ক্যান্সার চিকিৎসায় বিপ্লব: নেক্সট-জেনারেশন সিকোয়েন্সিংয়ের যুগে দেশ
- আশরাফ আন নূর
- প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৩১ PM , আপডেট: ২৪ জুন ২০২৫, ০১:০৮ PM
দেশে এখন থেকে ক্যান্সার চিকিৎসা হবে জিনোম সিকোয়েন্সিং পদ্ধতিতে আর এই অসাধ্য কাজটি করতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি)। এটি বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে এক যুগান্তকারী অগ্রগতির দ্বার উন্মোচন করবে আশা করা যাচ্ছে।
নেক্সট-জেনারেশন সিকোয়েন্সিং (এনজিএস) প্রযুক্তিনির্ভর ক্যান্সার নির্ণয় এখন থেকে এই অত্যাধুনিক সেবা রাজধানীর মহাখালী, মিরপুর, মতিঝিল, ধানমন্ডি, উত্তরা, নিকেতন, গুলশান ও বারিধারায় অবস্থিত আইসিডিডিআর,বি-র অনুমোদিত ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও বুথগুলোতে পাওয়া যাবে।
সম্প্রতি আইসিডিডিআর,বি থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে চীনের মহাপরিকল্পনা: কী বলছেন খাতসংশ্লিষ্টরা?
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ক্যান্সার নির্ণয় প্রক্রিয়া হবে আরও নির্ভুল, দ্রুত এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন। নেক্সট-জেনারেশন সিকোয়েন্সিং (এনজিএস) প্রযুক্তির ফলে এখন আর ক্যান্সার নির্ণয়ের জন্য বিদেশে নমুনা পাঠানোর প্রয়োজন নেই। রোগীরা মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যেই হাতে পাবেন নির্ভরযোগ্য ও মানসম্মত প্রতিবেদন। অতীতে অনেক রোগীকে বিদেশে নমুনা পাঠিয়ে পরীক্ষার জন্য ৪ থেকে ৫ সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতো যা ছিল অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল। উপরন্তু, অনেক ক্ষেত্রে এসব পরীক্ষার ফলাফলেও থেকে যেত সন্দেহের অবকাশ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ সেবা চালুর ফলে দেশে ক্যান্সার শনাক্তকরণে সময় ও ব্যয়ের ঝামেলা কমবে এবং চিকিৎসা প্রক্রিয়া হবে আরও ফলপ্রসূ। এটি স্বাস্থ্যখাতে প্রযুক্তিনির্ভর পরিবর্তনের একটি মাইলফলক হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে।
আইসিডিডিআর,বি-র সংক্রামক রোগ বিভাগের সিনিয়র বিজ্ঞানী ও ভারপ্রাপ্ত সিনিয়র পরিচালক ড. মো: মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে নির্ভুল ও সহজলভ্য ক্যান্সার নির্ণয়ের লক্ষ্যে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিয়েছি। বিশ্বমানের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পেশাদার কর্মীর দ্বারা অত্যাধুনিক অবকাঠামো প্রয়োগের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ও সর্বোচ্চ গুণমান নিশ্চিত করে আমরা নেক্সট-জেনারেশন সিকোয়েন্সিং-ভিত্তিক ক্যান্সার নির্ণয়ের সক্ষমতা অর্জন করেছি। আমাদের প্রতিশ্রুতি হলো ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ও রোগীদের জন্য সময়োপযোগী ও নির্ভরযোগ্য ফলাফল প্রদান করা। এটি ক্যান্সার চিকিৎসায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমরা আশাবাদী।’
আরও পড়ুন: রোবটিক চিকিৎসার হাব হচ্ছে ঢাকা: স্বাস্থ্যখাতে চীনা বিনিয়োগে নতুন দিগন্ত
প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন, ‘নির্ভুলভাবে ক্যান্সার নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল যার প্রয়োজনীয়তা আমরা উপেক্ষা করতে পারিনি। আমাদের লক্ষ্য হলো, ক্যান্সারের মতো জটিল সমস্যার গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার ফলাফলের জন্য যেন কারো সপ্তাহের পর সপ্তাহ উদ্বিগ্ন হয়ে অপেক্ষা করতে বা বিদেশে যেতে না হয়। আমরা দেশের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি রোগীদের চিকিৎসায় এই সেবাটির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে। এটি শুধু একটি সেবা নয়—এটি ক্যান্সার চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসক ও রোগী সকল পক্ষের জন্য আশা, আস্থা এবং নির্ভুল ফলাফল প্রদানের একটি প্রতিশ্রুতি।’
এদিকে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (সাবেক বিএসএমএমইউ)-এর ২০২৫ সালের একটি গবেষণায় দেখা যায়, দেশে প্রতি এক লাখ জনসংখ্যায় ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা ১০০ জনেরও বেশি। এই রোগে আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় স্তন, মুখগহ্বর, পাকস্থলী, গলা এবং জরায়ু মুখের ক্যান্সার। গবেষণায় আরও দেখা যায়, দেশে ক্যান্সারে আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় ৪৬ শতাংশের ক্ষেত্রে তামাক ব্যবহারের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
ক্যান্সার নির্ণয়ে বিপ্লব ঘটাতে আইসিডিডিআর,বি-র জিনোম সেন্টার এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। অত্যাধুনিক জিনোম সিকোয়েন্সিং প্রযুক্তির মাধ্যমে এখানে স্তন, ফুসফুস, কোলন, ডিম্বাশয় এবং রক্তের ক্যান্সারের সুনির্দিষ্ট ও উন্নত পরীক্ষা সম্পন্ন হবে।