পরীক্ষার জন্য কখনো ঈদের আনন্দ মলিন করে দেইনি

অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর
অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর  © টিডিসি ফটো

সম্প্রতি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) ট্রেজারার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাপ্লায়েড কেমিস্ট্রি এন্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর। তিনি একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা বিজ্ঞান অনুষদের ডিনেরও দায়িত্বে রয়েছে। ট্রেজারার হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর আসন্ন ঈদুল আজহা ও তার ব্যক্তি জীবন নিয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের মুখোমুখি হয়েছে। তার কথাগুলো শুনেছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ইমাম হোসাইন মিয়াজী


দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এবারের ঈদ কোথায় করবেন? 
অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর: ঈদ আমি দুই জায়গাতেই করব। আমার বাবা-মা থাকে গ্রামে নোয়াখালীতে আর আমার স্ত্রী এবং সন্তানেরা থাকে ঢাকায়। সেই হিসেবে কোরবানি ঢাকায় দিয়ে ঈদের দিন বিকেলে আমি বাবা-মায়ের কাছে ফিরবো।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: স্মরণীয় ঈদ কোনটি ছিলো এবং কেন? 
অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর: স্মরণীয় দিন বলতে ঈদ-উল-আযহার সময় গরুর হাটে গরু দেখতে যাওয়াটা ছিল। গরুর কেনার জন্য না, দেখার জন্য যেতাম। আমার স্মরণীয় একটি দিন মনে আছে, সেটা হলো একবার দত্তের হাট থেকে গরু কিনে রাখালসহ হাঁটতে হাঁটতে বাসায় গরু নিয়ে যাওয়া। দত্তেরহাট থেকে অনেক দূরে ছিল বাসা।  

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ছাত্রাবস্থায় আপনার ঈদ কেমন কেটেছে?
অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর: ঈদ সবসময় আনন্দের, পরীক্ষা থাকুক আর নাই থাকুক। ঈদের সময় পরীক্ষা থাকলে একটা প্রেশার থাকতো। তবে পরীক্ষার জন্য ঈদের আনন্দ মলিন করে দিয়েছি; এমন হয়নি কখনো। অল্প সময়ে বেশি আনন্দ করতাম, যেহেতু পরীক্ষাও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এই সময়ের ঈদগুলো আপনার কেমন লাগে?
অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর: এবারের ঈদটা আমার জন্য একটু স্ট্রেফুল। যেহেতু আমি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অর্পিত একটা দায়িত্বে আছি। যার ফলে আমার মাথার মধ্যে একটা প্রেশার সবসময় কাজ করে যে আমার ক্যাম্পাস কীভাবে চলতেছে। এ ছাড়া ঈদের আনন্দ গতানুগতিক।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার কাছে ঈদ-উল-আজহার মাহাত্ম্য কী? 
অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর: মহান আল্লাহ যখন হযরত ইব্রাহিম (আ.) কে তাঁর একমাত্র পুত্র সন্তানকে কোরবানি দিতে বলেছিলেন, তখন তিনি আল্লাহর আদেশ পালনে একমাত্র ছেলেকে কোরবানি দিতে দ্বিধাবোধ করেননি। আল্লাহ তার পদক্ষেপে খুশি হয়ে ছেলের পরিবর্তে পশুকে কোরবানি করে দিলেন। হযরত ইব্রাহিম (আঃ)-এর এ ত্যাগের গুণটি আমাদের সকলের মাঝে থাকা উচিত। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ঈদ-উল-আজহার প্রধান শিক্ষাটা কেমন হওয়া উচিত বলে মনে করেন? 
অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর: সেক্রিফাইস বা ত্যাগই প্রধান শিক্ষা হওয়া উচিত। যা আমাদের ব্যক্তি, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিজের স্বার্থের সাথে অন্যের স্বার্থ বিবেচনায় রেখে অনেক ধৈর্য্যশীল হতে হবে।

আমাদের সম্পদেও যে গরীব-দুঃখীর হক আছে, তা এখান থেকে শেখা যায়। যেমন আমরা কোরবানির গোশত তিনভাগ করে এক ভাগ নিজের জন্য, এক ভাগ আত্মীয়স্বজনের জন্য এবং আরেকভাগ গরীব দুঃখীদের মাঝে বিলিয়ে দেই।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ঈদ উপলক্ষে যদি  শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে কিছু বলতেন? 
অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর: প্রথমত সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা। যেহেতু শিক্ষার্থীরা গ্রামে যাবে, যার ফলে প্রচুর ভীড় থাকবে। নিরাপদে থাকার জন্য ওবারলোড গাড়িতে যাতায়াত না করাটাই ভালো। সাবধানে বাসায় যাবে।

পরিবারের সাথে সুন্দরভাবে ঈদ উদযাপন করে আবার সময় মতো ক্যাম্পাসে চলে আসবে; যেহেতু সামনে পরীক্ষা। শিক্ষার্থীদের উচিত হবে কম সময়ে বেশি আনন্দ করে পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য  সুস্থভাবে আবার ক্যাম্পাসে ফিরে আসা।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকার ফলে ক্লাস নিতে আপনার কি কোন ধরনের সমস্যা হয়?
অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর: আমি যেই বিভাগের শিক্ষক সেই বিভাগের শিক্ষক না থাকায় ক্লাস নিতে হচ্ছে। মাহমান্য রাষ্ট্রপতি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে যেই মূল দায়িত্বটা দিয়েছেন; তার জন্য আমি পাঠদান থেকে নিজেকে বিরত রাখিনি। শিক্ষকতার সাথে সম্পর্ক আমার সবসময় থাকবে। আমার মূল দায়িত্বের সাথে এটা প্যারালালি চলতে থাকবে। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: একজন শিক্ষক হিসেবে পাঠদান করাকে আপনি কতটুকু উপভোগ করেছেন? 
অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর: আমার যে কোনো দায়িত্বের চেয়ে শিক্ষকতাকে আমি সবচেয়ে বেশি উপলব্ধি করি। শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের মতো আনন্দ আমি অন্য কিছুতে খুঁজে পাইনি। 

অনেক সময় ব্যস্ততার জন্য ক্লাসে যেতে আমার একটু দেরি হয়ে যেত। আমি অবাক হয়ে দেখতাম ক্লাসে কখনোই আমার উপস্থিতি কমতো না। আমি শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসা করতাম কী ব্যাপার? আমি দেরী করে আসি প্রায়ই; কিন্তু তোমাদের উপস্থিতি কখনোই কমে না। তখন শিক্ষার্থীরা বলতো আপনার ক্লাস অনেক ভালো লাগে, অনেক সহজ ও সুন্দর করে বুঝায় দেন। এজন্য আমরা অপেক্ষায় থাকি। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: একজন শিক্ষক এবং একজন শিক্ষার্থীর মাঝে সম্পর্কটা কেমন হওয়া উচিত? 
অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর: অত্যন্ত বন্ধুসুলভ। না হলে তো একজন একজনকে বুঝতে পারবে না। তবে সেখানে একটা সীমাবদ্ধতা থাকা উচিৎ।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন কতটুকু শিক্ষার্থীবান্ধব?
অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর: শতভাগ শিক্ষার্থীবান্ধব। শিক্ষার্থীরা মনে করে, আমরা তাদের দাবি-দাওয়া মেনে নেই না। আমরা তো সরকারের একটা নির্দিষ্ট বাজেটে চলি। সেই অনুযায়ী আমাদের খরচ করতে হয়। যার ফলে বাজেটের বাইরে আমাদের কিছু করার থাকে না।

তবে এখন আগে থেকে বাজেটের পরিমাণ অনেক বেড়েছে। আগে যেখানে গবেষণায় পঞ্চাশ লাখ টাকা বা এক থেকে দেড় কোটি টাকা বাজেট হতো; এখন তার পরিমাণ বেড়ে ৩ কোটির টাকার উপরে। অনেক সময় শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া আমরা মেনে নিতে পারি না। তখন আমাদেরও খারাপ লাগে। আমরা চেষ্টা করি। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর: আমি আমার দায়িত্ব শেষে আবার ক্লাসরুমে ফেরত যাবো এবং পুরোদমে ক্লাস নেয়া শুরু করবো। এটাই আমার ভবিষ্যত পরিকল্পনা।


সর্বশেষ সংবাদ