নেতাকর্মী আর জনসাধারণের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতে কাটে ছাত্রনেতাদের ঈদ

ছাত্রনেতাদের ঈদ
ছাত্রনেতাদের ঈদ  © টিডিসি ফটো

মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। দীর্ঘ ১ মাস সিয়াম সাধনার পরে মুসলমানরা এদিন একে অন্যের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করেন। এজন্য ঈদের দিনকে খুশির দিনও বলা হয়। ঈদকে কেন্দ্র করে সবারই কিছু না কিছু স্মৃতি জমা রয়েছে। বিশেষ করে ছোটবেলার সেই স্মৃতি তো না বললেই নয়। তেমনি ব্যতিক্রম নয় ছাত্রনেতাদের ক্ষেত্রেও। এবারে ঈদে শৈশবের ঈদের স্মৃতিচরণ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতারা।

নেতাকর্মী আর জনসাধারণের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতে কাটে ছাত্রনেতাদের ঈদ
ছোটবেলার ঈদ আর বর্তমানের ঈদে আসলে সম্পূর্ণ আলাদা অনুভূতি হয়। ছোটবেলার ঈদ মানে ছিল বন্ধুদের সাথে আতশবাজি ফুটানো, কিংবা আড্ডাবাজি, অপেক্ষায় থাকতাম কখন হয়তো ঈদের শপিং হবে। নতুন জুতার প্রতি আমার ছিল প্রবল আগ্রহ। ঈদে বন্ধু-বান্ধবের বাড়িতে গিয়ে মজাদার খাবার খাওয়া ছিল খুবই আনন্দের। বর্তমানে ঈদ বলতে বয়স বেড়েছে। ছাত্ররাজনীতির সাথে যুক্ত থাকার কারণে এখন আসলে পরিবার পরিজনের পাশাপাশি এলাকার মানুষের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করে সময় কাটে। হয়তো ক্যাম্পাসেও ঈদ করাও হতে পারে। এটিও দারুণ একটি অভিজ্ঞতা। 

নেতা-কর্মী আমার ভাইয়েরা যারা হয়তো বিভিন্ন কারণে ক্যাম্পাসে অবস্থান করছেন, তাদের নিয়েও ঈদ করা গেলে সেটিও চমৎকার একটি অভিজ্ঞতা হবে। বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের সাথে সাক্ষাৎ করা ও ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করে সময় কাটে। এছাড়াও এখনো বন্ধুদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ ও আড্ডাবাজি করে বেশ ভালো সময় কাটে। এভাবেই মূলত ঈদ কাটে। অবশ্যই ঈদ আনন্দের। ছোটবেলার ঈদ আর বর্তমানের ঈদ উদযাপনে পার্থক্য থাকলেও ঈদ সব সময় আনন্দের।

ঈদ মানেই আনন্দ। আমাদের সকলে একসাথে ঈদ উদযাপন করব। আনন্দ একে অন্যের সাথে ভাগাভাগি করে নেব। নিজ নিজ জায়গা থেকে সকলের পাশে থাকব। সাধ্যমত প্রতিবেশীসহ নিম্ন আয়ের মানুষের খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করব।  
পরিশেষে ভেদাভেদ  ভুলে নিজের দেশের কল্যাণে যার যার জায়গা থেকে দেশের জন্য কাজ করার চেষ্টা করব। আর এগুলোই আমার ঈদের বিশেষ বার্তা। 

মোস্তাফিজুর রহমান বাবু
সভাপতি
রাবি ছাত্রলীগ

শৈশবের ঈদ স্মৃতি খুবই আনন্দের
আমার শৈশবে ঈদ খুবই আনন্দের। সারাদিন ঘোরাঘুরি, আত্মীয়-স্বজনদের বাসায় গিয়ে সালাম ও শুভেচ্ছা বিনিময় শেষ করে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে দিনটাকে বেশ উপভোগ করতাম। ঈদে স্কুল ছুটি পাইতাম টানা বেশ কয়েকদিন। তাই ঈদ মানে আমার কাছে ছিল অনাবিল হাসি-খুশি আর আনন্দ। ছোটবেলার ঈদ স্মৃতি বলতে যে কথাটি সবার প্রথমে মনে আসে সেটি হলো খুব ভোরে গোসল করে নতুন জামা-কাপড় পরে আব্বার সাথে ঈদের নামাজে যাওয়া, নামাজ শেষে আব্বাকে জড়িয়ে ধরে কোলাকুলি করে এসে বাসায় মিষ্টি-সেমাইসহ ঈদ উপলক্ষ্যে তৈরি করা বিভিন্ন খাবার খাওয়া।

আমার শৈশবের ঈদ স্মৃতি খুবই আনন্দের। তবে বর্তমানে আব্বাকে ছাড়া ঈদ উদযাপন আমার কাছে কষ্টদায়ক। আব্বাকে ছাড়া সব কিছুই কেমন জানি ফাঁকা, আনন্দহীন, শূন্যতায় ভরপুর। কোনো কিছুতেই মন ভরে না। তবুও ঈদ আনন্দের। না পাওয়ার মাঝেও অনেক কিছু পাওয়া। তাই ঈদ প্রতিটি মানুষের জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল আনন্দ, হাসি এবং সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে সংযম, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির পরিবেশ পরিব্যাপ্তি লাভ করুক— এটাই হোক ঈদ উৎসবের ঐকান্তিক কামনা। সবাইকে ঈদুল ফিতরের প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও আন্তরিক অভিনন্দন।

সুলতান আহমেদ রাহী
আহ্বায়ক
রাবি ছাত্রদল

ঈদুল ফিতরে চাঁদ দেখার একটা আলাদা আনন্দ রয়েছে
সকলকে ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মানেই আনন্দ, ঈদ মানেই শান্তির আবেশে অন্য এক প্রশান্তি। ঈদুল ফিতরে চাঁদ দেখার একটা আলাদা আনন্দ নিহিত আছে। কে আগে চাঁদ দেখতে পাবে বা চাঁদ দেখার পর ছোট-বড় সকলে মিলে হৈ-হুল্লোড়, বাজি ফোটানো— এসব আনন্দদায়ক স্মৃতি এখনও আবেগ তাড়িত করে তোলে। সকালবেলা ফজরের নামাজ পড়ে বাপ-ছেলে একসাথে পৈতৃক কবরস্থানে গিয়ে কবর জিয়ারত করার প্রচলনটা আমাদের বংশীয় প্রচলন। গোসল শেষে মিষ্টিমুখ করে ঈদগাহ মাঠে নামাজ পড়ার আগে মায়ের পায়ে কদমবুসি করাটা আমার এখন পর্যন্ত অভ্যাস। 

নতুন পোশাক পরে, সুগন্ধি মেখে আমাদের বাপ-ছেলে জায়নামাজ ঘাড়ে করে নিয়ে মাঠের পথে যাত্রা আমাদের সারাবছরের দূরত্বকে ঘুচিয়ে দেয়। মাঠে অনেক পুরাতন বন্ধু, আত্মীয়স্বজনের সাথে দেখা হলে ভাববিনিময় বা কোলাকুলি করার মাধ্যমে উষ্ণতা বাড়ানো একটা বাড়তি আমেজ তৈরি করে দেয়। ছোটবেলা আর বড়বেলার ঈদ আনন্দের মাঝে সবচেয়ে বড় পার্থক্য যদি বলে তবে, তা হবে 'সালামি'। 

ছোট একটা গল্প শেয়ার করি এ পর্যায়ে। ঈদের দিন আমার মা মশলা বাটা এবং গৃহস্থালি কাজে ব্যস্ত ছিলেন। আমি বারবার বিরক্ত করছিলাম বলে মা আমাকে বলে আমি যেন বড়দের সালাম করি। তাইলে তারা আমাকে খুশি হয়ে অনেক টাকা দিবে। যেমন কথা তেমন কাজ। গ্রামের প্রত্যেকটা পুরুষ-নারী যারা আমার বয়সে বড় সবাইকে সালাম করে সালামি দিতে বাধ্য করতাম। ফলে আমার মুঠোভর্তি টাকা হয়ে গেল বটে, তবে এর জন্য আমার মাকে বেশ অম্লমধুর লজ্জায় পড়তে হয়। আজকের এই সময়ে ঈদ সালামির কচকচে ২, ৫ বা লাল ১০ টাকার নোটকে খুব মিস করি। ফিরে যেতে মন চায় সেই ছোটবেলা বা শৈশবের ঈদ আনন্দে।

আমানুল্লাহ খান
সদস্য সচিব
রাকসু আন্দোলন মঞ্চ

শৈশবে মুরুব্বিদের কদমবুসি করে সালামি নেওয়া ছিল স্মরণীয় ঘটনা
ঈদ আমাদের জীবনে আনন্দ বয়ে নিয়ে আসে। আমার জন্ম ছায়া সুনিবিড় সবুজ শ্যামল এক প্রত্যন্ত গ্রামে। আমাদের ছোটবেলার ঈদ উৎসব নানান আড়ম্বরতার সাথে পালিত হতো। বিশেষ করে ঈদের চাঁদ দেখার অনুভূতিটা ছিল অন্যরকম। আমাদের গ্রামের একপাশ দিয়ে বয়ে গেছে রেললাইন। সাথেই বিস্তীর্ণ মাঠ। ঈদের চাঁদ দেখা গেলে প্রথমে সবাই মাঠের পাশে চলে যেতাম, যেখান থেকে চাঁদকে স্পষ্ট দেখা যেত। ঈদের দিন সকালে ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে বাড়ির মুরুব্বিদের কদমবুসি করে সালামি নেওয়াটা ছিল অন্যতম স্মরণীয় ঘটনা।

ঈদগাহ থেকে ফিরে এলাকার বন্ধুবান্ধবদের বাড়ি যাওয়া, সেমাই পায়েস খেয়ে বিকেলবেলা ঘোরাঘুরির মাধ্যমেই ঈদের দিন শেষ হতো। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এখনকার ঈদগুলোতে আনন্দের ধরণও পরিবর্তন হয়েছে। শহুরে যান্ত্রিকতা ছেড়ে যখন গ্রামে আসি তখন যথাসম্ভব চেষ্টা করি পরিবারের ছোট বড় ও গ্রামের সবার সাথে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে। এখন অন্যের আনন্দের মাঝেই নিজের ঈদের আনন্দ খুঁজে পাই।

মেহেদী সজীব
সভাপতি
স্টুডেন্ট রাইটস অ্যাসোসিয়েশন

একজন রোজাদারের জন্য ঈদ মানে আনন্দের ব্যাপার
সেই ছোটবেলা থেকেই ঈদুল ফিতর আমার কাছে খুবই অর্থবহ। কেননা সেই ৭ বছর বয়স থেকেই পরিবারের সবার সঙ্গে রোজা রাখা শুরু করি। আর ১ মাস রোজা রাখার পর একজন রোজাদারের জন্য ঈদ মানে আনন্দের ব্যাপার। তাছাড়া ছোটবেলায় দেখেছি আমাদের গ্রামের এক বড়ভাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তো, তাই মানুষ তাকে অনেক সম্মান করতো, তখন থেকেই আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন দানা বেঁধে উঠে।

কিন্তু বর্তমানে যখন দেখি চারিদিকে উচ্চশিক্ষিত বেকাররা চাকরির জন্য হন্যে হয়ে ছুটছে, এমনকি নিজেও যখন গ্রামের বাড়িতে এবার ঈদে এসেছি তখন এলাকার মানুষজন জানতে চায় পড়ালেখা তো প্রায় শেষ এখন কী করবে? তখন খুব বেশি ভালো উত্তর দিতে পারি না, কেননা আসলে আমাদের উচ্চশিক্ষিতদের জন্য সেই অর্থে কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়নি। তারপরও আশাবাদী হয়তো একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। সবাইকে ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা।

রায়হান আলী
সভাপতি
রাবি ছাত্র ফেডারেশন

সময়ের ব্যবধানে ঈদ আনন্দ প্রায় বিলুপ্তির পথে
ঈদ এলেই মন চলে যায় অতীত স্মৃতিতে। ছোট বেলায় ঈদ আনন্দ ছিল এক অন্যরকম অনুভূতি। রমজান শেষে সবাই একসাথে চাঁদ দেখা। কোথায় কোনও উঁচু ব্রিজ বা খোলা জায়গায় চাঁদ দেখতে যাওয়া। চাঁদ দেখা শেষে খোলা মাঠে নারিকেলের ছোবড়া ও কঁচু গাছের পাতা দিয়ে তারাবাজি বানিয়ে রাতে আনন্দ করার দিনগুলো এখন অতীত স্মৃতি হয়েই আছে।

চাঁদরাতে মেহেন্দি গাছের পাতা তুলে তা বাটায় বেটে ছেলে-মেয়ে সবার হাতে মেহেদি লাগিয়ে দিতো ফুফুরা। কার হাতে কী ডিজাইন হবে তা নিয়ে চলতো হুড়োহুড়ি। ঈদের দিন সকালে নামাজ শেষে সবার ঘরে ঘরে সেমাই ও অন্যান্য খাওয়া দাওয়ার যে বন্ধন তা এখন আর দেখা যায় না। একান্নবর্তী পরিবার হওয়ায় ঈদের পরের দিন সকল আত্মীয়রা আসতো আমাদের বাড়ি। সবাই মিলে নতুন জামা-কাপড় পরে ঘুরতে যাওয়া। আকস্মিক বৃষ্টি আসলে সবাই মিলে মাঠে নতুন জামা-কাপড় পরেই ফুটবল খেলতে নেমে যেতাম। সময়ের ব্যবধানে এসকল নির্মল আনন্দ প্রায় বিলুপ্তির পথে।

মেহেদী হাসান মুন্না
কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক
নাগরিক ছাত্র ঐক্য

 

সর্বশেষ সংবাদ