করোনায় বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ বন্ধ হচ্ছে!

  © সংগৃহীত

করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের বিদেশে উচ্চশিক্ষার দ্বার বন্ধ হচ্ছে। চলতি বছর লক্ষাধিক শিক্ষার্থী বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলেও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন। অনেকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ পেয়েও যেতে পারছেন না। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোয় ভিসা সংক্রান্ত জটিলতায় এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে বিদেশে পড়ালেখার সুযোগ স্বাভাবিক হবে না বলে মত বিশেষজ্ঞরা।

জানা গেছে, ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, রাশিয়া, জাপান, মালয়েশিয়া এবং প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ বিভিন্ন দেশে প্রতি বছর লক্ষাধিক শিক্ষার্থী পাড়ি দিচ্ছেন। তাদের মধ্যে অনেকে বৃত্তি পেয়ে বিনা খরচে পড়ালেখার সুযোগ পাচ্ছেন। পড়ালেখা শেষে অনেকে বিদেশে নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তুলছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর ইউজিসির মাধ্যমে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোয় পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনে কমনওয়েলথ বৃত্তি ও ইউজিসি বৃত্তির থাকে। এতে কয়েক হাজার শিক্ষক-শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করলেও শতাধিক ব্যক্তিকে নির্বাচন করে উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ করে দেয়া হয়।

কর্মকর্তারা জানান, গত বছর কমনওয়েলথ স্কলারশিপে মোট ৬৩ জন নির্বাচিত হলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে বিদেশ যেতে পারছেন না। তবে দ্রুত তাদের কীভাবে বিদেশে পাঠানো যায় সে বিষয়ে কাজ করছে ইউজিসি। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ চালুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে গবেষণা প্রকল্প তৈরি, ডক্টরেট ডিগ্রি, পোস্ট ডক্টরাল ফেলোশিপসহ বিভিন্নডিগ্রি প্রদান করা হবে।

অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে নির্বাচিতদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি প্রদানের সুযোগ দেয়া হবে। ইতোমধ্যে নীতিমালা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। চলতি মাসে আবেদন চেয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে ইউজিসির গবেষণা সহায়তা ও প্রকাশনা বিভাগের সদস্য অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে বৃত্তি কিছুটা কমে যাবে। সম্ভাবনা থাকলেও বাংলাদেশের অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন। করোনার কারণে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। যেগুলো খোলা রয়েছে সেগুলোতে অর্থ বরাদ্দ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা বা স্কলারশিপ থেকে পিছিয়ে পড়ছে।

ইউনেস্কো ইনস্টিটিউট ফর স্ট্যাটিসটিকসের (ইউআইএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০০৫ সালে বিভিন্ন দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছেন ১৫ হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী। ২০১৭ সালে এ সংখ্যা ছিল ৫৬ হাজারে। আর ২০১৯ সালে এসে তা লাখ ছাড়ায়।

ইউনেস্কোর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের নিম্ন জীবনমান, দুর্বল শিক্ষাব্যবস্থা ও কর্মসংস্থানের অনিশ্চয়তাও বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বিদেশমুখী করছে। এসব তরুণের অধিকাংশই ধনী পরিবারের। তাদের পড়াশোনার মাধ্যম ইংরেজি। তাদের অনেকেই পাঠ শেষে দেশে ফেরেন না।

চলতি শতকের শুরুতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগেরই গন্তব্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত। তবে মালয়েশিয়াও তাদের পছন্দের গন্তব্য হয়ে উঠেছে। ইউনেস্কোর তথ্যমতে, বর্তমানে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ৫০ শতাংশের গন্তব্য মালয়েশিয়া। সাত বছরের ব্যবধানে দেশটিতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী বেড়েছে ১৫০০ শতাংশ।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের স্কলারশিপ প্রদানে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে আমাদের। সে অনুযায়ী প্রতি বছর অনেকে বিনা খরচে ডিগ্রি লাভের সুযোগ পান। করোনা পরিস্থিতির কারণে এসব চুক্তির বিষয়ে কোনো জটিলতার সৃষ্টি হয়নি।

সচিব বলেন, আমাদের অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী বৃত্তির সুবিধায় এলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে যেতে পারেননি। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে বসেই অনলাইনে সেমিস্টার শুরু অথবা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সেখানে যেতে চুক্তিভিত্তিক দেশগুলোর পরামর্শ দেয়া হলেও এ প্রস্তাব মেনে নেইনি। দ্রুত সময়ের মধ্যে কীভাবে সেমিস্টার শুরু করতে পারে সেই আলোচনা চলছে বলে জানান তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ