ঢামেকে চলছে নীরব সঙ্কট: দেখার যেন কেউ নাই

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল  © টিডিসি ফটো

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক) নানা সঙ্কটে জর্জরিত হলেও সেসব বিষয়ে কর্তৃপক্ষের তৎপরতা প্রায় অনুপস্থিত। নীরবেই চলছে অপরিচ্ছন্ন ও নিম্নমানের খাবার পরিবেশনের মতো গুরুতর অনিয়ম যা রোগীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে। নার্সদের দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগও বাড়ছে নিয়মিত। পাশাপাশি রোগীদের জিনিসপত্র চুরি হওয়ার ঘটনাও ঘটছে। একই সঙ্গে রয়েছে বেড ভাড়া নিয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ যা রোগী ও স্বজনদের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। কিন্ত সমধানে নেই কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ।

সম্প্রতি ঢামেক হাসপাতাল পরিদর্শনকালে এসব অব্যবস্থাপনা নজরে আসে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস প্রতিবেদকের। 

ভ্যানিটি ব্যাগ হারানোর ঘটনায় অসন্তোষ প্রকাশ করে কামরাঙ্গীরচর থেকে আসা হেনা আক্তার (৩৫) বলেন, ‘পুবালী ব্যাংকে এক্স-রে ফি দেওয়ার সময় হঠাৎ দেখি আমার ব্যাগটা চুরি হয়ে গেছে। ব্যাগে প্রায় ৭ হাজার টাকা ছিল, সঙ্গে ছিল মোবাইল ফোন এবং আরও কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। আমি সঙ্গে সঙ্গে কর্তৃপক্ষকে জানাই এবং সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখতে চাই। কিন্তু তারা বলেন, আগে থানায় গিয়ে জিডি (সাধারণ ডায়েরি) করতে হবে, না হলে তারা কিছুই দেখাবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘একজন ভুক্তভোগী যখন নিরাপত্তার জন্য ক্যামেরা ফুটেজ দেখতে চায়, তখন ‘জিডি ছাড়া কিছুই দেখা যাবে না’—এই ধরনের কথা বলা কি যুক্তিসঙ্গত? আমার ব্যাগ চুরি হয়ে গেছে, এখন থানায় দৌড়াতে হবে, তারপর ফুটেজ দেখার অনুমতি মিলবে—এই প্রক্রিয়াটা ভীষণ হয়রানিকর। নিরাপত্তা নিশ্চিতে এভাবে অনীহা দেখালে সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়?’

নার্সদের অবহেলা

মিরপুর থেকে অণ্ডকোষের সমস্যায় ভুগতে থাকা আরাফাত চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হন। তিনি নার্স নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, “হাসপাতালে কিছু নার্স আছেন যারা সত্যিই দায়িত্বশীল, ডাকলেই চলে আসেন। কিন্তু কিছু নার্সের আচরণ একেবারেই অমানবিক ও অবহেলাপূর্ণ। একটা ঘটনা বলি—রাত প্রায় ২টা বাজে, আমি নার্সকে ডেকে বললাম, ‘আপু একটু আসেন, স্যালাইনটা লাগিয়ে দিয়ে যান।’ উনি আমাকে দেখেও কিছু না বলে লাইটটা বন্ধ করে ঘুমিয়ে গেলেন। আমি পুরো রাত স্যালাইন বন্ধ রেখেই বসে ছিলাম। ভাবলাম যদি কিছু হয়ে যায়, তাহলে কি তাদের কিছু যায় আসে?”

বেড ভাড়া বেশি

নোয়াখালী থেকে আসা খাদ্যনালীর সমস্যায় ভোগা রোগী নুরুজ্জামান বলেন: ‘আমি এখানে ১২ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি আছি। কিন্তু ঠিকমতো ওষুধ পাই না। এই সময়ের মধ্যে শুধু বেডের জন্যই ৩ হাজার ৬০০ টাকা খরচ করেছি। বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা করতেও অনেক টাকা লাগে—কোনো স্যাম্পল টেস্টে ১ হাজার টাকা আবার কখনো ১ হাজার ৫০০ টাকাও লাগে। আমি গরিব মানুষ, এসব খরচ বহন করা আমার পক্ষে খুবই কষ্টকর।’

খাবার নিয়ে অভিযোগ

হাসপাতালসূত্রে জানা যায়, খাবারের মান ও পরিবেশন নিয়ে ক্ষোভ জানিয়ে কয়েকজন বলেন, ‘এখানে খাবার দিলেও সেটা খাওয়ার উপযোগী কি না তা নিয়ে সন্দেহ হয়। বিশেষ করে মাছের অবস্থা দেখে মনে হয়, সেগুলো না ধুয়েই রান্না করা হয়। মনে হয় মাছের শরীরে আঁশ এখনও অক্ষত অবস্থায় রয়ে গেছে—যা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাছাড়া খাবার পরিবেশনের জায়গাটা এতটাই অপরিচ্ছন্ন, সেখানে দাঁড়িয়ে খাওয়ার ইচ্ছাও চলে যায়। কোনো স্বাস্থ্যবিধি মেনে খাবার পরিবেশন করা হয় না এখানে। একজন রোগীর পক্ষে এমন অবস্থায় সুস্থ হওয়া আরও কঠিন হয়ে পড়ে।’

ডিএমসি 10

তারা আরও বলেন, ‘এই হাসপাতালে চিকিৎসার পাশাপাশি রোগীদের পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ করার কথা। কিন্তু বাস্তবে তার উল্টোটা দেখা যাচ্ছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ঘাটতি ও মানহীন খাবার দেওয়া হলে রোগীর সেরে উঠা কষ্টকর হবে।’

এসব বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আসাদুজ্জামানের বক্তব্য নিতে গেলে তার সাক্ষাৎ মেলেনি। পরে সহকারী পরিচালকের কাছে গেলেও তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজী হননি।


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!