বিসিএস জয়ে ‘জীবনের কঠিন সময়’ সহজ হয়েছে রাজীবের
৪৩তম বিসিএস কর ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৪-১৫ সেশনের শিক্ষার্থী রাজীব কান্তি দাশ। কর ক্যাডারে রাজীবের পজিশন ৪৭তম। ৪৩তম বিসিএস ছাড়াও তিনি ৪০তম ও ৪১তম বিসিএসে অংশ নিয়েছিলেন। ৪০তম বিসিএসে সাফল্য না পেলেও ৪১তম বিসিএসে তিনি নন-ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। এই বিসিএস থেকে তিনি সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। এছাড়া তিনি বর্তমানে পল্লী বিদ্যাুতায়ন বোর্ডে সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত আছেন।
সম্প্রতি তিনি তার বিসিএস জয়ের গল্প নিয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের মুখোমুখি হয়েছে। তার কথাগুলো শুনেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের মুহাইমিনুল ইসলাম।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ৪৩তম বিসিএসে আপনি কর ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। আপনার অনুভূতি সম্পর্কে জানতে চাই।
রাজীব কান্তি দাশ: আমার মা-বাবা, ভাই-বোনকে নিয়ে (যদিও পেশাগত কারণে একসাথে নেই) বেঁচে আছি। এই দিনগুলোই তো আমার সবচেয়ে সুখের দিন। তবে আমার জীবনের সেরা মুহূর্ত সেটাই, যখন আমার রোলটা ৪৩তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফলে খুঁজে পাই।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার শৈশব, প্রাথমিক শিক্ষা সম্পর্কে বলুন।
রাজীব কান্তি দাশ: সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলা থেকে আমার শৈশব ও বেড়ে উঠা। আমরা পরিবারে দুই ভাই, এক বোন রয়েছেন। বাবা রামা কান্ত দাশ এবং মা দিপালী রানী দাশ।
একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানের শৈশব যেমন কাটে, তেমন শৈশবই আমার কেটেছে। তবে আমার বড় ভাই পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব নেওয়ার পূর্বে পড়াশোনার সব সাপোর্ট আমার বাবা দিয়েছেন।
বাবার পর অনার্স-মাস্টার্স পড়াকালীন আমার পড়াশোনার জন্য যত ধরনের সাপোর্ট দরকার, সবটুকু দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে বড় ভাই। এমন ভাই সবার কপালে জুটে না। আমার সৌভাগ্য যে, আমি এরকম একটা পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার শিক্ষা জীবন সম্পর্কে জানতে চাই।
রাজীব কান্তি দাশ: আমি সিলেটের জয়কলস উজানীগাও রশিদিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং শাহ খুররম ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করি। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি এণ্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগ থেকে উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: শিক্ষা জীবনে আপনার এ যাত্রাটা কেমন ছিলো, কেমন প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছেন?
রাজীব কান্তি দাশ: প্রত্যেকের জীবন সুখ-দুঃখের গল্পে পূর্ণ। দুঃখের দিন বলব না, এই দিনগুলোকে আমি কঠিন সময় হিসেবে মনে করি। হয়ত এই কঠিন সময়গুলোই আমাদের লক্ষ্য পূরণে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: পালি এণ্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য চাকরি বাজারটা কেমন?
রাজীব কান্তি দাশ: যারা একটু নিচের সারির সাবজেক্টে অধ্যয়ন করেন তারা একটু হীনম্মন্যতায় ভোগেন। তবে আমার মনে হয় না সরকারি চাকরিতে তাদেরকে আলাদা দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা হয়।
ভালো সাবজেক্টের অবশ্যই আলাদা একটা ভ্যালু আছে। যারা এসব সাবজেক্টে অনার্স-মাস্টার্স করছেন, তাদের হীনম্মন্যতায় না ভোগে নিজের লক্ষ্য পূরণে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া উচিত। আমি পালি এন্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজের শিক্ষার্থী হিসেবে ভাইভাতে কোনোরকম প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়েছি বলে মনে হয় না।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার বিসিএসের জার্নিটা শুরু হয় কীভাবে?
রাজীব কান্তি দাশ: ৪০তম বিসিএসে এপিয়ার্ড হিসেবে যখন আবেদন করি, তখন থেকেই আসলে বিসিএসের যাত্রা শুরু। ভাগ্যক্রমে ৪০তম বিসিএসে ভাইভার জন্য ডাক পাই। কিন্তু ভাইভায় ফেল করেছিলাম। তখন মনে হতো আমাকে দিয়ে হয়তো বিসিএস হবে না। সব সময় মনে করতাম আমিই মনে হয় সবচেয়ে জঘন্য পরীক্ষা দিই।
পরবর্তীতে ৪১তম বিসিএসে নন ক্যাডার থেকে ১০ম গ্রেডে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হই। এরপর ৪৩তম বিসিএসে কর ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হই।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিসিএস প্রস্তুতিতে আপনি কেমন কৌশলী ছিলেন?
রাজীব কান্তি দাশ: পড়াশোনার ধরন বলতে গেলে আমি নির্দিষ্ট যেকোনো একটা প্রকাশনীর বই পড়তাম। দরকার হলে এক প্রকাশনীর বই একাধিকবার পড়তাম। কিন্তু একাধিক প্রকাশনীর বই একসাথে পড়তাম না।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: নতুন যারা বিসিএস দিতে চান, তাদের উদ্দেশ্যে কী বলবেন, তারা কীভাবে প্রস্তুতি শুরু করতে পারেন?
রাজীব কান্তি দাশ: প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে যেকোনো পরীক্ষায় অংশগ্রহণের পূর্বে নিজের বেসিকটা স্ট্রং করতে হবে। আর পড়তে হবে নিজস্ব স্টাইলে। অন্যের স্টাইলে আপনি নিজেকে বিকশিত করতে পারবেন না। তবে কি কি টপিকগুলা পড়লে ভালো হয় সে সম্পর্কে ধারণা নেওয়াই যেতে পারে।
যারা ম্যাথ, বিজ্ঞান, ইংলিশে নিজেদেরকে তুলনামূলকভাবে দুর্বল ভাবেন, তারা শুরুতেই এই বিষয়গুলোর দুর্বলতা দূর করার চেষ্টা করেন। চেষ্টা করলে সবই সম্ভব।
বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রস্তুতির ক্ষেত্রে যেকোনো একটি প্রকাশনীর এক সেট বই শেষ করেন। আমার মনে হয় এক্ষেত্রে এমপি-থ্রী ভালো হবে। যদিও আমি ওরাকল পড়েছিলাম। পাশাপাশি প্রতিদিনের পত্রিকা পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। প্রতিদিন ভোকাবুলারি এবং গণিত প্র্যাক্টিস করা যেতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে নিয়মিত সময়মতো পড়াশোনা করতে হবে। সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। আপনি যতই মেধাবী হোন না কেন নিয়মিত পড়াশোনার বিকল্প নেই।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিসিএস রিটেনের প্রস্তুতি কেমন হওয়া উচিৎ?
রাজীব কান্তি দাশ: রিটেনের ক্ষেত্রে এসিওর্যান্সের এক সেট বই পড়বেন। (বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে সায়েন্স হাওর এবং গণিতের ক্ষেত্রে বোর্ড বই অবশ্যই পড়বেন)। বিগত সালের প্রশ্নগুলো অবশ্যই পড়তে হবে। এতে কি ধরনের প্রশ্ন আসতে পারে সে সম্পর্কে একটা ধারণা তৈরি হবে।
রিটেনের ক্ষেত্রে পত্রিকা পড়ার বিকল্প নেই। বিশেষ করে পত্রিকার অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক পেজগুলো থেকে গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলা নোট করে রাখবেন। আলোচিত বিষয়গুলো সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকতে হবে। এক্ষেত্রে পত্রিকা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইংরেজির জন্য প্রচুর প্র্যাক্টিস করতে হবে। ইংরেজি পত্রিকা পড়তে হবে। এতে লেখার মান বাড়বে। ইংরেজির জন্য রাইটিং স্কিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাইটিং স্কিল বাড়াতে ইংরেজি পত্রিকা সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
যাদের নোট করার অভ্যাস আছে, তারা ছোট ছোট পয়েন্ট আকারে গুরুত্বপূর্ণ ডাটাগুলো নোট করে রাখতে পারেন। পরীক্ষার আগে রিভিশন দিতে এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রিটেনের ক্ষেত্রে যেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি, সেটা হচ্ছে টাইম ম্যানেজমেন্ট। আপনি অনেক কিছু জানলেও সঠিক টাইম ম্যানেজমেন্টের কারণে হয়ত আপনি সব লিখে আসতে পারবেন না।
প্রশ্ন সংখ্যা ও মান অনুযায়ী পরীক্ষার আগেই টাইম ম্যানেজমেন্ট করে যাবেন। যাদের হাতের লেখা স্লো তারা হাতের লেখার স্পিড বাড়ানোর জন্য প্রচুর লিখতে থাকুন। কোচিংয়ে এক্সাম দেওয়া যেতে পারে। আপনি কি জানেন বা জানেন না সেটা বড় কথা না, পরীক্ষায় যারা ভালো ইনপুট দেয় তারাই ভালো আউটপুট পায়। এক্ষেত্রে টাইম ম্যানেজমেন্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার ভাইভা প্রস্তুতি কেমন ছিলো?
রাজীব কান্তি দাশ: ভাইভার জন্য নিজের ডিপার্টমেন্ট, ডিপার্টমেন্টের সাথে বিসিএসের সম্পর্ক, নিজের এলাকা, নিজের বিশ্ববিদ্যালয়, নিজের নামের সাথে বিখ্যাত কোনো ব্যক্তি সম্পর্কে জানা এবং প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় পছন্দ সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখতে হবে।
পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের গল্পের বই, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাহিত্য পড়া যেতে পারে। কারণ প্রায় সদস্যরা ভাইভাতে সাহিত্য নিয়ে প্রশ্ন করে থাকেন। আর ভাইভার জন্য প্রতিদিন পত্রিকা পড়তে হবে। তাই যাদের পত্রিকা পড়ার অভ্যাস নেই তারা পত্রিকা পড়ার অভ্যাস গড়ে তুললে উপকৃত হবে।