করার প্রক্রিয়া সম্পর্কেও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

আবেদনের যোগ্যতা—

এই প্রোগ্রামে ভর্তির জন্য কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, আইটি বা আইসিটি বিষয়ে স্নাতক পাস হতে হবে। প্রোগ্রামিং, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিন লার্নিং বিষয়ে দুই বছর বা তার বেশি চাকরির অভিজ্ঞতা থাকা প্রার্থীরা অগ্রাধিকার পাবেন। জাপানি ভাষা শেখার প্রবল আগ্রহ থাকতে হবে। অনলাইনে ক্লাস করার জন্য কম্পিউটার বা ল্যাপটপের সঙ্গে ইন্টারনেট সংযোগ থাকতে হবে। প্রশিক্ষণ শেষে জাপানে চাকরি করার মানসিকতাও থাকা চাই।

আবেদন যেভাবে—

আগ্রহী প্রার্থীরা এখানে ক্লিক করে ফরম পূরণের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন।

আবেদনপদ্ধতিসহ অন্যান্য বিষয়ে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।

ভর্তি প্রক্রিয়া—

সাধারণত বছরে একবার শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। বি-জেটের ওয়েবসাইট ও অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়ে থাকে। এক ব্যাচে ২০-৩০ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পান। প্রার্থীদের আবেদন পাওয়ার পর সংক্ষিপ্ত তালিকা থেকে লিখিত পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়। পরীক্ষায় তথ্যপ্রযুক্তির বেসিক বিষয়গুলো নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। ভর্তির জন্য কোনো ফি দিতে হয় না। শুধু পড়াশোনার উপকরণ খরচ বাবদ এককালীন ১০ হাজার টাকা জমা দিতে হয়।

ক্লাস শুরুর তারিখ—

১৫তম ব্যাচের ক্লাস শুরু হবে আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫। শেষ হবে আগামী বছরের ১৩ মার্চ।

চাকরি নিয়ে জাপানে

প্রোগ্রামটি চালুর পর ১৪টি ব্যাচের এখন পর্যন্ত মোট ২৪৮ জন প্রশিক্ষণ শেষে চাকরি নিয়ে জাপানে গেছেন।

সার্টিফিকেট প্রদান অনুষ্ঠানে ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থীবৃন্দ

জাপানে বাংলাদেশিদের চাহিদা বাড়ছে

জাপানের টোকিওতে অবস্থিত ডিপিটি করপোরেশনে সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত আছেন B-JET ৭ম ব্যাচের শিক্ষার্থী রিফাত মুর্তজা। তিনি বলেন, ‘B-JET প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ আমার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক ছিল। জাপানি প্রতিষ্ঠানে কাজ করার জন্য আবশ্যক ভাষাগত দক্ষতা ও ব্যবসায়িক আচরণ সম্পর্কে আমি এখান থেকেই গভীর জ্ঞান লাভ করি। জাপানের দ্রুত পরিবর্তনশীল আইটি কর্মপরিবেশের সঙ্গে যেন সহজে খাপ খাইয়ে নেওয়া যায়, সেভাবেই এই প্রোগ্রামের পাঠ্যক্রমটি অত্যন্ত সুচারুভাবে ডিজাইন করা হয়েছে।

এখানকার প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা ও সহায়ক পরিবেশ আমার মধ্যে নতুন করে আত্মবিশ্বাস তৈরি করেছে। প্রশিক্ষকদের আন্তরিকতা এবং শিক্ষাদানের আধুনিক পদ্ধতি জাপানি ভাষা শেখার কঠিন প্রক্রিয়াটিকেও আনন্দদায়ক করে তুলেছিল। B-JET-এর সার্বিক সহযোগিতা কেবল আমার ভাষাগত দক্ষতাই বাড়ায়নি, বরং জাপানি কাজের সংস্কৃতি বোঝার ক্ষেত্রেও আমাকে দারুণভাবে সাহায্য করেছে।

আমি বিশ্বাস করি, B-JET-এর মতো এমন কার্যকর ও ফলপ্রসূ প্রশিক্ষণ বাংলাদেশের আইটি পেশাজীবীদের জন্য জাপানের বৈশ্বিক বাজারে কাজের সুযোগ সৃষ্টিতে এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে’।

অন্যদিকে ১০ম ব্যাচের শিক্ষার্থী মুনতাসির আহমেদ নাবিল জাপানের কাওয়াসাকিতে অবস্থিত হিউম্যান রিসোসিয়া নামের একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে। তিনি বলেন, ‘আমার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল জাপানে এসে একটি জাপানি প্রতিষ্ঠানে কর্মজীবন শুরু করা। B-JET আমার সেই স্বপ্ন পূরণের পথকে সুগম করেছে।

এই প্রোগ্রামের যাত্রাপথে আমি যে শুধু জাপানি সংস্কৃতি সম্পর্কে মূল্যবান অন্তর্দৃষ্টি লাভ করেছি তা-ই নয়, বরং এর প্রতি আরও বেশি অনুরাগী হয়েছি। প্রোগ্রামের অন্যতম প্রভাবশালী একটি দিক ছিল স্থানীয় জাপানি ভাষাভাষীদের সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের সুযোগ। এর ফলে আমার জাপানি ভাষায় কথা বলার দক্ষতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং যে কোনো সাক্ষাৎকারের জন্য প্রয়োজনীয় আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে।

জাপানে আমার পেশাদার ক্যারিয়ার গড়তে সহায়তা করার জন্য আমি B-JET-এর কাছে চিরকৃতজ্ঞ’।


সর্বশেষ সংবাদ