মাছের টিকা উদ্ভাবন করলেন সিকৃবির শিক্ষক

শিক্ষক ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন
শিক্ষক ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন  © ফাইল ছবি

বাংলাদেশে মাছের জন্য প্রথম টিকা উদ্ভাবন করেছেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) শিক্ষক ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি সিকৃবির মৎস্য বিজ্ঞান অনুষদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক।

২০১৬ সাল থেকে মাছের টিকা উদ্ভাবন নিয়ে গবেষণা করছেন ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন। এই টিকা মাছের ব্যাকটেরিয়াজনিত একাধিক রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করবে এবং মৃত্যুহার কমিয়ে উৎপাদন বাড়াবে বলে আশা করছেন তিনি। আব্দুল্লাহ আল মামুন উদ্ভাবিত টিকার নাম দেয়া হয়েছে ‘বায়োফ্লিম’।

তিনি জানান, এরোমোনাস হাইড্রোফিলা নামে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মাছের ক্ষত রোগ, পাখনা পচাসহ বিভিন্ন রোগ দেখা দেয়। এতে প্রতি বছর প্রচুর মাছ মারা যায়। তবে এই উপমহাদেশে মাছের টিকা নিয়ে তেমন কাজ হয়নি।

তিনি বলেন, ‘আমরা সিকৃবির গবেষণাগারে কিছু পাঙ্গাশ মাছের শরীরে এই টিকা প্রবেশ করিয়ে ৮৪ শতাংশ সফলতা পেয়েছি। এরপর মাঠ পর্যায়ে এটি প্রয়োগ করা হবে।’

‘আগামী মার্চ থেকে সিলেটের বিভিন্ন পুকুরের মাছের শরীরে এই টিকা প্রয়োগ করা হবে। এর মধ্যে কয়েকটি পুকুরও নির্ধারণ করা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে প্রয়োগে সফলতা মিললেই বাণিজ্যিক উৎপাদনের উদ্যোগ নেয়া হবে,’ বলেন এই উদ্ভাবক।

এই টিকা খাবারের সাথে মিশিয়ে মাছকে খাওয়ানো হবে জানিয়ে মামুন বলেন, ‘এই টিকা ব্যাপক আকারে উৎপাদনের সক্ষমতা আমাদের নেই। আমাদের যে সক্ষমতা আছে তাতে প্রতি মাসে ১০০ মিলিলিটার উৎপাদন করতে পারব। এই পরিমাণ টিকা ১ কেজি মাছের খাবারের সাথে মেশানো যাবে।

তিনি জানান, এই গবেষণা কাজে সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সে একটি প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

সিলেট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘এই অঞ্চলের বেশিরভাগ মাছই ক্ষত রোগে আক্রান্ত হয়। একে মাছের ক্যান্সারও বলা হয়। প্রতি বছর অনেক মাছ ক্ষত রোগে মারা যায়।

তিনি বলেন, ‘বাইরের অনেক দেশে মাছের শরীরে টিকা প্রয়োগ করা হলেও আমাদের দেশে এখনো শুরু হয়নি। ক্ষত রোগ থেকে মুক্ত রাখতে আমরা সাধারণত জলাশয়ে চুন ও লবণ ব্যবহার করে থাকি। মাছের টিকা উদ্ভাবন সফল হলে উৎপাদন অনেক বাড়বে।’

সিকৃবির মৎস্য অনুষদ সূত্রে জানা যায়, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, নরওয়ে, ফিনল্যান্ড, চিলিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মাছের জন্য ২৮ ধরনের টিকা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ব্যবহার হয়। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এ ধরনের টিকা উদ্ভাবন হয়েছে। স্বাদু পানিতে চাষযোগ্য মাছে এই টিকা প্রয়োগ করা যাবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক মতিয়ার রহমান হাওলাদার জানান, বাংলাদেশে প্রায় ৪০ লাখ টন মাছ উৎপাদন হয়। মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। তবে মাছের বিভিন্ন রোগের কারণে মড়ক দেখা দেয়। এতে প্রচুর পরিমাণ মাছ মারা যাওয়ায় চাষি ও দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘এই গবেষণার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এই টাকায় আধুনিক যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে। আমার আশা, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের উৎপাদিত টিকা মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের আমিষের চাহিদা পূরণে অবদান রাখবে।’


সর্বশেষ সংবাদ