তিন বিজেএসে ব্যর্থ, ৪র্থ পরীক্ষায় ৪র্থ হলেন পিয়াল

মো. নাজিউল হোসেন পিয়াল
মো. নাজিউল হোসেন পিয়াল  © টিডিসি ফটো

১৬তম বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (বিজেএস) পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলে সহকারী জজ হিসেবে মেধাতালিকায় ৪র্থ হয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী  মো. নাজিউল হোসেন পিয়াল পরীক্ষায় তার প্রস্তুতি ও সাফল্য নিয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। তার কথাগুলো শুনেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের প্রতিনিধি জান্নাতুল ফেরদৌস

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সহকারী জজ হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। আপনাকে অভিনন্দন। আপনার অনুভূতি জানতে চাই।
মো. নাজিউল হোসেন পিয়াল: আল্লাহর রহমতে সহকারী জজ হিসেবে  সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছি, এজন্য রাব্বুল আলামিনের দরবারে লাখো কোটি শুকরিয়া। আব্বু-আম্মু ও পরিবারের স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছি, এই অনুভূতি বুকের মাঝেই থেকে যাচ্ছে মুখে প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে এতোটুকু বলতে পারি তপ্ত জীবনে এক পশলা সুখের বৃষ্টি ছিল এই ফলাফল। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার বিজেএস পরীক্ষার যাত্রা শুরু হয় কীভাবে?
মো. নাজিউল হোসেন পিয়াল: বিজেএস পরীক্ষার যাত্রা শুরুর গল্পের পিঠে একটি ছোট্ট গল্প আছে, আইন ও বিচার বিভাগে প্রথম বর্ষের ক্লাসের শুরুর দিকে শ্রদ্ধেয় শাহাবুদ্দিন স্যার প্রশ্ন করেছিলেন, "কে,কি হতে চাও?" আমি উত্তরে বলেছিলাম, স্যার, সৎপথে সম্মানের সাথে হালাল উপার্জন করতে চাই। পরবর্তীতে সামাজিক বাস্তবতা ও নিজের যোগ্যতা বিবেচনায় যখন আমি উপলব্ধি করলাম যে, আইনে পড়ে বিচারক হয়ে সবচেয়ে সম্মানের সাথে সৎ পথে হালাল উপার্জন সম্ভব তখন (ত্রয়োদশ বিজেএস)থেকেই বিজেএস পরীক্ষায়  যাত্রা শুরু। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: দীর্ঘ এ যাত্রায় কোন বিষয়টি আপনাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণিত করেছে?
মো. নাজিউল হোসেন পিয়াল: আমার আব্বু-আম্মু, বোন, স্ত্রী, পরিবার, বড় ভাই, বন্ধুবান্ধব ছোট ভাই-রা সকলেই অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। এছাড়াও আমি নিজেই নিজেকে অনুপ্রেরণা দিতাম সবসময়। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: শুনেছি, আপনার স্ত্রী সুমাইয়া রুবিও একজন আইনজীবী। এ যাত্রায় তার কতটুকু সমর্থন পেয়েছেন?
মো. নাজিউল হোসেন পিয়াল: হ্যাঁ, আমার স্ত্রী সুমাইয়া রুবি ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালত-এর একজন আইনজীবী। একজন বেকার স্বামীর স্ত্রী হিসাবে তাকে যে কতটা সামাজিক বঞ্চনা এবং অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে তা বলে শেষ করা যাবেনা। সবকিছু মুখ বুজে সহ্য করে, সে আমাকে এই যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার শক্তি, সাহস এবং ধৈর্য্য জুগিয়েছে।  

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার প্রাথমিক শিক্ষা জীবন সম্পর্কে বলুন, কোথায়-কীভাবে বেড়ে উঠা
মো. নাজিউল হোসেন পিয়াল: আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা রংপুর জেলার সদর উপজেলার(বর্তমানে সিটি কর্পোরেশন) দেওডোবা ডাঙ্গির পাড়া গ্রামে। বাবা মো: নজরুল ইসলাম একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী এবং মা মোছা: হোসনে আরা বেগম একজন গৃহিণী। দুই ভাই বোনের মধ্যে আমি ছোট, বড় বোন নীলা কাওসার একজন কলেজ শিক্ষক। রংপুর জিলা স্কুল থেকে এসএসসি, ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ রংপুর থেকে এইচএসসি পাশ করার পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়-এর  আইন ও বিচার বিভাগের প্রথম ব্যাচে ভর্তি হই। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্লেখযোগ্য এমন কোনো স্মৃতি আছে কিনা, যা আপনি আগে কখনো বলেননি?
মো. নাজিউল হোসেন পিয়াল: রংপুর জিলা স্কুল জীবনে প্রায় প্রতিটি ক্লাসেই স্যারদের আদর (ব্যবহারিক দিক থেকে মার বা প্রহার)  পাওয়া যেত, সেই স্মৃতি (সুখের অনুভূতি)  কখনোই ভোলার নয়। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিজেএস পরীক্ষায় ভালো করার জন্য আইনের পাশাপাশি আর কোন কোন বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া উচিত?
মো. নাজিউল হোসেন পিয়াল: বিজেএস পরীক্ষায় ভালো করার জন্য সকল বিষয়েই অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়া উচিত,কারণ প্রত্যেকটি নম্বর আপনাকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে নিয়ে যাবে। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এই পরীক্ষার প্রস্তুতি কখন থেকে নেয়া উচিত বলে মনে করেন?
মো. নাজিউল হোসেন পিয়াল: এল এল বি ২য় বা ৩য় বর্ষ থেকেই বিজেএস এর  প্রস্তুতি শুরু করতে পারলে অনেক দূর এগিয়ে থাকা যায়। যদিও আমি এলএলবি, এলএলএম সম্পন্ন হওয়ার পর থেকে পুরোদমে প্রস্তুতি নেয়া শুরু করি। অবশ্য এজন্য আমাকে মূল্য দিতে হয়েছে, ত্রয়োদশ, চতুর্দশ ও পঞ্চদশ টানা তিনটি বিজেএস-এ ভাইভা দিয়ে ব্যর্থ হতে হয়েছে । 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: প্রিলি, রিটেন ও ভাইভা। কোন ধাপটি বেশি কঠিন বলে মনে হয়েছে? কোনটার প্রস্তুতি কীভাবে নিয়েছেন?
মো. নাজিউল হোসেন পিয়াল: আমার বিবেচনায় প্রিলিমিনারি একটি পিচ্ছিল প্রকৃতির পরীক্ষা, পরিশ্রম, ধৈর্য্য ও সহিষ্ণুতার সম্মিলন লিখিত পরীক্ষা আর ভাইভা হল ভয়কে জয় করে আত্মবিশ্বাস এর প্রমাণ দেয়ার পরীক্ষা । তাই প্রস্তুতি নিতে হবে নিবিড়ভাবে প্রত্যেকটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে এবং বুঝে বুঝে। কোন একটি বিষয়ে পান্ডিত্য অর্জন করতে গিয়ে অন্যান্য বিষয়গুলোকে অবহেলা করলে কাঙ্খিত ফল লাভ করা অসম্ভব। আমি আইনের বিষয়গুলো খুব ভালোভাবে বুঝে বুঝে আয়ত্ত্ব করেছিলাম এবং সাধারণ বিষয় গুলোর ক্ষেত্রে বাজারের প্রচলিত কিছু বই ও ইন্টারনেটের সহায়তা নিয়েছিলাম। আমি সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয়েছিলাম পড়াগুলো বারবার রিভিশন দেয়ার কারণে। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: নিয়োগ পাওয়ার পর দেশ নিয়ে আপনার ভাবনা জানতে চাই। কোনো বিশেষ পরিকল্পনা আছে কিনা?
মো. নাজিউল হোসেন পিয়াল: আমি মনে করি নিজের দায়িত্ব সঠিকভাবে, সততার সাথে যথাসময়ে পালন করা দেশপ্রেমেরই অংশ। তাই নিয়োগ পেলে আমি আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে সততার সাথে,যথাসময়ে পালনের ক্ষেত্রে সর্বদা সচেষ্ট থাকবো। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: যারা এ পরীক্ষা দিতে আগ্রহী তাদের কোন কোন বিষয়গুলো বেশি গুরুত্ব দিলে সফল হওয়া সম্ভব?
মো. নাজিউল হোসেন পিয়াল: যারা বিজেএস পরীক্ষা দিতে আগ্রহী,তাদের লেখাপড়ার প্রস্তুতির পাশাপাশি মানসিক প্রস্তুতিটাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ কঠোর পরিশ্রম, ধৈর্য্য, সহিষ্ণুতা ও বিনয় ছাড়া একজন বিচারক হওয়া সম্ভব নয়। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার সময়ের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
মো. নাজিউল হোসেন পিয়াল: সকলেই আমার জন্য দোয়া করবেন আমি যেন একজন সৎ বিচারক হিসাবে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার পবিত্র দায়িত্ব পালনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারি।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence